সামরিক বনাম অর্থনৈতিক যুদ্ধ
রাশিয়ার যুদ্ধ অর্থনৈতিক সংকট কতটা বাড়াবে
ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ কেবল সামরিক যুদ্ধের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। শুরু হয়েছে অর্থনৈতিক যুদ্ধ। এই যুদ্ধে সংকট বাড়বে অর্থনীতিতে, প্রভাব পড়বে বাংলাদেশেও।
অর্থনীতি কোন পথে যাবে—এ নিয়ে সঠিক অনুমান করার জন্য বিশ্বব্যাপী খ্যাতি আছে মার্কিন অর্থনীতিবিদ নুরিয়েল রুবিনির। পরপর কয়েকটি বিশ্বমন্দার সঠিক অনুমান করেছিলেন তিনি। নুরিয়েল রুবিনির নতুন অনুমান হচ্ছে—ভয়াবহ সংকটের দিকে যাচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতি।
কোভিড-১৯–এর কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে অনিশ্চয়তা রয়েছে, তা এখনো কাটেনি। ২০২০–এর মন্দার পরে, ২০২১ সালে উত্তরণের কিছু লক্ষণ ছিল। কিন্তু নতুন বছরের দুই মাস না যেতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিকে নতুন করে সংকটে ফেলে দিয়েছে। অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, এই যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতির অনিশ্চয়তা বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে, আর এটাই সবচেয়ে ভয়ের কথা। কেননা অর্থনীতির বড় শত্রু অনিশ্চয়তা।
ইউক্রেন সংকট বাংলাদেশকেও সংকটে ফেলবে। আশঙ্কা আছে রপ্তানি ও বিনিয়োগ নিয়েও। বাংলাদেশের পোশাক যায় ইউরোপে। আবার বাংলাদেশ রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে গম আমদানি করে।
সামরিক যুদ্ধের বিপরীতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলো শুরু করেছে অর্থনৈতিক যুদ্ধ। আরোপ করা হয়েছে নানা নিষেধাজ্ঞা। এতে কেবল রাশিয়া বা ইউক্রেন সংকটে পড়বে তা নয়, প্রভাব পড়ছে পুরো বিশ্বে। অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির ঝুঁকি আগে থেকেই ছিল, এখন যুক্ত হচ্ছে নিম্ন প্রবৃদ্ধি। নতুন এক মন্দার মুখে সারা বিশ্ব।
বিশ্ব অর্থনীতির মন্দা বিপদে ফেলবে বাংলাদেশকেও। মূল্যস্ফীতির চাপ সীমিত আয়ের মানুষদের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়াবে। রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিনিয়োগও কমবে। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান মনে করেন, যুদ্ধ যদি বেশি দিন চলে তাহলে বিশ্ব অর্থনীতি একটি ভয়াবহ অবস্থার দিকে চলে যাবে। বাংলাদেশও এ থেকে মুক্ত থাকবে না।
রুবিনির অনুমান
নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক নুরিয়েল রুবিনি ক্লিনটন প্রশাসনের অন্যতম অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ছিলেন। গত ডিসেম্বরে তিনি লিখেছিলেন, ২০২১–এর তুলনায় আরও কঠিন যাবে ২০২২ সাল। নতুন বছরে মূল্যস্ফীতির চাপ যাবে না, করোনাভাইরাস নিয়ে অনিশ্চয়তাও অব্যাহত থাকবে। বরং ভূরাজনৈতিক সংকট অনিশ্চয়তাকে আরও বাড়াবে। এর মধ্যে প্রধানতম সংকট হবে রাশিয়া-ইউক্রেন সম্ভাব্য সংঘাত।
রুবিনির প্রতিটি অনুমানই সঠিক হয়েছে। রাশিয়া ইউক্রেনে হামলাও করেছে। মার্কিন এই অর্থনীতিবিদ মনে করেন, এর প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারী। এমনিতেই কোভিডের সময় সরবরাহ–ব্যবস্থায় বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছিল। এখন তা আরও বাড়বে। এতে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির চাপ আরও বাড়বে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন দেশ ঋণের সুদহার বৃদ্ধিসহ যেসব ব্যবস্থা নেবে, তাতে বিনিয়োগ ও প্রবৃদ্ধি কমবে। সব মিলিয়ে বিশ্ব অর্থনীতি অতি উচ্চ মূল্যস্ফীতি-নিম্ন প্রবৃদ্ধির দিকেই যাচ্ছে। অর্থনীতির এই মন্দাবস্থাকে অর্থনীতির ভাষায় ‘স্ট্যাগফ্লেশন’ বলা হয়। এতে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ে, আবার কর্মসংস্থানও তৈরি হয় না। সংকট উভয় দিকেই।
