ডোমিনিকানে ৪ দিনের অফিস শুরু হচ্ছে, অন্য দেশের কী অবস্থা
যুক্তরাজ্যের মতো ক্যারিবীয় দেশগুলোর মধ্যে ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র প্রথম অফিস সময় চার দিনে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে দেশটি পরীক্ষামূলকভাবে সপ্তাহে চার দিন অফিস সময় চালু করতে যাচ্ছে। প্রকল্পটি ছয় মাস চলবে। সপ্তাহে চার দিন অফিস শিডিউলে কোম্পানিগুলো নিজেদের ইচ্ছায় অংশ নেবে। এ ছাড়া চার দিন অফিস করার কর্মীদের কোনো বেতন কাটা যাবে না।
এর আগে সপ্তাহে পাঁচ দিন অফিস সময়ের পরিবর্তে যুক্তরাজ্য অফিস সময় চার দিনে নামিয়ে আনার পাইলট প্রকল্প চালু করে। গত ফেব্রুয়ারির জরিপে দেখা গেছে, চার দিন অফিস সময় চালু করার ফল অত্যন্ত ইতিবাচক।
ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র ফেব্রুয়ারি থেকে আগামী ছয় মাসের জন্য এ প্রকল্প চালু করবে। এতে সপ্তাহে কর্মঘণ্টা ৪৪ ঘণ্টা থেকে ৩৬ ঘণ্টায় নেমে আসবে। সপ্তাহের সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অফিস চলবে। এতে কর্মীরা পুরো সপ্তাহের বেতন পাবেন।
এ প্রকল্পে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে আছে সরকারের জাতীয় স্বাস্থ্যবিমা সংস্থা; পাওয়ার কোম্পানি ইজিই হাইনা; লাতিন আমেরিকান টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি ক্লারো এবং ভারী যন্ত্রপাতির প্রতিষ্ঠান আইএমসিএ। এ প্রকল্পের ফল বিশ্লেষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে একটি স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে। এর মধ্যে আছে কর্মীদের স্বাস্থ্যগত পরিবর্তন, কাজ এবং তাঁদের ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে সম্পর্ক।
চার দিনের কর্মসপ্তাহ কীভাবে কাজ করবে
চার দিনের কাজের সপ্তাহে কাজের চাপ সাধারণত একই থাকে। এতে কোম্পানি, ব্যবস্থাপক ও তাঁদের দলগুলোকে নানা বিষয়ে অধিক অগ্রাধিকার দিতে বাধ্য করা হয়। দেশটির শ্রমমন্ত্রী লুইস মিগুয়েল ডি ক্যাম্পস বলেন, এর বাইরে আরও কিছু বিষয় আছে, যা চার দিনের সপ্তাহের মডেলকে জোর দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, ‘এই প্রকল্প কর্মীকে অগ্রাধিকার দেয়। তাঁদের স্বাস্থ্য ও সুস্থতার উন্নতি করে এবং একটি টেকসই ও পরিবেশবান্ধব উত্পাদনশীলতা সৃষ্টি করে।’
আর কোন দেশে পাইলট প্রকল্প চালু হয়েছে
বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ চার দিনের কর্মসপ্তাহ পরীক্ষামূলকভাবে বা আইন প্রণয়ন করে চালু করেছে। বিশেষ করে করোনা মহামারির সময় থেকে এ প্রকল্প নানা দেশে চালু হয়ে আসছে। ২০২৩ সালে যুক্তরাজ্য চার দিনের কর্মসপ্তাহের পাইলট প্রকল্প চালু করে। এটাকেই সবচেয়ে বড় পাইলট প্রকল্প হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এতে ইতিবাচক ফলও পাওয়া যায়। মোট ৬১টি কোম্পানি এ প্রকল্পে অংশ নিয়েছিল। এর মধ্যে ৫৪টি কোম্পানি প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়েছে আর ১৮টি প্রতিষ্ঠান এ নিয়ম স্থায়ী করেছে।
