১০০ টাকায় পুরস্কার ৬ লাখ
>• বিয়ে থেকে শুরু করে জন্মদিনের উপহার হিসেবেও প্রাইজবন্ডের প্রচলন আছে
• মাসিক সুদ আয় না থাকলেও লোকসানের ঝুঁকি নেই
• ড্র বছরে চারবার
• ড্র অনুষ্ঠিত হয়; ৩১ জানুয়ারি, ৩০ এপ্রিল, ৩১ জুলাই ও ৩১ অক্টোবর
• পুরস্কারের টাকার ওপর সরকারকে উৎসে কর দিতে হয় ২০ শতাংশ
মাত্র ১০০ টাকা বিনিয়োগ করেও ৬ লাখ টাকার মালিক বনে যাওয়া সম্ভব। এ জন্য শুধু একটা প্রাইজবন্ড কিনতে হবে, আর বছরে চারবার তা মিলিয়ে দেখতে হবে। প্রাইজবন্ড সরকারের চালু করা। সমাজের সব শ্রেণির মানুষের মধ্যে সঞ্চয়প্রবণতা বৃদ্ধির জন্য এটি চালু করে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর। স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে চালু এ বন্ডের নাম ‘বাংলাদেশ প্রাইজবন্ড’।
প্রাইজবন্ডকে পুরস্কার বন্ড ও লটারি বন্ডও বলা হয়। আবার সুদের কোনো ব্যাপার নেই বলে একে সুদবিহীন বন্ডও বলা হয়। যেকোনো সময় এ প্রাইজবন্ড ভাঙিয়ে টাকা ফেরত নেওয়া যায়। ভাঙানো ও কেনা—দুটোই করা যায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সব ক্যাশ অফিস, বাণিজ্যিক ব্যাংক ও ডাকঘর থেকে। বিয়ে, বিবাহবার্ষিকী, জন্মদিন, সুন্নতে খতনা, র্যাফেল ড্র—এসব অনুষ্ঠানে প্রাইজবন্ড উপহার দেওয়ার বেশ প্রচলন রয়েছে।
বিশ্বে প্রথম প্রাইজবন্ড চালু হয় ১৯৫৬ সালে আয়ারল্যান্ডে। বাংলাদেশে প্রথম চালু হয় ১৯৭৪ সালে। তবে তখন ছিল ১০ টাকা মূল্যমানের প্রাইজবন্ড। ১৯৮৫ সালে চালু হয় ৫০ টাকা মূল্যমানের প্রাইজবন্ড। ১৯৯৫ সালে ১০০ টাকা মূল্যমানের প্রাইজবন্ড চালু হওয়ার পর ১০ টাকা ও ৫০ টাকা মূল্যমানের বন্ডগুলো সরকার তুলে নেয়।
১০০ টাকা মূল্যমানের প্রাইজবন্ডের ড্র অনুষ্ঠিত হয় বছরে চারবার; ৩১ জানুয়ারি, ৩০ এপ্রিল, ৩১ জুলাই ও ৩১ অক্টোবর। ঢাকার বিভাগীয় কমিশনারকে চেয়ারম্যান করে গঠিত একটি কমিটি ড্র অনুষ্ঠান করে থাকে। তবে কেনার দুই মাস পার হওয়ার পর প্রাইজবন্ড ড্রয়ের আওতায় আসে। নতুন কেনা প্রাইজবন্ডের পাশাপাশি আগে কিনে রাখা প্রাইজবন্ডও ড্রয়ের আওতায় থাকে। ড্র অনুষ্ঠানের দুই বছর পর্যন্ত পুরস্কারের টাকা দাবি করা যায়। এর মধ্যে কেউ দাবি না করলে পুরস্কারের অর্থ তামাদি হয়ে সরকারি কোষাগারে ফেরত যায়।
প্রাইজবন্ডে প্রতি সিরিজের জন্য ৪৬টি পুরস্কার রয়েছে, যার মূল্যমান ১৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা। প্রথম পুরস্কার ১টি ৬ লাখ টাকা, দ্বিতীয় পুরস্কার ১টি ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা, তৃতীয় পুরস্কার ২টি ১ লাখ টাকা করে, চতুর্থ পুরস্কার ২টি ৫০ হাজার টাকা করে এবং পঞ্চম পুরস্কার ৪০টি ১০ হাজার টাকা করে।
জেতার পর মূল বন্ডসহ নির্ধারিত ফরমে আবেদন করলে সর্বোচ্চ দুই মাসের মধ্যে বিজয়ীকে পে-অর্ডার দেওয়া হয়। তবে ১৯৯৯ সালের ১ জুলাই থেকে পুরস্কারের টাকার ওপর সরকারকে উৎসে কর দিতে হয় ২০ শতাংশ। প্রাইজবন্ড বিক্রি করে সরকার সরাসরি জনগণের কাছ থেকে ঋণ নেয়। ভারত-পাকিস্তানে ১০০ থেকে ৪০ হাজার রুপি মূল্যমানের ৮ ধরনের প্রাইজবন্ড থাকলেও বাংলাদেশে ২০ বছর ধরেই রয়েছে শুধু ১০০ টাকা মূল্যমানের প্রাইজবন্ড।
প্রাইজবন্ড ড্র কমিটির সচিব ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক নির্মল কুমার সরকার। তবে এ পদে কয়েক বছর দায়িত্ব পালন করা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. মাছুম পাটোয়ারী গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে জানান, দেশে এত দিন ৪ কোটি ৪০ লাখ প্রাইজবন্ড থাকলেও সম্প্রতি এর পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও জনসংযোগ) মো. আবু তালেব গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাস্তব কারণে প্রাইজবন্ডের পুরো কার্যক্রম এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকই দেখছে। তবে এ বিষয়ে কারও কোনো অভিযোগ থাকলে আমাদের জানাতে পারেন। আমরা ত্বরিত ব্যবস্থা নেব।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সঞ্চয় অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গাফিলতি করে অনেকে প্রাইজবন্ডের নম্বর মিলিয়ে দেখেন না। ফলে প্রাপ্ত পুরস্কারও নিতে পারেন না অনেকে।
বেতন পেয়ে প্রতি মাসেই ১০০ টাকার প্রাইজবন্ড কেনেন বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যম সারির কর্মকর্তা শহীদুল হক। তিনি বলেন, প্রাইজবন্ডের প্রথম পুরস্কারের মূল্যমান ৬ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে কমপক্ষে ২০ লাখ টাকা করা উচিত। আর উৎসে কর ২০ শতাংশ থেকে নামাতে হবে ৫ শতাংশে। তাহলেই এ খাত থেকে সরকার স্বল্প খরচে নগদ অর্থ সংগ্রহ করতে পারবে।