শেয়ারবাজারে কিছু মৌলিক পরিবর্তনের বছর

করোনার ধাক্কা কাটিয়ে আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে ব্যবসা–বাণিজ্য। চলতি বছর ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি যেমন হয়েছে, তেমনি কাঁচমালের মূল্যবৃদ্ধি নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে সামনে এসেছে। আবার নতুন করে দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে অমিক্রন। বছরটি কেমন গেল, তা নিয়ে শিল্প ও ব্যবসা–বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত ছয়জনের অভিমত ছাপা হলো আজ। কথা বলেছেন আসিফ খান

আসিফ খান

আমার কাছে সার্বিক বিচারে ২০২১ সালটি ছিল শেয়ারবাজারের জন্য বেশ ভালো একটি বছর। বছরের শেষ ভাগে এসে বাজার কিছুটা গতি হারালেও সামগ্রিক বিচারে বছরটিকে শেয়ারবাজারের জন্য ইতিবাচক বছরই বলতে হবে। আমরা দেখেছি, ২০১৭ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে শেয়ারবাজারের সূচক প্রায় ৪০ শতাংশ কমে গিয়েছিল। এরপর ২০২০ সালের শেষ ও ২০২১ সাল মিলিয়ে সূচকটির বেশ উন্নতি হয়েছে।

কয়েকটি কারণে ২০২১ সালে শেয়ারবাজারকে গতিশীল করেছে। তার মধ্যে অন্যতম ছিল করোনার জন্য ব্যাংক খাতে ঋণের চাহিদা কমে যাওয়া, আমানতের ঋণের সুদহার কমে ৩–৪ শতাংশে নেমে যাওয়া, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নেওয়া বিভিন্ন সংস্কারমূলক পদক্ষেপ ও তার ফলে বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসা। এ ধারা অব্যাহত থাকলে নতুন বছরটিও শেয়ারবাজারের জন্য ইতিবাচক হবে বলে আমার বিশ্বাস।

বছরটি শেয়ারবাজারের জন্য সামগ্রিকভাবে ইতিবাচক হলেও সবচেয়ে খারাপ দিক ছিল স্বল্প মূলধনি কিছু কোম্পানি ও জাঙ্ক শেয়ারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। এসব শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধি বাজার ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে। আমাদের শেয়ারবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর চেয়ে ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বেশি। এ কারণে বাজে কোম্পানির শেয়ারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির ঘটনা ঘটে। তাই এ ধরনের প্রবণতা রোধে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে বেশি সক্রিয় থাকতে হবে।

২০২১ সাল শেয়ারবাজারের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য বছর হয়ে থাকবে বন্ডের জন্য। এ বছরই সর্বোচ্চসংখ্যক বন্ডের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ বছর বন্ডের বাজারটি একটি পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। যার সুফল ভবিষ্যতে বাজারে দেখা যাবে।

এ ছাড়া এ বছর শেয়ারবাজারে বেশ কয়েকটি ফিক্সড আয়ের মিউচুয়াল ফান্ডের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, এটা বাজারের জন্য খুবই ইতিবাচক দিক। যাঁরা বছর শেষে নির্দিষ্ট মুনাফার আশা করেন, তাঁরা এ ধরনের মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন। কারণ, এসব তহবিলে বিনিয়োগ করে বছর শেষে ব্যাংকের চেয়ে বেশি মুনাফা বা আয়ের সুযোগ থাকবে। বন্ড বাজারে গতি সঞ্চার, ফিক্সড আয়ের মিউচুয়াল ফান্ড চালুসহ ২০২১ সালে গুণগত অনেক পরিবর্তন এসেছে বাজারে।

তবে এ কথা ঠিক, সবচেয়ে ভালো বছরটিতেও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ এ বাজারে বিনিয়োগ করে লোকসান গুনেছে। আবার একটি অংশ বিপুল মুনাফা করেছে। যাঁরা দ্রুত মুনাফার আশায় অযৌক্তিক দামে মানহীন কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করেছেন, তাঁদেরই একটি অংশ বড় ধরনের লোকসানে পড়েছেন।

এদিকে বছরের শেষভাগে এসে আমরা শেয়ারবাজার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর মধ্যে একধরনের সমন্বয়হীনতা দেখেছি। নতুন বছরে এ সমন্বয়হীনতা দূর করে বাজারের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সবাই একযোগে কাজ করবেন—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।