দেশে হাইটেক পার্কে কী হচ্ছে, তা দেখতে যাবেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এক সপ্তাহের মধ্যে পাঁচ থেকে ছয়টি হাইটেক পার্ক পরিদর্শন করার কথা জানান তিনি। হাইটেক পার্ক নির্মাণের পর সেটি কী হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে কিংবা যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে হাইটেক পার্ক স্থাপন করা হয়েছিল, সেটি অর্জিত হয়েছে কি না—এসব দেখতে যাবেন বলে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী।
শুক্রবার রাজধানীর বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) মিলনায়তনে ‘চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারের প্রস্তুতি’ নিয়ে এক ছায়া সংসদে পরিকল্পনামন্ত্রী প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। প্রতিযোগিতার আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘সারা দেশে হাইটেক পার্ক নিয়ে নানা কানাঘুষা শোনা যায়। কোনো এক হাইটেক পার্কে বিয়ের অনুষ্ঠান হয়েছে, ভাড়া দেওয়া হয়েছে, এমন কথাও শোনা যায়। আসলে সেখানে কী হয়, আমি এক সপ্তাহের মধ্যে দেখতে যাব।’
২০১৭ সালে যশোর শহরের নাজির শঙ্করপুর এলাকায় ১২ একর জায়গায় গড়ে ওঠা শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কের অ্যাম্ফিথিয়েটার বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য ভাড়া দেওয়ার সংবাদ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে পরিকল্পনামন্ত্রী এ কথা বলেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, দুর্নীতি দেশের উন্নয়নের পথে বড় বাধা। এটি একটি ব্যাধি। সমাজে প্রচুর দুর্নীতি হয়। এ নিয়ে সরকার চিন্তিত। তবে দুর্নীতি দমন কমিশন শক্তিশালী করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বাজেট বড় হচ্ছে। প্রকল্পের সংখ্যা বাড়ছে। তাই দুর্নীতিও বেশি। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সর্বস্তরের দুর্নীতির প্রতিকার করা জরুরি বলে মত দেন তিনি।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, হাইটেক পার্কে যেসব ব্যত্যয় ঘটেছে, তা দূরীকরণে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উচ্চশিক্ষার প্রসারে সরকার আন্তরিক। সে জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে, যেখানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষায় অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। অটোমেশন বা যান্ত্রিকীকরণ প্রক্রিয়ায় পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করার তাগিদ দেন তিনি। তিনি এ–ও বলেন, ‘যন্ত্রের পেছনে যে মানুষ থাকা উচিত, সেখানে আমাদের ঘাটতি আছে।’
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশও চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের পথে হাঁটা শুরু করেছে। কিন্তু দ্রুতগতির চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সঙ্গে বাংলাদেশ কতখানি যুক্ত হতে পারছে, সেটিই আলোচনার বিষয়। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সঙ্গে দ্রুতগতির ইন্টারনেট, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, আধুনিক রোবটিকস, ন্যানো টেকনোলজি, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের বিষয়টি আলোচনায় চলে আসে। কিন্তু এগুলোর কোনোটিতেই এখনো বাংলাদেশ আশানুরূপ অবস্থান তৈরি করতে পারেনি।
হাসান আহমেদ চৌধুরী বলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে যুক্ত হওয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে ইন্টারনেট সুবিধা। অথচ ইন্টারনেটের গতিতে বাংলাদেশ সুদান, লিবিয়া, সিরিয়া, সোমালিয়া, ইথিওপিয়া, উগান্ডার মতো দেশের চেয়ে পিছিয়ে। মোবাইল ইন্টারনেটের গতিতে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৭টি দেশের মধ্যে ১৩৫তম। ইন্টারনেটের গতিতে বাংলাদেশের পেছনে আছে কেবল আফগানিস্তান ও ভেনেজুয়েলা।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারের সামনে ১০টি সুপারিশ উল্লেখ করেন তিনি, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সারা দেশে সাশ্রয়ী মূল্যে দ্রুতগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ব্যবস্থা করা। প্রথাগত শিক্ষার বাইরে বৃত্তিমূলক ও প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষায় গুরুত্ব দিয়ে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলা। শুধু পোশাক খাতের ওপর নির্ভর না করে রপ্তানিমুখী শিল্পসহ অন্যান্য খাতে উৎপাদনবৈচিত্র্য নিশ্চিত করা। সৃজনশীল ও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার সুযোগ বাড়িয়ে প্রয়োজনীয় অর্থায়নের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের অধিক হারে গবেষণার সুযোগ দেওয়া।