যুক্তরাজ্যের পাইলট প্রকল্পে প্রায় ২ হাজার ৯০০ কর্মী অংশ নিয়েছিলেন। প্রকল্পের আগে ও পরে নেওয়া সমীক্ষায় দেখা গেছে, এতে কর্মীদের মধ্যে চাপের মাত্রা কমে গেছে।
জরিপে অংশ নেওয়া অর্ধেকের বেশি কর্মী বলেছেন, এ প্রকল্প চালু হওয়ায় কাজ ও ঘরের দায়িত্বের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা সহজ হচ্ছে। অন্যদিকে ৪০ শতাংশ কর্মী বলেছেন, তাঁদের ভালো ঘুম হচ্ছে।
এ প্রকল্পের ফলে যুক্তরাজ্যে কর্মীরা অসুস্থতাজনিত ছুটি কম নিয়েছিলেন। কারণ, তাঁদের শারীরিক ও মানসিকভাবে কাজ ও সংশ্লিষ্ট চাপ থেকে সুস্থ হওয়ার জন্য বেশি সময় ছিল। লিঙ্গসমতা উন্নত হয়েছে। তিন দিনের সাপ্তাহিক ছুটিতে পুরুষেরা গৃহস্থালি ও পারিবারিক কাজে বেশি অবদান রাখতে পেরেছেন।
২০২২ সালে জাপানে অতিরিক্ত কাজের চাপে প্রায় তিন হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। মাইক্রোসফটের মতো বড় কোম্পানিগুলো চার দিনের কাজের সপ্তাহে পরীক্ষা করেছে এবং ইতিবাচক ফলও পেয়েছে।
২০১৫ ও ২০১৯ সালে আইসল্যান্ড এ ধরনের একটি পাইলট প্রকল্প চালু করেছিল। এ প্রকল্পে প্রায় ২ হাজার ৫০০ জন সরকারি খাতের কর্মী অংশ নিয়েছিলেন। প্রকল্প শেষে দেখা গেছে, কর্মীদের চাপ কম ছিল এবং এতে উত্পাদনশীলতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। আইসল্যান্ডের শ্রমিক ইউনিয়নগুলো কাজের সময় কমাতে দেশের ৮৫ শতাংশের বেশি শ্রমশক্তির জন্য চুক্তি পুনর্বিবেচনা করেছে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রথম ইউরোপীয় দেশ হিসেবে বেলজিয়াম কর্মসপ্তাহ ছোট করার আইন প্রণয়ন করে। এতে কর্মীদের কোনো বেতন কমানো হয়নি। সপ্তাহে পাঁচ দিনের পরিবর্তে তাঁদের কর্মসপ্তাহ হয় চার দিনের।
তবে সপ্তাহে চার দিন কাজ করলেও তাঁদের কর্মঘণ্টা এখনো আগের মতো ৪০ ঘণ্টাই আছে। দেশটিতে যারা চার দিনের কর্মসপ্তাহ বেছে নেন, তাঁদের অবশ্যই দিনে ১০ ঘণ্টা কাজ করতে হয়।
২০২১ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার ঘোষণা করেছিল, সব সরকারি সংস্থায় প্রতি সপ্তাহে সাড়ে চার দিন কাজ চলবে। দেশটির কর্মীরা অফিসে দিনে সর্বোচ্চ সময় ব্যয় করেন। প্রতি সপ্তাহে গড়ে তাঁদের ৫২ দশমিক ৬ ঘণ্টা কাজ করতে হয়।
সম্প্রতি ভারতে সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টা কাজের আহ্বান জানানো হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
২০২৩ সালে ভারতীয় বহুজাতিক প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান ইনফোসিসের সহপ্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ মূর্তি সুপারিশ করেছিলেন, এতে উত্পাদনশীলতা ও দেশের অর্থনীতি বেড়ে যেতে পারে।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার মতে, ভারতের অর্থনীতি ইতিমধ্যেই জি-২০ দেশগুলোর মধ্যে দ্রুত বর্ধনশীল। ভারতীয়রা ইতিমধ্যে সপ্তাহে গড়ে ৪৭ দশমিক ৭ ঘণ্টা কাজ করে। আর যুক্তরাষ্ট্রে ৩৬ দশমিক ৪ ঘণ্টা ও জাপানে ৩৬ দশমিক ৬ ঘণ্টার চেয়ে অনেক বেশি।