শাহীন আহমেদ ও গোলাম মোস্তফা একটি বেসরকারি ব্যাংকে সমান বেতনে চাকরি করেন। বছর শেষে তাঁদের দুজনেরই করযোগ্য আয় ১০ লাখ টাকা। গত নভেম্বর মাসে দুজনেই বার্ষিক আয়কর রিটার্ন দিলেন। কয়েক দিন আগে আলাপচারিতায় শাহীন আহমেদ জানতে পারলেন, সমপরিমাণ বেতন হলেও গোলাম মোস্তফা তাঁর চেয়ে অনেক কম কর দিয়েছেন। শাহীন আহমেদকে ৮০ হাজার টাকা কর দিতে হয়েছে। আর গোলাম মোস্তফা দিয়েছেন মাত্র সাড়ে ৪২ হাজার টাকা। এটা শুনে তো শাহীন আহমেদের চোখ ছানাবড়া। কীভাবে সম্ভব?
একটু কৌশলী না হওয়ার কারণে শাহীন আহমেদকে বাড়তি করের বোঝা বইতে হলো। গোলাম মোস্তফা কৌশলী হয়ে খরচ বাঁচিয়ে আয়ের ২৫ শতাংশের মতো টাকা দিয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র কিনেছেন। তিনি আড়াই লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কেনেন। সঞ্চয়পত্রের মুনাফাও পেয়েছেন, আবার করও কম দিয়েছেন। আর শাহীন আহমেদ এই সুযোগ নেননি। ফলে বছর শেষে তাঁকে সাড়ে ৩৭ হাজার টাকা বেশি দিতে হলো।
বিনিয়োগ করলে কর ছাড় পাওয়া যায়। অর্থবছর পার হওয়ার পর জুলাই থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত বার্ষিক আয়কর বিবরণী জমা দেওয়া যায়। ওই সময়ে এসব তথ্য জেনে খুব বেশি লাভ নেই। কারণ, করের হিসাব-নিকাশ হবে অর্থবছরের সঙ্গে মিল রেখে জুলাই-জুনের ভিত্তিতে। তাই বিনিয়োগ করে যাঁরা আগামী রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় কর ছাড় পেতে চান, তাঁরা এখনই পরিকল্পনা করে ফেলুন। আগামী জুন মাসের আগেই বিনিয়োগ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করুন। এ জন্য হাতে সময় আছে মাত্র পাঁচ মাস।
এবার দেখা যাক কীভাবে কর ছাড় নেবেন। একজন করদাতা তাঁর পুরো বছরের আয়ের ২৫ শতাংশ বা সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারেন। এমন করদাতার বার্ষিক আয় ১৫ লাখ টাকার কম হলে মোট বিনিয়োগের বিপরীতে ১৫ শতাংশ কর ছাড় মিলবে। আর বার্ষিক আয় ১৫ লাখ টাকার বেশি হলে ১০ শতাংশ হারে কর ছাড় পাওয়া যাবে।
কর ছাড় পেতে আপনি যেকোনো খাতে বিনিয়োগ করতে পারবেন না। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর ছাড় নেওয়ার জন্য নয়টি খাত ঠিক করে দিয়েছে। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করলে কর ছাড় মেলে, এটা কমবেশি সবাই জানেন। এ ছাড়া এমন আরও আটটি খাত আছে। এগুলো হলো স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড বা ডিবেঞ্চার কেনা; জীবনবিমার প্রিমিয়াম; সরকারি কর্মকর্তাদের প্রভিডেন্ট ফান্ড বা ভবিষ্য তহবিলের চাঁদা; স্বীকৃত ভবিষ্য তহবিলে নিয়োগকর্তা ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর চাঁদা; কল্যাণ তহবিল ও গোষ্ঠী বিমার তহবিলে চাঁদা; সরকার অনুমোদিত ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ এবং সুপার অ্যানুয়েশন ফান্ডে চাঁদা। আর ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ডিপোজিট প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত ডিপিএস করলেও কর রেয়াত পাবেন। এসব পেনশন স্কিমে বার্ষিক সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকার ওপর এই কর ছাড় দেওয়া আছে।
মনে রাখবেন, বেতন-ভাতা বা আয়ের পুরো টাকার ওপর কর আরোপ হয় না। বাড়িভাড়া, যাতায়াত, চিকিৎসা ভাতাসহ বিভিন্ন ভাতার একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত কর ছাড় আছে। এসব বাদ দিয়েই আপনাকে করযোগ্য আয় হিসাব করতে হবে। এরপর করযোগ্য আয় থেকে তিন লাখ টাকা বাদ দেবেন। এরপর স্তরভিত্তিক করারোপ হবে।