শেয়ারবাজার কি ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফিরবে
সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটি মিলিয়ে ছয় দিন বন্ধ থাকার পর বৃহস্পতিবার শেয়ারবাজারে আবার লেনদেন চালু হচ্ছে। তবে এক দিন লেনদেনের পর সাপ্তাহিক ছুটির কারণে আগামী দুই দিন লেনদেন আবারও বন্ধ থাকবে। গত ২৮ এপ্রিল সর্বশেষ লেনদেন হয়েছিল শেয়ারবাজারে। বৃহস্পতিবার থেকে আবার স্বাভাবিক লেনদেনে ফিরবে বাজার। তাতে লেনদেনের সময়ও বাড়বে ৩০ মিনিট। রমজানে শেয়ারবাজারের লেনদেন ৩০ মিনিট কমিয়ে আনা হয়েছিল।
ঈদের বন্ধের আগে বেশ কিছুদিন ধরে শেয়ারবাজার ছিল পতনের ধারায়। ফলে ঈদের ছুটি শেষে বাজার পতনের ধারা কাটিয়ে উত্থানে ফিরতে পারবে কি না, এটাই বড় প্রশ্ন লাখ লাখ বিনিয়োগকারীর কাছে। তাঁরা বলছেন, এপ্রিলের বড় অংশজুড়ে শেয়ারবাজার পতনের ধারায় থাকার কারণে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের জন্য ঈদটি ভালো ছিল না। কারণ, ঈদের আগে শেয়ার বিক্রি করে বাজার থেকে টাকা তুলতে পারেননি বেশির ভাগ বিনিয়োগকারী। টানা পতনের কারণে বেশির ভাগ বিনিয়োগকারীর পোর্টফোলিও তথা শেয়ারের দাম কমে গিয়ে লোকসানে চলে গিয়েছিল।
ঈদের ছুটিতে গত কয়েক দিনে শেয়ারবাজারের একাধিক বিনিয়োগকারী ও একাধিক ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ নির্বাহীর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাঁরা সবাই বাজার নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। পাশাপাশি ঈদের আগের বেদনা ভুলে ঈদের পর বাজার উত্থানের ধারায় ফিরবে বলে আশায় রয়েছেন তাঁরা। কিন্তু সেই আশা বাস্তবে কতটুকু প্রতিফলিত হবে, তা নিয়ে সন্দেহও রয়ে গেছে তাঁদের মনে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বিনিয়োগকারী বলেন, ‘ঋণ করে বাজারে বিনিয়োগ করেছি। দাম এতটাই কমে গিয়েছিল যে ঈদের আগে লোকসানে শেয়ার বিক্রি করতে মন সায় দিল না। তাই ঈদের ছুটিতেও ঋণের বিপরীতে চড়া সুদ গুনতে হয়েছে। এখন ছুটির পর যদি বাজারে গতি সঞ্চার না হয়, তাহলে জোরপূর্বক বিক্রি বা ফোর্সড সেলের আওতায় পড়তে হবে।’
একাধিক ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ নির্বাহী জানান, বাজারে নতুন করে বিনিয়োগ না এলে এ অবস্থা থেকে বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা কম। তাঁরা মনে করেন, ঈদের আগে যেসব বিনিয়োগকারী নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছিলেন, তাঁরা হয়তো নতুন করে আবার সক্রিয় হবেন। সেটি হলেই ঘুরে দাঁড়াবে বাজার। অন্যথায় বাজার পতনের বৃত্ত থেকে বের হওয়ার আর কোনো আশা দেখছেন না তাঁরা।
এদিকে ঈদের ছুটির পর বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া লেনদেনে বাজার আবার স্বাভাবিক ও ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফিরবে বলে মনে করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) শীর্ষ কর্মকর্তারা। তাঁরা মনে করছেন, ঈদকে কেন্দ্র করে এবার সব খাতের ব্যবসা-বাণিজ্যে বেশ চাঙাভাব ছিল। এ কারণে ব্যবসায়ীদের একটি বড় অংশই ব্যবসায় বিনিয়োগ বাড়িয়েছিলেন। ব্যবসায়ীদের যে অংশটি শেয়ার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, তাঁরা শেয়ারবাজারের বদলে নিজেদের মূল ব্যবসায় অর্থলগ্নি করেছিলেন। এখন তাঁরা আবার শেয়ারবাজারমুখী হবেন বলে মনে করছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্মকর্তারা। এটিই বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর আশাবাদের ক্ষেত্রে মূল ভরসা নিয়ন্ত্রক সংস্থার।
জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশের ছোট-বড় ব্যবসায়ীদের অনেকে শেয়ার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ঈদের কারণে তাঁরা শেয়ারবাজারের চেয়ে মূল ব্যবসায় বেশি মনোযোগী ছিলেন। শেয়ারবাজারের বদলে তাঁরা সেখানেই বেশি অর্থলগ্নি করেছিলেন ঈদের ব্যবসা ধরতে। আশা করছি ঈদের পর ব্যবসায়ীদের ওই অংশটি আবার শেয়ারবাজারমুখী হবেন। তাতে বাজার ফিরে পাবে তার স্বাভাবিক গতি।’