ঠান্ডা-গরম যুদ্ধ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল মিত্রশক্তি। যুদ্ধের পরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই দুই দেশ ঠান্ডা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, যা অব্যাহত ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন পর্যন্ত। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঠান্ডা যুদ্ধ এখন চলছে চীনের সঙ্গে, মূলত বাণিজ্য নিয়ে। অন্যদিকে ইউক্রেন আক্রমণ করে ইউরোপে ‘গরম’ যুদ্ধ আবার ফিরিয়ে আনল রাশিয়া।
নুরিয়েল রুবিনি বলছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা দেশগুলো নিজেদের মতো করে একটি বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল। সেই ব্যবস্থায় চ্যালেঞ্জ জানানো শুরু করে মূলত চারটি দেশ। যেমন, চীন, রাশিয়া, ইরান ও উত্তর কোরিয়া। এ রকম এক অবস্থায় রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত কেবল এই দুই দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। তা বিশ্ব অর্থনীতি ও আর্থিক ব্যবস্থায় বড় ধরনের আঘাত হানবে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস গতকাল বুধবার এ নিয়ে যে প্রতিবেদন লিখেছে, তার শিরোনাম হচ্ছে—‘কিছুদিনের মধ্যেই, ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিকে বড় চাপে ফেলবে’।
কার কী ক্ষতি
সামরিক খাতে বড় খেলোয়াড় হলেও রাশিয়া অর্থনীতির মাঠে বড় শক্তি নয়। রাশিয়ার অর্থনীতির আকার এখন ১ দশমিক ৪৮ ট্রিলিয়ন ডলার (১০০ কোটিতে ১ বিলিয়ন, ১ হাজার বিলিয়নে ১ ট্রিলিয়ন)। তুলনা করলে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য ক্যালিফোর্নিয়া (২ দশমিক ৪৫ ট্রিলিয়ন ডলার), টেক্সাস (১ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন) এবং নিউইয়র্কের (১ দশমিক ৬৮ ট্রিলিয়ন) চেয়েও ছোট অর্থনীতি রাশিয়ার। পুরো যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির আকারই ২০ দশমিক ৯৫ ট্রিলিয়ন ডলার। মোট বৈশ্বিক উৎপাদনে রাশিয়ার অংশ এখন মাত্র ১ দশমিক ৭ শতাংশ।
তবে রাশিয়া জ্বালানি তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসে বিশ্বের অন্যতম বড় শক্তি। দেশটি বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম জ্বালানি তেল উৎপাদক। যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের পরেই রাশিয়া। প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনকারী দেশ হিসেবেও রাশিয়া দ্বিতীয় অবস্থানে, শীর্ষস্থানে যুক্তরাষ্ট্র। জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালিসহ ইউরোপ মূলত রাশিয়ার প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর অনেকখানি নির্ভরশীল। এই গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হলে ইউরোপের কলকারখানা কার্যত বন্ধ হয়ে যাবে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এই হার এখন সাড়ে ৭ শতাংশ। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত মঙ্গলবার বলেছেন, তার এখন প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে মূল্যস্ফীতির চাপ কমানো। রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সম্পর্ক খুব বেশি নয়। তারপরও যুদ্ধের প্রভাব নিয়ে শঙ্কিত তারা। বিশেষ করে সুদহার বাড়ানো হলে এর প্রভাব পড়বে সারা বিশ্বের অর্থনীতির ওপর।
