কর্মী ছাঁটাই করে এআই আনছে আইবিএম
বিশ্বের বড় বড় প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স–এআই) ওপর জোর দিতে শুরু করেছে। এর প্রভাব সরাসরি পড়তে যাচ্ছে কর্মীদের ওপর। কারণ, প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মী ছাঁটাই করে এআই প্রযুক্তি চালুর দিকেই যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস মেশিনস করপোরেশন বা আইবিএম এবার সেই পথেই হাঁটছে। প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে কর্মী নিয়োগ বন্ধ রেখেছে। আগামী কয়েক বছরে ৭ হাজার ৮০০ কর্মী ছাঁটাই করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়োগ করবে প্রতিষ্ঠানটি।
গত সোমবার আইবিএমের প্রধান নির্বাহী (সিইও) অরবিন্দ কৃষ্ণা এক সাক্ষাৎকারে বলেন, তাঁরা প্রতিষ্ঠানটির এক–তৃতীয়াংশ কর্মী কমানোর ওপর নজর দিচ্ছেন। কারণ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অগ্রগতির কারণে ওই সব কর্মী এখন অপ্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছেন।
অরবিন্দ কৃষ্ণা আরও জানান, বর্তমানে কর্মী নিয়োগ বন্ধ করে দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে। আগামী কয়েক বছরে অন্তত ৭ হাজার ৮০০ কর্মী ছাঁটাই করে কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তা ব্যবহার করা হতে পারে। তিনি বলেন, ‘সরাসরি গ্রাহকের সঙ্গে সম্পর্কিত নন, এমন প্রায় ২৬ কর্মী আছেন। আমি দেখতে পাচ্ছি, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এর ৩০ শতাংশ কর্মীর কাজ এআই বা অটোমেশনের মাধ্যমে করানো সম্ভব হবে।’
তবে গতকাল মঙ্গলবার এএফপিকে দেওয়া এক বিবৃতিতে আইবিএমের একজন মুখপাত্র সতর্ক করে বলেন, নিউইয়র্কের আরমঙ্কে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানে কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো বিরতি নেই। গ্রাহক বা প্রযুক্তির সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক নেই এমন পদ পূরণের ক্ষেত্রে তাঁরা খুব নির্বাচনী হচ্ছেন। চ্যাটজিপিটির মতো অ্যাপ্লিকেশন প্রমাণ করেছে যে জেনারেটিভ এআইয়ের বিকাশ মানবসম্পদ কাজ, ডেটা ম্যানেজমেন্ট এবং অন্যান্য পুনরাবৃত্তিমূলক কাজের কম জটিল কাজগুলো আরও সহজে সম্পাদন করা সম্ভব।
গত মার্চে পরিচালনা করা যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক ও আর্থিক সেবাদাতা কোম্পানি গোল্ডম্যান স্যাকসের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, এআইচালিত অটোমেশনের জন্য ৩০ কোটির বেশি মানুষ চাকরি হারাতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে বর্তমান কাজের এক–চতুর্থাংশ স্বয়ংক্রিয় হয়ে যেতে পারে।
বর্তমানে কর্মী নিয়োগ বন্ধ করে দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে। আগামী কয়েক বছরে অন্তত ৭ হাজার ৮০০ কর্মী ছাঁটাই করে কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তা ব্যবহার করা হতে পারে।অরবিন্দ কৃষ্ণা, আইবিএমের সিইও
গত বছরের শেষের দিকে চ্যাটজিপিটির আত্মপ্রকাশ বিশ্বে আলোড়ন তুলেছিল। মাইক্রোসফটের ওপেনএআইয়ের এই উন্নত প্রযুক্তিটির ভুলের প্রবণতা আছে। এ কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো বর্তমানে এটিকে কেবল সাধারণ কাজ করানোর জন্য ব্যবহার করছে।
এদিকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) গডফাদার জেফ্রি হিনটন এখন তাঁর কাজের জন্য অনুতপ্ত। এআই আরও উন্নত হলে বিপদের আশঙ্কা করছেন তিনি। আর এই অনুতাপ থেকেই ৭৫ বছরের হিনটন গত সোমবার গুগল থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।
জেফ্রি হিনটন বলেন, এআই চ্যাটবট থেকে কিছু বিপদ হতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমি যত দূর বলতে পারি এখন এআই চ্যাটবট আমাদের চেয়ে বেশি বুদ্ধি রাখে না। তবে শিগগিরই এমনটা হতে পারে।’
হিনটন আরও বলেন, বড় বড় প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিপজ্জনক গতিতে নতুন এআই প্রযুক্তি ব্যবহারের চাপ দিচ্ছে। এতে মানুষের চাকরি হুমকির মুখে পড়ছে, যা সমাজের জন্য বিপদ ডেকে আনছে।
গত জানুয়ারিতে প্রায় ৩ হাজার ৯০০ কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দেয় আইবিএম। বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ায় মোট কর্মশক্তির ১ শতাংশের বেশি শ্রমিক ছাঁটাইয়ের এ ঘোষণা দেয় প্রতিষ্ঠানটি। আইবিএম বলছে, চলতি বছরের প্রথম ৩ মাসে এককালীন ৩০ কোটি মার্কিন ডলার ক্ষতি হবে। সূত্রটি বলছে, এই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার বিষয়টি কর্মী ছাঁটাইয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত।