বিনিয়োগের আকর্ষণীয় এক কর্মসূচি ‘পরিবার সঞ্চয়পত্র’
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের যে চারটি সঞ্চয় কর্মসূচি চালু রয়েছে, তার মধ্যে পাঁচ বছর মেয়াদি ‘পরিবার সঞ্চয়পত্র’ই গ্রাহকদের কাছে বেশি আকর্ষণীয়। গ্রাহকেরা এটিতেই সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করে থাকেন। কারণও আছে। সরকার পেনশনারদের জন্য সবচেয়ে বেশি সুদ বা মুনাফা দিলেও তার পরই দেয় পরিবার সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের। মেয়াদ শেষে মুনাফা পাওয়া যায় ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ হারে।
তবে কম মেয়াদেও এ সঞ্চয়পত্র ভাঙানো যায়। তখন অবশ্য মুনাফা একটু কম মেলে। হিসাবটি হচ্ছে, টাকা বেশি দিন খাটলে মুনাফাও পাওয়া যাবে বেশি। কম সময়ের জন্য টাকা খাটলে মুনাফাও কম। পরিবার সঞ্চয়পত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এর মুনাফা মাসিক ভিত্তিতে দেওয়া হয়। তবে এ সঞ্চয়পত্র ব্যাংকঋণের জন্য জামানত বা আমানত হিসেবে ব্যবহার করা যায় না। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের ২০২০ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে যা আয় হয়, তার ২৫ শতাংশই আসে পরিবার সঞ্চয়পত্র থেকে।
১০ হাজার, ২০ হাজার, ৫০ হাজার, ১ লাখ, ২ লাখ, ৫ লাখ এবং ১০ লাখ টাকা মূল্যমানের পরিবার সঞ্চয়পত্র রয়েছে। এগুলো কেনা যায় জাতীয় সঞ্চয় ব্যুরো, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সব তফসিলি ব্যাংক এবং ডাকঘর থেকে। এগুলো একই জায়গা থেকে ভাঙানোও যায়।
একজন ব্যক্তি একক নামে ৫০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন। তবে পরিবার সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন ৪৫ লাখ টাকার। একক নামের ক্রয়সীমার মধ্যে বাকি ৫ লাখ টাকার অন্য সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন ওই গ্রাহক।
১৯৯৭ সালে এ পরিবার সঞ্চয়পত্র চালু করা হলেও ২০০২ সালে তা বন্ধ করে দেয় সরকার। ২০১০ সাল থেকে আবার চালু করা হয়। বর্তমানে এ সঞ্চয়পত্রে যে হারে মুনাফা দেওয়া হয়, তা শুরু হয়েছে ২০১৫ সাল থেকে।
১৮ বছর বয়স হলেই কেনা যায়
পরিবার সঞ্চয়পত্র সবাই কিনতে পারেন না। ১৮ বছর ও তার চেয়ে বেশি বয়সের যেকোনো বাংলাদেশি নারী, যেকোনো বাংলাদেশি শারীরিক প্রতিবন্ধী নারী ও পুরুষ এবং ৬৫ বছর ও তার চেয়ে বেশি বয়সী বাংলাদেশি নারী ও পুরুষেরা কিনতে পারেন পরিবার সঞ্চয়পত্র। এ সঞ্চয়পত্র কেনার সময় দুই কপি ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধন সনদ অথবা পাসপোর্টের ফটোকপি থাকতে হয়। দুই কপি করে পাসপোর্ট আকারের ছবি দিতে হয় নমিনি বা নমিনিদের।
বার্ষিক মুনাফার হার
পরিবার সঞ্চয়পত্রের পূর্ণ মেয়াদ শেষে মুনাফার হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ। তবে বছরভিত্তিক মুনাফার হার কম। যেমন প্রথম বছর শেষে মুনাফার হার ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ, দ্বিতীয় বছর শেষে ১০ শতাংশ, তৃতীয় বছর শেষে ১০ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং চতুর্থ বছর শেষে ১১ শতাংশ।
১ লাখ টাকায় প্রতি মাসে মুনাফা ৯৬০ টাকা। কিন্তু কেউ যদি আগেই ভেঙে ফেলতে চান, সে ক্ষেত্রে যত বছরের মধ্যে তা ভাঙাবেন, মুনাফা পাবেন সে অনুযায়ীই।
আছে মাসিক মুনাফাও
পরিবার সঞ্চয়পত্রে মুনাফা নিতে হয় মাসিক ভিত্তিতে। মূল্যমান অনুযায়ী মুনাফার পরিমাণও নির্ধারণ করা আছে। যেমন ১০ হাজার টাকায় ৯৬ টাকা, ২০ হাজার টাকায় ১৯২ টাকা, ৫০ হাজার টাকায় ৪৮০ টাকা, ১ লাখ টাকায় ৯৬০ টাকা, ২ লাখ টাকায় ১ হাজার ৯২০ টাকা এবং ৫ লাখ টাকায় ৪ হাজার ৮০০ টাকা। এ থেকে বাদ যাবে ৫ শতাংশ উৎসে কর। ১০ লাখ টাকায় মুনাফা পাওয়া যাবে ৯ হাজার ৬০০ টাকা, কিন্তু এ থেকে বাদ যাবে ১০ শতাংশ উৎসে কর।
আগে ভাঙানোর সুযোগ
পরিবার সঞ্চয়পত্র থেকে মাসিক মুনাফা নেওয়ার পর পাঁচ বছর শেষে মূল টাকা ফেরত পাওয়া যায়। মেয়াদপূর্তির আগে নগদায়ন করলে মাসিক মুনাফা কর্তন করে বাকি অর্থ ফেরত দেয় সরকার। যেমন এক লাখ টাকার পরিবার সঞ্চয়পত্র কিনে মেয়াদপূর্তির কত আগে তা ভাঙালে কত টাকা ফেরত পাওয়া যাবে, তা ঠিক করা আছে। যেমন প্রথম বছর চলাকালে এক লাখ টাকা ভাঙালে কোনো মুনাফা পাওয়া যাবে না।
তবে দ্বিতীয় বছর চলাকালে মুনাফাসহ পাওয়া যাবে ১ লাখ ৯ হাজার ৫০০ টাকা। এভাবে তৃতীয় বছর চলাকালে ভাঙালে ১ লাখ ২০ হাজার, চতুর্থ বছর চলাকালে ১ লাখ ৩১ হাজার ৫০০ এবং পঞ্চম বছর চলাকালে ১ লাখ ৪৪ হাজার টাকা পাওয়া যাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গবেষণা
বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৯ সালের জুলাইয়ে সঞ্চয়পত্রের ওপর একটি জরিপ প্রতিবেদন করেছিল। তাতে বলা হয়, পরিবার সঞ্চয়পত্রের ক্রেতাদের মধ্যে ৭৯ শতাংশই নারী। আবার এই নারীদের ৬৬ শতাংশই হলেন গৃহবধূ। ৫৭ শতাংশ নারী জানান, তাঁরা প্রধানত স্বামী কিংবা মা-বাবার কাছ থেকেই টাকাপয়সা পেয়ে থাকেন। জরিপে অংশ নেওয়া ৫২ শতাংশ উত্তরদাতা জানান, জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর, ডাকঘর ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ ব্যাংকে সঞ্চয়পত্র বেশি সহজলভ্য হওয়ায় তাঁরা সেখানেই যান।