হামলার শুরুতে বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলেছিলেন রাশিয়া ছোট অর্থনীতির দেশ বলে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিকে খুব বেশি প্রভাবিত করতে পারবে না। ধারণা ছিল সরাসরি যুদ্ধে সবচেয়ে ক্ষতি হবে ইউক্রেনের, আর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হবে রাশিয়া। কিন্তু অর্থনীতিবিদেরা এখন স্বীকার করছেন যে তাঁদের আগের ধারণা ছিল ভুল। আসলে এর প্রভাবে বৈশ্বিক অর্থনীতিই ক্ষতিগ্রস্ত হবে, মন্দা দীর্ঘস্থায়ী হবে।
অর্থনীতিতে নিষেধাজ্ঞার অভিজ্ঞতা রাশিয়ার জন্য নতুন কিছু না। নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই ভ্লাদিমির পুতিন ৬৩০ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত গড়ে তুলেছিলেন। এই অর্থ তাদের দুই বছরের আমদানি ব্যয়ের সমান। সম্ভবত, নিষেধাজ্ঞার মধ্যে টিকে থাকতেই পুতিন মজুত বাড়িয়েছেন। বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা থাকলেও লেনদেনে নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়েছে দেশটির বড় ব্যাংকগুলো। বিশেষ করে স্বয়ংক্রিয় লেনদেনের পদ্ধতি বা সুইফট-এর নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার অর্থনীতির জন্য বড় আঘাত। ফলে সংকটে পড়ে গেছে রাশিয়ার অর্থনীতি। বেড়েছে সুদের হার। বন্ধ রাখা হয়েছে শেয়ারবাজার। রুবলের দর পতন ঠেকাতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সব মিলিয়ে বেশ ঝামেলাতেই আছেন পুতিন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অন্য দেশ থেকে কোনো সামরিক সহায়তা পাচ্ছেন না বলে আক্ষেপ করেছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো সরাসরি যুদ্ধের পরিবর্তে অর্থনীতির মাঠেই লড়াই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও বিশেষজ্ঞরা বারবার বলছেন, সামরিক যুদ্ধের বিপরীতে অর্থনৈতিক যুদ্ধে কেবল রাশিয়া নয়, সংকটে পড়ছে সারা বিশ্ব।
কী বাড়বে, কী কমবে
রাশিয়ার বিরুদ্ধে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা জোরদার করা হলেও সব পক্ষই জ্বালানি নিষেধাজ্ঞাকে সচেতনভাবেই এড়িয়ে যাচ্ছে। কারণ, রাশিয়া জ্বালানি তেল ও গ্যাস রপ্তানিতে অন্যতম শীর্ষ দেশ। বিশেষ করে প্রাকৃতিক গ্যাসের ক্ষেত্রে পুরো ইউরোপ প্রায় রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল। তবে সরবরাহ অব্যাহত রাখার পাশাপাশি মূল্য নিয়ে দেখা দিয়েছে সংকট। সব ধরনের সরবরাহ–ব্যবস্থা এমনিতেই করোনার সময় থেকেই ভঙ্গুর অবস্থায় আছে। বিশ্ববাজারে তেল ও গ্যাসের দাম এরই মধ্যে বেড়ে গেছে।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ৩৬টি দেশের সঙ্গে এখন রাশিয়ার বিমান যোগাযোগ বন্ধ। এতে পণ্য পরিবহনও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অনেক জাহাজকে ঘুরে যেতে হবে। ফলে কনটেইনার পরিবহন ব্যয়ও বাড়বে। এমনকি বেড়ে যাবে বিমানে পণ্য পরিবহন ব্যয়ও। পরিবহন ব্যয় মূল্যস্ফীতিকে আরও উসকে দেবে।
আশঙ্কা আছে খাদ্যশস্য ও বেশ কিছু ধাতব পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়েও। বিশেষ করে রাশিয়া ও ইউক্রেন বিশ্বের অন্যতম গম ও ভুট্টা উৎপাদন ও রপ্তানিকারক। গমের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো অনেকখানি নির্ভর করে রাশিয়া ও ইউক্রেনের ওপর। আবার প্যালাডিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম ও নিকেলের জন্যও অনেক দেশ রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল। এসব ধাতব মুঠোফোন থেকে শুরু গাড়ি তৈরির জন্য অত্যাবশ্যকীয় পণ্য।
সুতরাং বাড়বে সবকিছুই, কমবে কেবল আস্থা ও জীবনযাত্রার মান।
আশঙ্কা সাইবার আক্রমণের
