বিসিএস ভাইভা অভিজ্ঞতা-১৪, স্বাস্থ্য ক্যাডার কেন পছন্দক্রমে সবার নিচে
৪৩তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা চলবে আগামী ১২ অক্টোবর পর্যন্ত। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৯ হাজার ৮৪১ প্রার্থী মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেবেন। প্রতিদিন ১৮০ জনের ভাইভা নিচ্ছে পিএসসি। প্রার্থীদের প্রস্তুতির সুবিধার জন্য আগে যাঁরা মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে সফল হয়েছেন, তাঁদের অভিজ্ঞতা প্রথম আলোয় প্রকাশ করা হচ্ছে। নিয়মিত আয়োজনের আজ ১৪তম পর্বে মৌখিক পরীক্ষার অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন ৪১তম বিসিএসে শুল্ক ও আবগারি ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত ফজলে রাব্বি।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএসের চূড়ান্ত পরীক্ষা দেওয়ার এক মাসের মধ্যে ৪১তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়। তাই ফলাফল পাওয়ার আগে অ্যাপিয়ার্ড দিয়েই আবেদন করেন ফজলে রাব্বি। এ বিসিএসে তাঁর প্রথম পছন্দ ছিল শুল্ক ও আবগারি ক্যাডার, দ্বিতীয় পুলিশ ক্যাডার ও তৃতীয় প্রশাসন ক্যাডার। নিজের প্রথম বিসিএসেই পেয়েছেন পছন্দের ক্যাডার।
গত ২১ মার্চ মৌখিক পরীক্ষা দেন ফজলে রাব্বির। ২৫ থেকে ৩০ মিনিটের মতো ভাইভা হয় তাঁর। বোর্ড যে প্রশ্নগুলো করেছিল, সব কটির উত্তর দিতে পেরেছিলেন তিনি। ফজলে রাব্বি বলেন, ‘প্রথমে আমার নামের অর্থ, বাড়ি কোথায় এবং কোথায় পড়াশোনা করেছি—এসব জানতে চাওয়া হয়।’
ফজলে রাব্বি বলেন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেছি শুনে বোর্ড জিজ্ঞাসা করেছে, স্বাস্থ্য ক্যাডার পছন্দক্রমের কত নম্বরে রেখেছি। উত্তরে বলেছি, স্বাস্থ্য ক্যাডার আমার পছন্দক্রমে সবার নিচে। এরপর জিজ্ঞাসা করা হয়, স্বাস্থ্য ক্যাডার কেন পছন্দক্রমের সবার নিচে? উত্তরে বলি, স্বাস্থ্য ক্যাডারে পদসংখ্যা অনেক কম। এ কারণে আমি স্বাস্থ্য ক্যাডারকে সবার নিচে রেখেছি।
মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থীদের যে শপথবাক্য পাঠ করানো হয়, সেটি জানতে চাওয়া হয় এবং শপথবাক্য কীভাবে এল, সেটিও জিজ্ঞাসা করা হয়। উত্তরে ফজলে রাব্বি বলেন, ‘আমরা যখন ইন্টার্নশিপ শুরু করি, তখন আমাদের শপথবাক্য পাঠ করানো হয়। শপথবাক্যটি বলি। এরপর বলি, ১৯৪৮ সালের জেনেভা কনভেনশনে যে স্বাস্থ্যবিষয়ক নীতিগুলো গৃহীত হয়েছে, তা আলমাআটা ডিক্লারেশন নামে পরিচিত। আলমাআটা ডিক্লারেশনের মাধ্যমে শপথবাক্যটি এসেছে।’
সংবিধানের আলোকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি ব্যাখ্যা করতে বলা হয় ফজলে রাব্বিকে। এর উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমাদের সংবিধানের ২৫ নম্বর অনুচ্ছেদে পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।’ ২৫ নম্বর অনুচ্ছেদটি পুরোটা বলেন তিনি।
৪১তম বিসিএসে ফজলে রাব্বির প্রথম পছন্দ ছিল শুল্ক ও আবগারি ক্যাডার। শুল্ক ও আবগারি ক্যাডার প্রথম পছন্দ হওয়ার কারণ জানতে চাওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই দেশের সেবক এবং আমাদের জাতীয় দায়িত্ব পালন করছি। রাজস্ব আমাদের দেশের মূল চালিকা শক্তি। রাজস্ব সংগ্রহের মাধ্যমে আমি স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি এবং দেশের সার্বিক উন্নয়নে অবদান রাখতে পারি। শুল্ক ও আবগারি ক্যাডারে দ্রুত পদোন্নতি ও অর্থনৈতিক সচ্ছলতা রয়েছে এবং শুল্ক গোয়েন্দা হিসেবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।’
রাজস্বনীতি ও মুদ্রানীতি কী, কেন করা হয় ও কারা করেন? এসব প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সামষ্টিক অর্থনৈতিক কার্যকলাপ পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণে সরকারের আয় ও ব্যয় ব্যবস্থাপনার কৌশলকে রাজস্ব নীতি বলে। বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ এটি প্রণয়ন করে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, সরকারের আয় ও ব্যয়ের সমন্বয় করতে এটি করা হয়। আর মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে তারল্য নিয়ন্ত্রণ করাকে মুদ্রানীতি বলে। মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে এটি প্রণয়ন করা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশে ব্যাংক এটি প্রণয়ন করে।
আবগারি শুল্ক কী, সেটি জানতে চাওয়া হয় ফজলে রাব্বির কাছে। এর জবাবে তিনি বলেন, দেশের ভেতরে উৎপাদিত পণ্য ও সেবা থেকে যে কর ধার্য করা হয়, তাকে আবগারি শুল্ক বলে। ফজলে রাব্বির বাড়ি রাজশাহীতে। তাঁকে রাজশাহীর একজন বিখ্যাত ব্যক্তির নাম বলতে বলা হলে তিনি আবুল হাসনাত মো. কামারুজ্জামান হেনার নাম বলেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদান জানতে চাওয়া হয়।
ফজলে রাব্বি উত্তর দেন, ‘আবুল হাসনাত মো. কামারুজ্জামান হেনা মহান মুক্তিযুদ্ধের একজন অন্যতম সংগঠক, জাতীয় চার নেতার একজন ও আমাদের জাতির পিতার অন্যতম সহযোগী। মুক্তিযুদ্ধের সময় গঠিত সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয় ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করে মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করতে ও এগিয়ে নিতে অবদান রাখেন তিনি।’