বিসিএস ভাইভা অভিজ্ঞতা-১৬, কূটনীতিক হিসেবে কীভাবে দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখবেন
৪৩তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা চলবে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৯ হাজার ৮৪১ প্রার্থী মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেবেন। প্রতিদিন ১৮০ জনের ভাইভা নিচ্ছে পিএসসি। প্রার্থীদের প্রস্তুতির সুবিধার জন্য আগে যাঁরা মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে সফল হয়েছেন, তাঁদের অভিজ্ঞতা প্রথম আলোয় প্রকাশ করা হচ্ছে। নিয়মিত আয়োজনের আজ ১৬তম পর্বে মৌখিক পরীক্ষার অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন ৪১তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত মো. আনিসুর রহমান।
৪১তম বিসিএসে মো. আনিসুর রহমানের প্রথম পছন্দ ছিল পররাষ্ট্র ক্যাডার, দ্বিতীয় প্রশাসন ক্যাডার এবং তৃতীয় শুল্ক ও আবগারি ক্যাডার। প্রায় ২০ মিনিট ভাইভা নেওয়া হয় তাঁর। আনিসুর রহমান বলেন, ‘ভাইভার দিন শুরুতেই আমার সিরিয়াল ছিল। একদম শুরুতে হওয়ায় ভাইভা বোর্ডের সবাই খুব ভালো মুডে ছিলেন। অনেকেই ভেবে থাকেন, শুরুতে ভাইভা হওয়া খারাপ কিন্তু আমার মনে হয়েছে, শুরুতে হলেই বরং ভালো। কারণ, আগে কেউ খুব ভালো বা খুব খারাপ ভাইভা দিলে অতিরিক্ত প্রত্যাশা তৈরি হতে পারে।’
মৌখিক পরীক্ষায় আনিসুরের বর্তমান কর্মস্থল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়। এরপর তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয় নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে সম্প্রতি একটি বড় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সেটি কী? এর উত্তরে তিনি বলেন, বাংলাদেশে শিক্ষা ক্ষেত্রে সব ফরমে এখন থেকে অভিভাবকের ঘরে মা, বাবা অথবা আইনগত অভিভাবকের নাম লেখা যাবে বলে হাইকোর্ট রায় দিয়েছেন। সব ফরমে এই তিনটি বিকল্প বাধ্যতামূলকভাবে সংযুক্ত করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। আগে শিক্ষা ফরমে শুধু পিতার নাম থাকলেও ২০০০ সালে সেখানে মায়ের নাম লেখাও বাধ্যতামূলক করা হয়। কিন্তু হাইকোর্টের এই রায়ের ফলে এখন থেকে শুধু মায়ের পরিচয়েও যেকোনো সন্তান শিক্ষার অধিকার পাবেন।
আনিসুর রহমান বলেন, ‘উত্তর শুনে বোর্ড প্রধান খুব খুশি হয়েছিলেন। এই প্রশ্নটি মূলত সমসাময়িক বিষয় থেকে করা হয়েছিল। নিয়মিত পত্রিকা পড়ার কারণে উত্তর দিতে পেরেছিলাম।’
কখন থেকে থেকে বাবার নামের সঙ্গে মায়ের নাম লেখা শুরু হয়—এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১৯৯৮ সালের ৯ ডিসেম্বর রোকেয়া দিবসে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মায়ের নাম লেখার ঘোষণা দেন এবং ২০০০ সালের ২৭ আগস্ট কার্যকর হয়। সনদে পিতার নামের সঙ্গে মায়ের নাম লেখা চালু হয় ২০০৪ সালে।
যেহেতু আনিসুরের প্রথম পছন্দ ছিল পররাষ্ট্র ক্যাডার, তাই তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়, একজন কূটনীতিক হিসেবে কীভাবে দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখবেন? অর্থনৈতিক কূটনীতির প্রসঙ্গ তুলে উত্তর দেন আনিসুর। তিনি বলেন, ‘কূটনীতিক হিসেবে আমার চেষ্টা থাকবে রপ্তানির নতুন নতুন বাজার খুঁজে বের করা, বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে আসা, প্রবাসী শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের জন্য নতুন দেশ খুঁজে বের করা, আধুনিক প্রযুক্তি দেশে নিয়ে আসা এবং প্রবাসী শ্রমিকদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করা।’
ট্রিটি ও কনভেনশনের মধ্যে পার্থক্য জানতে চাইলে তিনি উত্তর দেন, ট্রিটিতে সবার স্বাক্ষর লাগে, তারপর তা চুক্তি হয়। অন্যদিকে কনভেনশনে নির্দিষ্টসংখ্যক রাষ্ট্র স্বাক্ষর করলেই তা আইনে পরিণত হয়, সবার স্বাক্ষর লাগে না। কনভেনশন হয় কোনো আন্তর্জাতিক সংগঠন বা সংস্থার অধীন।
এসডিআর বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে আনিসুর বলেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) অ্যাকাউন্টিং কারেন্সি হলো এসডিআর। আইএমএফ ঋণ দেওয়ার হিসাব ও পরিশোধের হিসাব এসডিআরে করে। কিন্তু এর বাস্তবরূপ নেই। বর্তমানে আইএমএফের রিজার্ভ মুদ্রা পাঁচটি। সেগুলো হলো—ডলার, ইউরো, পাউন্ড, ইয়েন ও ইউয়ান।
সম্পূরক প্রশ্ন হিসেবে জানতে চাওয়া হয়, আমরা আইএমএফ থেকে এসডিআরে ঋণ পাচ্ছি, পরিশোধ করব কীভাবে? তিনি উত্তর দেন, এসডিআরকে মার্কিন ডলারে কনভার্ট করে আইএমএফ ঋণ দেয় ও পরিশোধ নেয়। যেমন আজকে ১ এসডিআর = ১.৩১ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ ৪৫০ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়েছে। এটা তাদের বইয়ে ৪২০ বিলিয়ন এসডিআর হিসেবে লেখা থাকবে। ঋণ পরিশোধের সময় ৪২০ বিলিয়ন সমান কত মার্কিন ডলার, সেটি হিসেব করে মূল অ্যামাউন্ট অংশের পরিশোধ নেবে। তখন আজকের ১ এসডিআর = ১.৩১ মার্কিন ডলার না হয়ে ডলার মূল্য কমে ১ এসডিআর = ১.৫০ মার্কিন ডলার হয়ে গেলে আমাদের বেশি পরিশোধ করতে হবে, অর্থাৎ আমাদের লোকসান হবে। একইভাবে এর বিপরীতও হতে পারে।
মো. আনিসুর রহমানের বাড়ি গোপালগঞ্জে। এ জেলার কয়েকটি নদীর নাম জানতে চাওয়া হলে তিনি মধুমতি, ঘাঘর ও কুমার নদের নাম বলেন। সম্পূরক প্রশ্নে বাংলাদেশে উৎপত্তি হয়েছে এমন একটি নদীর নাম ও উৎপত্তির স্থান জানতে চাওয়া হলে তিনি হালদা নদীর নাম বলেন। হালদা নদীর উৎপত্তি খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার বাটনাতলী পাহাড় থেকে। এই নদীর উৎপত্তি, বিস্তার এবং সমাপ্তি সবই বাংলাদেশের ভেতর।