সাতরঙা অর্থনীতি
অর্থনীতিরও রং আছে। কম নয়, মোট সাতটি রং। এই সাতরঙা অর্থনীতির চেহারাও আলাদা। এর মধ্যে ভালো আছে, মন্দ আছে। আমাদের জীবনযাপনের সঙ্গেও জড়িয়ে আছে অর্থনীতির এ সাতটি রং। সাত রঙের এই অর্থনীতি থেকে দূরে নেই বাংলাদেশও।
কালো অর্থনীতি
এই যেমন কালো রঙের অর্থনীতি। ‘কালো অর্থনীতি’ সম্পর্কে কমবেশি সবারই ধারণা আছে। এটি অপ্রকাশ্য অর্থনীতি বা ছায়া অর্থনীতি। এই অর্থনীতিতে চোরাগোপ্তা বাজার বা লেনদেন থাকে, যা আইন লঙ্ঘনকারী। অস্ট্রিয়ার অর্থনীতিবিদ ফ্রেডারিক স্নেইডার ৩০ বছর ধরে কালো অর্থনীতি নিয়ে কাজ করেন। তাঁর গবেষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশের কালোটাকার পরিমাণ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩০ থেকে ৩৩ শতাংশের সমান।
সাদা অর্থনীতি
অপরদিকে সাদা অর্থনীতি একটি নতুন শব্দ। ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ডগলাস ম্যাকউইলিয়ামস এটি প্রথম প্রচলন করেন। ২০১৫ সালে প্রকাশিত হয় ম্যাকউইলিয়ামসের ‘দ্য ফ্ল্যাট হোয়াইট ইকোনমি: হাউ দ্য ডিজিটাল ইকোনমি ট্রান্সফরমিং লন্ডন অ্যান্ড আদার সিটিজ’ গ্রন্থটি। এতে বলা হয়, ২০০৭ ও ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দায় যে ব্যবসায়িক ক্ষতি হয় তা পূরণ করতে কীভাবে সক্ষম হয় লন্ডন। একই ভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদের পর (বিচ্ছেদ) ডিজিটাল সার্ভিসের মাধ্যমে তা কীভাবে সামাল দেওয়া হবে-এই পরিস্থিতিগুলোকেও ‘হোয়াইট ইকোনমি’ বলে।
সবুজ অর্থনীতি
‘গ্রিন ইকোনমি’ এমন একটি শব্দ, যা ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত ‘ধরিত্রী সম্মেলনে’ আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল। জাতিসংঘ সঠিক প্রবৃদ্ধি নির্ণয়ের জন্য জাতীয় আয় থেকে বার্ষিক পরিবেশগত ব্যয় বাদ দেওয়ার কথা বলে। ধারণাটির নাম দেওয়া যেতে পারে ‘সবুজ জাতীয় আয়’। বিংশ শতাব্দীজুড়ে পরিবেশগত নানা আন্দোলন ও সম্মেলন আমাদের সামনে নিয়ে এসেছে একের পর এক পরিবেশবান্ধব মডেল। এসব মডেলের মধ্যে গ্রিন ইকোনমি বা সবুজ অর্থনীতি মডেল ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। সবুজ অর্থনীতি, সবুজ প্রবৃদ্ধি আর সবুজ উন্নয়ন নিয়ে বাংলাদেশেও আলোচনা হচ্ছে। কম কার্বন খরচ করে যে বিকাশ; পরিবেশ-প্রকৃতি-জীববৈচিত্র্যের হাত ধরাধরি করে যে অগ্রগতি, তাকেই সরলভাবে সবুজ প্রবৃদ্ধি বলা হয়ে থাকে।
বাদামি অর্থনীতি
‘ব্রাউন ইকোনমি’ মূলত এমন শিল্পগুলোকে বোঝায়, যা উচ্চ মাত্রায় দূষণ এবং গ্যাস নির্গমন ঘটায়। এই ধরনের শিল্পের মধ্যে রয়েছে সিমেন্ট, লোহা খনির কাজ এবং কয়লা খনন। এসব শিল্পের বর্জ্য পরিশোধনে, ধোঁয়া নির্গমনপ্রক্রিয়া তৈরি করতে গত ৫০ বছরে প্রচুর বিনিয়োগ হয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কারখানার পরিত্যক্ত জিনিস পুনরায় ব্যবহারযোগ্য করে তোলা। যেমন চামড়াশিল্পগুলোতে কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) নির্মাণ করা হয়। বাংলাদেশে সাভারে চামড়াশিল্প স্থানান্তরের পর সিইটিপি নির্মাণের কাজ চলছে।
নীল অর্থনীতি
‘ব্লু ইকোনমি’ হচ্ছে সমুদ্রভিত্তিক অর্থনীতি। সমুদ্র থেকে যা–ই আহরণ করা হোক না কেন, যদি সেটা দেশের অর্থনীতিতে যুক্ত হয়, তবে সেটা ব্লু ইকোনমির পর্যায়ে পড়বে। আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে ২০১২ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে আর ২০১৪ সালে ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়ায় মোট ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারের বেশি টেরিটরিয়াল সমুদ্র এলাকা এখন বাংলাদেশের। সঙ্গে আছে ২০০ নটিক্যাল মাইল একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল ও চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানের তলদেশে সব ধরনের প্রাণিজ-অপ্রাণিজ সম্পদের ওপর সার্বভৌম অধিকার।
ধূসর অর্থনীতি
‘গ্রে ইকোনমি’ হলো একটি দেশের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের এমন অংশ, যা সরকারি পরিসংখ্যানে গণ্য হয় না। আরও বিস্তারিতভাবে বললে, অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতি বা ধূসর অর্থনীতি এমন একটি অর্থনীতির অংশ, যা কোনোভাবেই সরকারকে কোনো কর দেয় না বা সরকারের পক্ষ থেকে তদারকি করা হয় না। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতি শ্রমশক্তির ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ। ২০১০-এর শ্রমশক্তি জরিপ অনুসারে বাংলাদেশে ৮৭ শতাংশ শ্রমশক্তি অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতিতে নিযুক্ত রয়েছে।
লাল অর্থনীতি
অনেক লেখকের মতে, ‘রেড ইকোনমি’ সমাজতান্ত্রিক ধারার অর্থনীতিগুলোকে বোঝায়, যেখানে রাষ্ট্র উৎপাদন এবং বণ্টন ধরে রাখে।