বিসিএসকেন্দ্রিক পড়াশোনা করলে সব চাকরির প্রস্তুতি হয়ে যাবে

বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার, বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক (এডি) ও বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসের (বিজেএস) সহকারী জজ পদ—এই শীর্ষ তিন চাকরিই পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে পাস করা আবদুল বাছিত মোল্লা। তাঁর সফলতার গল্প শুনেছেন আব্দুর রাজ্জাক সরকার

প্রথম আলো:

বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার, বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক (এডি) ও সহকারী জজ পদ—শীর্ষ তিন চাকরি পাওয়ায় অভিনন্দন আপনাকে। কোন পদের জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নিয়েছেন?

উত্তর: বিসিএসকে লক্ষ্য করে ২০২১ সাল থেকে জোরেশোরে প্রস্তুতি শুরু করি। সহকারী জজ পদে আগে একবার পরীক্ষা দিয়েছিলাম, তাই রিভিশন দিয়ে স্নাতকের পড়াশোনার ওপর ভরসা করেছি। বেশি চাপ যাতে না হয়, এ জন্য ব্যাংকের চাকরির বই কিনেছিলাম মাত্র দুইটা, যাতে বিসিএসের প্রস্তুতিতে বেশি প্রভাব না পড়ে। নিয়মিত পড়াশোনা করার চেষ্টা করেছি। ২০২১ সালের জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিনই কিছু না কিছু পড়েছি। ধারাবাহিকভাবে পড়ার চেষ্টা করেছি। বইয়ের আকার দেখে ভয় পাইনি। ৩০০ পৃষ্ঠার বই প্রতিদিন ১০ পৃষ্ঠা পড়লে ৩০ দিনে শেষ। এভাবে ছোট করে দেখতাম লক্ষ্যটাকে। মনোযোগী থেকেছি। মোটামুটি এভাবেই আমার একটা পাঁচমিশালি প্রস্তুতি হয়ে যায় বিসিএস, ব্যাংক আর জুডিশিয়ারির জন্য।

প্রথম আলো:

বিসিএস, ব্যাংকের এডি ও সহকারী জজ পদ—এই তিন চাকরির জন্য প্রস্তুতির মধ্যে কোনো মিল আছে কি?

উত্তর: ব্যাংকের ২০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষার মধ্যে ১৬০ নম্বর আর জুডিশিয়ারির ১০০০ নম্বর লিখিতের মধ্যে ৪০০ নম্বরের সিলেবাস ছিল বিসিএসের মতো। এতে আমার প্রস্তুতিতে সুবিধা হয়।

প্রথম আলো:

শীর্ষ তিন সরকারি চাকরির পরীক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা কখন থেকে শুরু করেন?

উত্তর: আইনের ছাত্র হিসেবে আমার লক্ষ্য ছিল বিচারক হওয়া। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে স্নাতক শেষ করে ১৩তম জুডিশিয়ারিতে আবেদন করি। কিন্তু তখন মৌখিক পরীক্ষায় বাদ পড়ি। প্রথমবার সহকারী জজ পদে উত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ হওয়ায় পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনি। ভেবে দেখি যে বিসিএসকেন্দ্রিক পড়াশোনা করলে সব চাকরির প্রস্তুতি হয়ে যাবে কিন্তু জুডিশিয়ারি নিয়ে থাকলে শুধু জুডিশিয়ারিতে চাকরির প্রস্তুতি আসবে। এর পর থেকে বিসিএসভিত্তিক পড়াশোনা শুরু করি। জুডিশিয়ারির পড়াশোনাও করতাম, তবে খুব বেশি নয়। ৪১তম বিসিএস প্রিলিমিনারি দিয়ে দেখলাম যে ব্যাংকের নিয়োগ বেশ দ্রুত হয়। তখন বিসিএসের পাশাপাশি আমার লক্ষ্য ছিল একটা ৯ম গ্রেডের সরকারি চাকরি পাওয়া। তাই ব্যাংকের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য অনেক বিশ্লেষণ করে শুধু দুইটা বই কিনি। এভাবেই সব ধরনের চাকরির পরীক্ষার জন্য নিজের একটা প্রস্তুতি এসে যায়। যদি ১৩তম জুডিশিয়ারিতে সহকারী জজ হিসেবে নিয়োগ পেতাম, তাহলে অন্য কোনো চাকরির কথা চিন্তাই করতাম না। প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার পর আমি সব চাকরিই পাই।

প্রথম আলো:

এই তিন চাকরির মধ্যে কোনটাতে ক্যারিয়ার গড়ার ইচ্ছা?

উত্তর: পরিবার ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা বিভিন্ন দিকে পরামর্শ দিয়েছেন। আমার নিজেরও একটা ইচ্ছা-অনিচ্ছা আছে। তবে প্রশাসন ক্যাডারের পাল্লাই আপাতত ভারী মনে হচ্ছে।

প্রথম আলো:

বিসিএস, ব্যাংকের চাকরি বা সহকারী জজ পদে নতুন যাঁরা চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তাঁদের উদ্দেশে কিছু বলতে চান কি?

উত্তর: ধৈর্য ধরতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে পড়াশোনা করা ভালো। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর প্রিলিমিনারির আগে ‘এক মাস পড়ে হয়ে যাবে’ চিন্তা না করে, এক বছর পরের চিন্তা করলে বেশি ফলপ্রসূ হবে। আর তিনটার প্রস্তুতি একসঙ্গেই নিতে হবে এমন নয়। যাঁর যাঁর শক্তি ও দুর্বলতা অনুযায়ী পরিকল্পনা করে এগোলে সুফল পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকবে।