যেভাবে রক্ষা পেল ৮০০ কোটি টাকার রপ্তানি পণ্য

দুর্ঘটনা কবলিত জাহাজ এমভি হাইয়ান সিটির একাংশ।
সংগৃহীত

দুর্ঘটনায় পড়ে প্রায় ডুবতে বসেছিল জাহাজটি। এক পাশে পানি ঢুকে সাত ডিগ্রি কাত হয়ে গিয়েছিল জাহাজটি। তাতে ঝড়ে বা প্রবল ঢেউয়ে যেকোনো সময় ডুবে যাওয়ার শঙ্কা ছিল। এমন অবস্থায় জাহাজটিকে বিশেষ ব্যবস্থায় বঙ্গোপসাগর থেকে উদ্ধার করে জেটিতে নিয়ে এসেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। বুধবার ছয়টি বিশেষ জলযানের সহযোগিতায় বেসরকারি কর্ণফুলী ড্রাই ডক জেটিতে ভেড়ানো হয় দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজটি।  

জাহাজটিতে ১ হাজার ১৫৬ কনটেইনার রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৭০০ একক কনটেইনারে রপ্তানি পণ্য রয়েছে। রপ্তানি পণ্যের সিংহভাগই পোশাকশিল্পের।

বন্দরের সাহসী এ উদ্যোগে শুধু জাহাজটিই রক্ষা পায়নি, প্রায় ৮০০ কোটি টাকার রপ্তানি পণ্যও রক্ষা পেয়েছে। আবার জাহাজটি ডুবে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ায় বন্দরের জলসীমাও নিরাপদ হয়েছে। ভিয়েতনামের একটি কোম্পানির মালিকানাধীন জাহাজটির নাম এমভি হাইয়ান সিটি। আর জাহাজটিতে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্য ছিল।

গত ১৪ এপ্রিল রপ্তানি পণ্যবোঝাই কনটেইনার নিয়ে সিঙ্গাপুরে যাচ্ছিল জাহাজটি। যাত্রাপথে বঙ্গোপসাগরের কুতুবদিয়ার কাছে একটি তেলবাহী ট্যাংকারের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় এমভি হাইয়ান সিটি জাহাজটির। এতে একটি খালি কনটেইনার জাহাজ থেকে সাগরে পড়ে যায়। জাহাজটির পেছনের অংশ ফুটো হয়ে পানি ঢুকে প্রায় সাত ডিগ্রি কাত হয়ে পড়ে। দুমড়েমুচড়ে যায় জাহাজটির এক পাশে থাকা কনটেইনার।

দুর্ঘটনার পর জাহাজটি চলাচলের সক্ষমতা অর্জন না করায় এবং ক্ষতিপূরণের বিষয়ে সমঝোতা না হওয়ায় বন্দর ত্যাগের অনুমতি দেওয়া হয়নি। ডুবে যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকা জাহাজটিকে উদ্ধার করতে চট্টগ্রাম বন্দরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, জাহাজের মালিক প্রতিনিধি, স্থানীয় এজেন্ট, উদ্ধারকারী সংস্থা, জাহাজের বিমাকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ডসহ সব সংস্থার প্রতিনিধিকে নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করেন বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান। এরপরই জাহাজটিকে বিশেষ ব্যবস্থায় জেটিতে ভেড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) সচিব মো. ওমর ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, জাহাজটি উদ্ধার করায় ৮০০ কোটি টাকার মূল্যের রপ্তানি পণ্য যেমন রক্ষা পেয়েছে, তেমনি জাহাজ ডুবে গেলে স্বাভাবিক নৌচলাচলে যে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হতো, তা থেকে বন্দর রক্ষা পেয়েছে। রপ্তানিকারকেরাও আর্থিক ক্ষতি থেকে রক্ষা পেয়েছেন। এ ধরনের উদ্ধার কার্যক্রম আগে ঘটেনি।

