একটি বিসিএস দেওয়ার পণ করে পুলিশে চতুর্থ নিশাত

৪১তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত (মেধাক্রম চতুর্থ) হয়েছেন নিশাত বিনতে রায়হান। এটি তাঁর প্রথম বিসিএস। প্রথম বিসিএসেই সফলতা যদি না পান, পণ করেছিলেন আর কখনো বিসিএস দেবেন না নিশাত। প্রথমবার বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে কীভাবে সফল হলেন, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন।

৪১তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত (মেধাক্রম চতুর্থ) হয়েছেন নিশাত বিনতে রায়হান।
ছবি: সংগৃহীত
প্রশ্ন:

৪১তম বিসিএসের জন্য প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছেন কীভাবে?

ক্যাডার সার্ভিস কখনোই আমার জীবনের লক্ষ্য ছিল না। পরিবারের ইচ্ছা আর নিজেকে যাচাইয়ের উদ্দেশ্যেই মূলত ৪১তম বিসিএসের জন্য আবেদন করেছিলাম। প্রথম থেকে একটা সিদ্ধান্তে অটল ছিলাম, জীবনে একটা বিসিএসই দেব এবং সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েই দেব। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আগের তিন মাস লেখাপড়া করেছিলাম। বিসিএস প্রস্তুতির প্রচলিত বিভিন্ন বই, জাতীয় দৈনিক পত্রিকা, কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সসহ অনলাইনভিত্তিক বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম থেকে সাহায্য নিয়ে প্রিলিমিনারির জন্য নিজেকে প্রস্তুত করি। আমি প্রচুর মডেল টেস্ট দিয়েছি, যা আমার প্রিলিমিনারির প্রস্তুতিতে অনেক ভূমিকা রেখেছে।

আরও পড়ুন
প্রশ্ন:

বিসিএসে উত্তীর্ণ হতে কোন কোন বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন?

লিখিত পরীক্ষার জন্য সময় পেয়েছিলাম তিন মাস। অনেক বড় সিলেবাসকে নিজের মতো গুছিয়ে নিয়ে প্রস্তুতি শুরু করি। আমি প্রচুর লিখে লিখে পড়তাম, এ জন্য আমার সময় একটু বেশি লাগলেও পড়াটা দীর্ঘ সময় মনে রাখতে পারতাম। ২০০ নম্বরের বিষয়গুলোতে আমি বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। আন্তর্জাতিক বিষয়টা আমার ভালো লাগার একটা জায়গা থাকায় অনেক পত্রিকা থেকে মিলিয়ে নোট করে পড়তাম, যা আমার বাংলা ও ইংরেজি রচনা লেখায়ও অনেক তথ্যের জোগান দিয়েছে। আমি বরাবরই বুলেট পয়েন্টে উত্তর করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। এ জন্য লিখিত পরীক্ষায় বিশেষ করে বাংলা, বাংলাদেশ বিষয়াবলি, আন্তর্জাতিক ও বিজ্ঞান প্রতিটা পরীক্ষায় ১০-১৫ মিনিট আগে শেষ হয়েছে। ফলে আমি রিভিশন দেওয়ার সময় পেয়েছিলাম। গণিতের ক্ষেত্রে চর্চার কোনো বিকল্প নেই। অনুবাদে ভালো করতে বাংলা ও ইংরেজি সংবাদপত্র নিয়মিত পড়ার অভ্যাস থাকাটা জরুরি।

আরও পড়ুন
প্রশ্ন:

৪১তম বিসিএসে কেমন ফল আশা করেছিলেন?

আমি আগেই বলেছি, ৪১তম বিসিএস পরীক্ষা আমার জীবনের প্রথম এবং একমাত্র বিসিএস। কাজেই নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে আমি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি। মনে মনে আশা ছিল হয়তো ভালো কিছু হবে। তবে মেধাতালিকায় চতুর্থ হয়ে পছন্দের ক্যাডার পাব, এটা বিশ্বাস করতে বেশ সময় লেগেছে। এখনো মনে হয় যেন একটা ঘোরের মধ্যে আছি।

আরও পড়ুন
প্রশ্ন:

মৌখিক পরীক্ষার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল? কী কী প্রশ্ন করা হয়েছিল?

আমাকে মূলত ক্যাডারভিত্তিক প্রশ্ন কম করা হয়েছিল। তবে আমার স্নাতকের বিষয়ে প্রশ্ন বেশি করা হয়। বিশেষ করে কার্বন ক্রেডিট, কপ-২৬, জলবায়ু পরিবর্তন এবং দুর্যোগ ব্যাবস্থাপনায় বাংলাদেশের অবস্থান—এ বিষয়গুলো নিয়ে জানতে চাওয়া হয়। এ ছাড়া রোহিঙ্গা ইস্যু, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, আইএমএফের ঋণ এবং সমসাময়িক আরও কিছু বিষয়েও প্রশ্ন করা হয়েছিল। আমার ভাইভা অনেকটাই আলোচনামূলক ছিল। বিভিন্ন বিষয়ে বোর্ড মেম্বাররা মতামত দেন, আমার কাছেও জানতে চান। প্রথমে নার্ভাস লাগলেও পরে খুবই আত্মবিশ্বাস কাজ করে। যেসব প্রশ্নের উত্তর জানা ছিল না, বিনয়ের সঙ্গে ক্ষমা প্রার্থনা করেছি। আমার ভাইভা প্রায় ২০ মিনিট হয়, বেশির ভাগটুকুই ইংরেজিতে হয়েছিল।

আরও পড়ুন
প্রশ্ন:

পড়াশোনা করেছেন কোথায়? ফলাফল কেমন ছিল?

হলি ক্রস উচ্চবালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসতি জিপিএ–৫ এবং হলি ক্রস কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ–৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করি। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজ থেকে সিজিপিএ ৩.৮৭ নিয়ে মেধা বৃত্তিসহ স্নাতক সম্পন্ন করি। পরবর্তী সময়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিষয়ে সিজিপিএ ৩.৭৮ পেয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করি।