সবারই লক্ষ্য এখন রাশিয়াকে একঘরে করা। রাশিয়া যাতে কোনো ধরনের আন্তর্জাতিক লেনদেন সম্পন্ন করতে না পারে, সেই চেষ্টাই সব দেশ করছে। এতে রাশিয়ার ব্যাংকগুলোর সঙ্গে যাদের ব্যবসা রয়েছে, সব পক্ষই বিপদে পড়েছে। বিশেষ করে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো। আবার যুদ্ধের কারণে ইউক্রেন থেকে নাগরিকেরা অন্য দেশে চলে যাচ্ছে। এতে তিন প্রতিবেশী পোল্যান্ড, রোমানিয়া ও মলদোভার রাষ্ট্রীয় ব্যয় বাড়ছে। তবে আর্থিক লেনদেন বন্ধ করায় আরেকটি আশঙ্কার মধ্যে পড়েছে সারা বিশ্ব। আর তা হচ্ছে সাইবার আক্রমণ। এ বিষয়ে রাশানরা বেশ দক্ষ। সুতরাং সবাই এ ক্ষেত্রেও সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। রয়টার্স গতকাল বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকগুলোকে সতর্ক থাকার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তবে উন্নত দেশগুলো সতর্ক থাকলেও আশঙ্কা অন্য দেশগুলো নিয়ে, যাদের সাইবার নিরাপত্তাব্যবস্থা ততটা উন্নত নয়। বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই সাইবার হামলায় বৈদেশিক মুদ্রার মজুত একবার হারিয়েছে। সুতরাং সব দেশকেই সতর্ক থাকার জন্য বলা হচ্ছে।
বাড়বে সামরিক ব্যয়
ঠান্ডা যুদ্ধের অবসানের পর অনেক দেশই সামরিক ব্যয় ধীরে ধীরে কমিয়ে দিচ্ছিল। রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পরে অনেক দেশ তাদের সামরিক ব্যয় বাড়াবে বলেই মনে করা হচ্ছে। জার্মানি এরই মধ্যে তাদের সামরিক বাজেট ২ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের সাবেক প্রধান জেসন ফারমান এ নিয়ে লিখেছেন, ‘সন্দেহ নেই এখন থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশ সামরিক বাজেট বাড়িয়ে দেবে। এতে প্রবৃদ্ধি হয়তো কমবে না, তবে সাধারণ মানুষের ভালো থাকা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কেননা, সামরিক বাজেটের এই বর্ধিত ব্যয়ের ফলে বিনিয়োগ কমবে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অবকাঠামোসহ অন্যান্য সামাজিক খাতে।
বাংলাদেশের কী হবে
বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতির হার এখন ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ। তবে সরকারি এই তথ্যের ওপর আস্থা কম। অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন, বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির হার আরও বেশি। ইউক্রেন সংকট বাংলাদেশকেও সংকটে ফেলবে। আশঙ্কা আছে রপ্তানি ও বিনিয়োগ নিয়েও। বাংলাদেশের পোশাক যায় ইউরোপে। আবার বাংলাদেশ রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে গম আমদানি করে।
গবেষণা সংস্থা সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, যুদ্ধের স্থায়িত্ব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এর ওপরই নির্ভর করছে অনেক কিছু। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি বেশ আশঙ্কাজনক। জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে হয়েছে ব্যারেলপ্রতি ১১৩ ডলার। বাড়ছে গ্যাসের দামও। এর প্রভাবে বাড়বে সারের দাম। বোরো ফসলের ক্ষেত্রে সারের দাম যদি বাড়ে, তাহলে তা ভয়াবহ সংকট হিসেবেই দেখা দেবে। ভর্তুকি সামাল দেওয়া কঠিন হবে। পরের শঙ্কাটি ব্যাংকিং লেনদেনে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা–সংক্রান্ত। এর প্রভাব পড়তে পারে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে। এ যুদ্ধের কারণে ইউরোপে চাহিদা কমে গেলে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও সহায়তা—সব সম্পর্কের ক্ষেত্রেই বিপদে পড়বে বাংলাদেশ। এমনিতেই চাপের মধ্যে ছিল দেশ। এর সঙ্গে এখন যুক্ত হলো যুদ্ধ। এই যুদ্ধ সেই চাপকেই আরও ঘনীভূত করবে।