মানসিক সমস্যায় ভুগছেন উদ্ধারকর্মী ও শ্রমিকেরা
সাভারের রানা প্লাজা ধস-পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট ৮ সেপ্টেম্বর একটি প্রতিবেদন ছেপেছে।সেটি ঈষৎ সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হলো
সাভারের রানা প্লাজার একটি কারখানায় সেলাই মেশিন চালাতেন রাজীবুল রহমান। ভবনটি যখন ধসে পড়ল অন্য অনেক শ্রমিকের মতো তিনিও তাতে চাপা পড়েন। অবশ্য একজন উদ্ধারকর্মীর সহায়তায় তিনি নিজেকে মুক্ত করেন।
ঘটনার শুরু সেখান থেকেই। কিছু দিন আগে এক রাতে নিজের ঘরে শোয়ার সময় নিজের হাত কেটে ফেলতে শুরু করেন রাজীবুল। তাঁর মা জানান, খাবার খাইয়ে দিতে গিয়ে একবার ছেলের হাতে মারও খেতে হয়েছে তাঁকে।
সাভারের রানা প্লাজা ধসের ঘটনার সাড়ে চার মাস পরও মানসিকভাবে সুস্থ হতে পারেননি ওই ভবনে আটকে পড়া শ্রমিকেরা। মানসিকভাবে সেই দুঃসহ ঘটনা এখনো বয়ে বেড়াচ্ছেন তাঁরা। সে কারণে নানা ধরনের মানসিক সমস্যায় দিন অতিবাহিত করতে হচ্ছে তাঁদের।
একই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে এসব শ্রমিকের উদ্ধার কাজে সহায়তাকারীদের, যাঁরা নিজের জীবন বাজি রেখে দিনের পর দিন উদ্ধার কাজ করেছেন।
বেসরকারি সংস্থা সাজিদা ফাউন্ডেশনের পরামর্শক আবদুস সবুর বলেন, রানা প্লাজার ভবন ধসের পর সবাই শারীরিকভাবে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিয়েই ব্যস্ত। কিন্তু কেউই মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিয়ে কথা বলছেন না।
সাভারে পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসন কেন্দ্রের (সিআরপি) চিকিৎসক হোসেন মেহেদী জানান, শারীরিকভাবে আহত ব্যক্তিদের সিআরপিতে সর্বাত্মকভাবে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু প্রশিক্ষিত মানসিক স্বাস্থ্যকর্মী না থাকায় মানসিকভাবে অসুস্থ শ্রমিকদের সামান্য কিছু পরামর্শ দিয়েই ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।
আবার এই মানসিক সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য যে চিকিৎসা প্রয়োজন বেশির ভাগই তা নিতে পারছেন না। সরকারের
পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা থাকলেও তা আলোর মুখ দেখেনি।
কয়েকটি ঘটনা: ভবন ধসের ঘটনায় ঠিক কতজনকে উদ্ধার করেছেন তা মনে করতে না পারলেও কতজনের হাত-পা কেটে বের হতে সহায়তা করেছিলেন তা ভালোভাবেই মনে আছে রফিকুল ইসলামের। ১৮ দিন উদ্ধার কাজের সঙ্গে যুক্ত থেকেই নিজের মানসিক ভারসাম্যই খানিকটা হারিয়ে ফেলেছেন তিনি।
আগের অনেক ঘটনাই এখন রফিকুলের মনে করতে কষ্ট হয়। বেশির ভাগ সময়ই তিনি একা থাকেন। তিনি বলেন, ‘আমি এখনো তাদের (ভবনে চাপা পড়া শ্রমিকদের) চিৎকার শুনতে পাই। তারা সাহায্য পাওয়ার আশায় আমাকে ডাকছে।’
চেহারা দেখে যখন নিহত শ্রমিকদের শনাক্ত করা যাচ্ছিল না তখন নিহত ব্যক্তিদের মুঠোফোন, হাতের আংটিসহ সঙ্গে থাকা বিভিন্ন জিনিস খুঁজে বের করে অপেক্ষমাণ স্বজনদের দেখানোর কাজটি করেছিলেন খণ্ডকালীন শিক্ষক ফাইজুল মুহিদসহ কয়েকজন। অনেক ক্ষেত্রেই পচা-গলিত লাশ থেকে সেগুলো সরিয়ে নিতে হয়েছিল তাঁকে। মুহিদ এখনো প্রায়ই তাঁর বন্ধুদের বলেন, ‘আমি কি মানসিক বিকারগ্রস্ত (সাইকো) হয়ে যাচ্ছি।’
ক্ষতিপূরণের খবর নেই: শ্রমিক ও উদ্ধারকর্মীদের অনেকেই প্রাথমিকভাবে মানসিক চিকিৎসা নেওয়ার কোনো চেষ্টাই করেননি। এখন চাইছেন। কিন্তু ব্যয় বেশি হওয়ায় এ চিকিৎসা নেওয়ার সাহস করছেন না।
মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য প্রথম দিকে একটি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছিল সরকার। তা সেখানেই আটকে আছে।
ঢাকা জেলা প্রশাসক ইউসুফ হারুন বলেন, ‘মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের দায়িত্ব যে কেউ নিচ্ছে না, এটা সত্যি। অবশ্য তাদের কেউ আমাদের কাছে এ বিষয়টি নিয়ে আসছেও না।’ তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি দেখার আশ্বাস দিয়েছিলেন। তবে এখন কী অবস্থা তা তার জানা নেই।