ফসল উৎপাদনের মৌসুম ছাড়া বছরের অন্যান্য সময়ে গ্রামীণ জনগণের অর্থনৈতিক কার্যক্রম কার্যত বন্ধ থাকে। এতে গ্রামীণ অর্থনীতিতে মৌসুমি দারিদ্র্য সৃষ্টি হয়। এ সময় গ্রামীণ মানুষের খাদ্য ক্রয় ও গ্রহণের প্রবণতা কমে যায়। ফলে দেশের জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ অপুষ্টির মধ্যে বেড়ে ওঠে। মৌসুমি দারিদ্র্য নিয়ে এক গণবক্তৃতায় এসব কথা বলেন যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আহমেদ মুশফিক মোবারক।
গতকাল রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের মুজাফ্ফর আহমেদ চৌধুরী অডিটরিয়ামে এ বক্তৃতা দেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সংগঠন ইকোনমিকস স্টাডি সেন্টার (ইএসসি) এই অনুষ্ঠান আয়োজন করে। সহযোগী হিসেবে ছিল নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ইয়াং ইকোনমিস্টস ফোরাম।
বর্তমানে বিশ্বের ৫০ থেকে ১০০ কোটি মানুষ মৌসুমি দারিদ্র্যে পতিত—এই তথ্য দিয়ে আহমেদ মুশফিক বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই সংখ্যা দিন দিন আরও বাড়ছে। শুধু গত কয়েক বছরে নয়, ঐতিহাসিকভাবেই বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মৌসুমি দারিদ্র্য সৃষ্টি হয়। এই সময় শিশুদের খাবার গ্রহণের পরিমাণ ও মান কমে যায়। ফলে তাদের বিকাশ ব্যাহত হয়।
অধ্যাপক মুশফিক বলেন, অর্থনৈতিক দুরবস্থা ও অপুষ্টি ছাড়াও মৌসুমি দারিদ্র্যের আরও নেতিবাচক দিক আছে, দারিদ্র্যের কারণে সামাজিক অবক্ষয় বেড়ে যায়। কারণ, ক্ষুধার্ত মানুষ মরিয়া হয়ে যেকোনো কিছু করতে পারে। উপার্জন কমে যাওয়ায় পারিবারিক সহিংসতা বৃদ্ধি পায়, শান্তি নষ্ট হয়। আবার কাজের খোঁজে অন্য জায়গায় যাওয়ার ফলে বিভিন্ন রোগ সংক্রমণের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
মৌসুমি দারিদ্র্যের সমাধান নিয়ে নেপাল ও ইন্দোনেশিয়ার গবেষকদের সঙ্গে কাজ করেছেন অর্থনীতিবিদ মুশফিক। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি বলেন, উৎপাদন মৌসুমের পর শ্রমবাজারের অস্থায়ী স্থানান্তরের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে। গ্রামীণ মানুষদের সাময়িকভাবে পৌর অঞ্চলে স্থানান্তর করা যায়। উৎপাদন মৌসুম ছাড়া অন্য সময় খাদ্যের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য গ্রামীণ পরিবারগুলোকে অত্যন্ত অল্প সুদে ঋণ প্রদানের পরামর্শ দেন তিনি। ফসল তোলার পর সেই ঋণ পরিশোধ করবেন এই মানুষেরা।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ফাহাদ খলিল, ইএসসির কো–মডারেটর অধ্যাপক রুমানা হক। ঢাকায় অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসের প্রতিনিধি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।