গত ১৪ এপ্রিল রপ্তানি পণ্যবোঝাই কনটেইনার নিয়ে সিঙ্গাপুরে যাচ্ছিল জাহাজটি। যাত্রাপথে বঙ্গোপসাগরের কুতুবদিয়ার কাছে একটি তেলবাহী ট্যাংকারের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় এমভি হাইয়ান সিটি জাহাজটির। এতে একটি খালি কনটেইনার জাহাজ থেকে সাগরে পড়ে যায়।

বন্দর জেটিতে এত ঝুঁকিপূর্ণ জাহাজ ভেড়ানোর সুযোগ নেই। সে জন্য বেছে নেওয়া হয় কর্ণফুলী ড্রাই ডক জেটি। জাহাজটি ভেড়ানোর জন্য ওই জেটির সামনে খননকাজ করে গভীরতা বাড়ানো হয়। বুধবার বন্দরের চারটি ও প্রান্তিক বেঙ্গল সার্ভিসের দুটি সাহায্যকারী জলযানের সহযোগিতায় ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা জাহাজটি কর্ণফুলী ড্রাই ডক জেটিতে ভেড়ানো হয়।
কর্ণফুলী ড্রাই ডকের উপদেষ্টা খায়রুল মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন, জাহাজটি জেটিতে ভেড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় খননকাজ করা হয়েছে। এখন জাহাজটি থেকে রপ্তানি পণ্য খালাস করে মেরামত করা হবে। এরপর চলাচলের উপযোগী হলে নতুন করে আবার রপ্তানি পণ্য বোঝাই করা হবে।

জাহাজটি উদ্ধার করা না গেলে সিঙ্গাপুরে নেওয়া সম্ভব ছিল না। আবার ডুবে যাওয়ার শঙ্কা ছিল। বন্দরের সাহসী পদক্ষেপে জাহাজ ও রপ্তানি পণ্য—দুটিই রক্ষা পেয়েছে।
আহসান ইকবাল চৌধুরী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক,ইন্টারমোডাল প্রাইভেট লিমিটেড

জাহাজটিতে ১ হাজার ১৫৬ কনটেইনার রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৭০০ একক কনটেইনারে রপ্তানি পণ্য রয়েছে। রপ্তানি পণ্যের সিংহভাগই পোশাকশিল্পের। দুর্ঘটনার কারণে নির্ধারিত সময়ে পণ্য রপ্তানি না হওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়ার শঙ্কা আছে রপ্তানিকারকদের।
জানতে চাইলে তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বন্দর জাহাজটি জেটিতে ভেড়ানোর ব্যবস্থা করে খুবই ভালো দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। রপ্তানি পণ্যও রক্ষা পেয়েছে। তিনি বলেন, জাহাজটিতে রপ্তানি হওয়া পণ্য আমরা রপ্তানিকারকের প্রতিনিধির হাতে কনটেইনার ডিপোতেই বুঝিয়ে দিয়েছি। তাঁদের হাতে তুলে দেওয়ায় রপ্তানির অর্থ ফেরত পেতে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’

জাহাজটি ডুবে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ায় বন্দরের জলসীমাও নিরাপদ হয়েছে। ভিয়েতনামের একটি কোম্পানির মালিকানাধীন জাহাজটির নাম এমভি হাইয়ান সিটি। আর জাহাজটিতে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্য ছিল।

জাহাজটির স্থানীয় প্রতিনিধি ছিল কন্টিনেন্টাল গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইন্টারমোডাল প্রাইভেট লিমিটেড। গ্রুপটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহসান ইকবাল চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, জাহাজটি উদ্ধার করা না গেলে সিঙ্গাপুরে নেওয়া সম্ভব ছিল না। আবার ডুবে যাওয়ার শঙ্কা ছিল। বন্দরের সাহসী পদক্ষেপে জাহাজ ও রপ্তানি পণ্য—দুটিই রক্ষা পেয়েছে।