পটুয়াখালী জেলার প্রত্যন্ত একটি উপজেলা রাঙ্গাবালী। জেগে ওঠা চরটিই এখন একটি উপজেলা। জেলা শহর থেকে দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার, বড় অংশই নদীপথ। বঙ্গোপসাগরের গাঁ ঘেঁষে গড়ে ওঠা এ উপজেলায় প্রায় দেড় লাখ লোকের বসবাস। প্রত্যন্ত এলাকা হওয়ায় নেই বিদ্যুৎ-সুবিধা। তবু এ উপজেলায় মিলছে পুরোপুরি ব্যাংকিং সুবিধা।
সোলার বা সৌরবিদ্যুতের ওপর নির্ভর করে ২০১৪ সালের অক্টোবর থেকে উপজেলার প্রায় সাত হাজার গ্রাহককে সেবা দিচ্ছে রূপালী ব্যাংকের বাহেরচর শাখা। তাও আবার পুরোপুরি অনলাইন সুবিধা রয়েছে শাখাটিতে। শাখাটি মুনাফাও করছে।
শুধু রূপালী ব্যাংকের বাহেরচর শাখা নয়, বিদ্যুৎ ছাড়াই এখন দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় ব্যাংকিং সুবিধা মিলছে। বাহেরচরে ব্যাংকিং সুবিধা দিচ্ছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকও। যদিও এ এলাকাতে শিক্ষা, চিকিৎসাসহ অন্য সুবিধা খুবই সীমিত।
রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান প্রধান বলেন, ‘আমরা সব শাখাকেই অনলাইনের আওতায় এনেছি। সৌরবিদ্যুতে চলা বাহেরচর শাখাও এ থেকে বাদ পড়েনি। প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের এ শাখার গ্রাহকেরাও এখন তাৎক্ষণিকভাবে সব ধরনের ব্যাংকিং সুবিধা পাচ্ছেন।’
রূপালী ব্যাংকের বাহেরচর শাখা সূত্র জানায়, বাহেরচর শাখায় সৌরবিদ্যুতে চলে চারটি কম্পিউটার, চারটি পাখা ও আটটি বাতি। শাখাটির আয়তন ১ হাজার ২০ বর্গফুট। এ শাখায় আমানত রয়েছে প্রায় ২০ কোটি টাকা ও ঋণ ৮ কোটি টাকা। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত শাখাটি মুনাফা করেছে ৬৫ লাখ টাকা।
বাহেরচর শাখার ব্যবস্থাপক আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, ব্যাংক থাকায় এলাকার লোকজন এখন আর্থিক সুবিধা পাচ্ছেন। অনেকে ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন। টাকাও জমা রাখছেন। ফলে দুর্গম এ এলাকার চিত্র কিছুটা হলেও বদলে গেছে।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী হোসেন প্রধানিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের বেশির ভাগ শাখা গ্রামে। যেসব এলাকায় বিদ্যুৎ নেই, সেখানে সৌরবিদ্যুতের ওপর ভর করে চলছে আমাদের শাখাগুলো।’
সৌরবিদ্যুতের ওপর ভর করে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন এলাকায় যেমন ব্যাংকিং সুবিধা পৌঁছে যাচ্ছে, আবার বিদ্যুৎ-সুবিধা রয়েছে, এমন অনেক শাখাও এখন সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা ও বাস্তব অবস্থার কারণে ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে গত জুন শেষে দেশে ব্যাংক শাখার সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১০ হাজার ৩২২। এর মধ্যে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করছে ৫৪৬টি শাখা। আর এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার দুটি আউটলেট চলছে সৌরবিদ্যুতে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের ৬৭ শাখায় সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহৃত হচ্ছে। এর মধ্যে ৫৯টি পল্লি শাখা ও ৮টি শাখা শহরের। ইসলামী ব্যাংকের ৫২ শাখায় ব্যবহৃত হচ্ছে সৌরবিদ্যুৎ। এর মধ্যে ২৪টি শাখা পল্লি এলাকায়। মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ৪৮টি শাখায় সৌরবিদ্যুতের সুবিধা চালু আছে। সোনালী ব্যাংকের ৩৯ শাখায় ব্যবহৃত হচ্ছে সৌরবিদ্যুৎ। মার্কেন্টাইল ও সোনালী—এ দুটি ব্যাংকেরই ২৫টি পল্লি শাখায় সৌরবিদ্যুতের সুবিধা চালু আছে। রূপালী ব্যাংকের ২টি ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ৫টি শাখা চলছে সৌরবিদ্যুতে। বেসিক ব্যাংকের ৩০ শাখা চলছে সৌরবিদ্যুতে। প্রাইম ব্যাংকের ২৭টি শাখা, যমুনা ব্যাংকের ২৫টি শাখা, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ৪৪টি শাখা, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের ১৯টি শাখায় সৌরবিদ্যুতে চলছে।