মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবা (এমএফএস) নেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে পুরুষের তুলনায় নারীরা বেশ পিছিয়ে আছেন। দেশে ৫৩ শতাংশ পুরুষ যেখানে এমএফএসের মাধ্যমে অর্থ লেনদেন করেন, সেখানে মাত্র ২৭ শতাংশ নারী এই সেবা নেন। আবার এসব নারীর মধ্যে মাত্র ৬ শতাংশের এমএফএস নিবন্ধিত হিসাব আছে। পুরুষদের ক্ষেত্রে এই হার ১৯ শতাংশ।
বিশ্বব্যাংক গ্রুপের সদস্য প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের এক যৌথ জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। জরিপটি পরিচালনায় সহযোগিতা করেছে ‘বিশ্বব্যাংক গ্রুপের আমব্রেলা ফ্যাসিলিটি ফর ইকুয়ালিটি’ কর্মসূচি। রাজধানীর একটি হোটেলে গতকাল বুধবার ‘ক্লোজিং দ্য জেন্ডার গ্যাপ ইন মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে এই জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৩ সালের অক্টোবরে ৬ শতাংশ পুরুষের নিবন্ধিত এমএফএস হিসাব ছিল। সেটি বেড়ে পরের বছরের আগস্টে ৮ শতাংশ ও ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে ১৩ শতাংশে উন্নীত হয়। অন্যদিকে ২০১৩ সালের অক্টোবরে ১ শতাংশ নারীর নিবন্ধিত এমএফএস হিসাব ছিল, যা পরের বছরের আগস্টে ২ শতাংশে উন্নীত হয়। তার পরের এক বছরে তা দ্বিগুণ হয়। বর্তমানে ৬ শতাংশ নারীর নিবন্ধিত এমএফএস হিসাব আছে। সেবাটি সম্পর্কে নারীদের জ্ঞানের অভাব আছে। ১০ জনের মধ্যে ৯ জন নারী জানেন না কীভাবে এমএফএস হিসাবের পিন পরিবর্তন করা যায়। আবার ১০ জনের ৮ জনই সেবাটির খরচ ও ফি সম্পর্কে তেমন কিছু জানেন না।
পুরুষের তুলনায় নারীদের মধ্যে এমএফএস ব্যবহারের প্রবণতা কম হওয়ার কারণগুলো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে সেবাটির প্রয়োজন না থাকা, সচেতনতার অভাব, এই সেবা ব্যবহারের পদ্ধতি না জানা, উচ্চ ফি, সেবার ওপর আস্থা না থাকা অন্যতম। এ ছাড়া পল্লি এলাকায় এজেন্ট দূর-দূরান্তে থাকার কারণে মোবাইলে আর্থিক সেবা নিতে নারীরা সমস্যায় পড়েন। তবে নারীদের এমএফএস ব্যবহারের হার যেভাবে বাড়ছে তাতে ধারণা করা হচ্ছে, ২০২০ সাল নাগাদ দেশের ৩৩ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক নারী সেবাটি নেবেন।
শহর ও গ্রামের ৪ হাজার নারীর ওপর জরিপ চালিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ২ হাজার নারী এমএফএস নিয়ে থাকেন। বাকিরা সেবাটি নেন না। এ ছাড়া ৩০ জন নারী এমএফএস এজেন্টের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। ২১টি দলগত আলোচনাও করা হয়, যাতে ১৫৫ জন নারী ও পুরুষ অংশ নেন।
জরিপে অংশ নেওয়া যেসব নারী এমএফএস ব্যবহার করেন, তাঁরা জানিয়েছেন কী কী কাজে সেবাটি নেন। ৯৫ শতাংশ নারী টাকা গ্রহণে সেবাটি নিয়ে থাকেন। এ ছাড়া ৮১ শতাংশ নারী টাকা পাঠাতে, ১৩ শতাংশ নারী মোবাইল রিচার্জ, ৯ শতাংশ নারী সঞ্চয়, ৩ শতাংশ নারী গ্যাস-বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ, ২ শতাংশ নারী ক্ষুদ্র ঋণের লেনদেন এমএফএসের মাধ্যমে করে থাকেন বলে জানান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান। আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী, ঢাকায় নিযুক্ত রয়েল নরওয়েজিয়ান দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত সিসেল ব্লেকেন।
প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, অর্থনৈতিক খাতে ডিজিটাল বিবর্তনের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে সরকার অক্লান্ত পরিশ্রম করছে।
প্যানেল আলোচনায় বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপালে আইএফসির কান্ট্রি ম্যানেজার ওয়েন্ড ওয়ার্নার বলেন, অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তির ফলে সম্পদে নারীর অধিগমন ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি পাবে।