আপনি বিদেশে যেতে চান। এ জন্য মানি চেঞ্জার ও খোলাবাজারে হন্য হয়ে ডলার খুঁজছেন। দাম আরও বেড়ে যেতে পারে, এ জন্য এখনই কিনে রাখছেন। অথবা দাম কমার আশায় পরে কেনার পরিকল্পনা করছেন। অন্য প্রস্তুতি বাদ দিয়ে ডলারের পেছনেই এখন যত সময় ও মনোযোগ আপনার। এটাই বাস্তবতা। আপনার এ ব্যস্ততা ও দুশ্চিন্তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে খোলাবাজারে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি। গত সপ্তাহে প্রতি ডলারের বিনিময়মূল্য ১০২ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। এখন শতকের নিচে নেমেছে।
খোলাবাজারে ডলারের পেছনে হন্যে হয়ে না ছুটে ব্যাংকের সুবিধাও নিতে পারেন। কারণ, এখন বিভিন্ন ব্যাংকে আপনার জন্য রয়েছে দ্বৈত মুদ্রার ডেবিট কার্ড। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে আপনি বিদেশে গিয়ে প্রয়োজনীয় খরচ করতে পারবেন ডলারে। এ ক্ষেত্রে প্রতি ডলারের মূল্য এখনো ধরা হচ্ছে ৯০ টাকার নিচে। এ জন্য বাড়তি কোনো মাশুলও গুনতে হচ্ছে না।
নেই ডলারের মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কাও। তবে এসব কার্ডে বছরে খরচ করা যাবে সর্বোচ্চ ১২ হাজার ডলার। বাংলাদেশি টাকায় যা ১০ লাখ টাকার কিছু বেশি। দেশের বেশির ভাগ জনগোষ্ঠীর বিদেশে গিয়ে খরচ এ সীমার মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি ব্যাংক এখন দ্বৈত মুদ্রার ডেবিট কার্ড সুবিধা চালু করেছে। আগে এ ধরনের সেবা মিলত মূলত ক্রেডিট কার্ডে। এখন সেখানে যুক্ত হয়েছে ডেবিট কার্ড। এ জন্য আগ্রহী গ্রাহককে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে গিয়ে হিসাব খুলতে হবে। এরপর দ্বৈত মুদ্রার কার্ড নিতে হবে। আর বিদেশে যাওয়ার আগে অবশ্যই ব্যাংকের টাকা জমা করে এনডোর্সমেন্ট করে নিতে হবে। তাহলেই ওই কার্ড দিয়ে বিদেশে খরচ করা যাবে। পাশাপাশি বিদেশের এটিএম থেকেও ডলার বা অন্য মুদ্রা তোলা যাবে। তবে বিদেশের এটিএম ব্যবহার করলে তার জন্য কিছু মাশুল গুনতে হবে। আর কার্ডে কেনাকাটা করলে কোনো মাশুল দিতে হবে না। এই কার্ড দিয়ে দেশে বসে বিদেশের হোটেল বুকিং, নির্দিষ্ট পরিমাণের কেনাকাটাসহ নানা খরচ করা যাবে।
সম্প্রতি এই সেবা চালু করেছে বেসরকারি খাতের ব্র্যাক ব্যাংক। আগে থেকেই এ সেবা রয়েছে দেশীয় মালিকানাধীন দি সিটি ব্যাংক, ইস্টার্ণ ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ডাচ্বাংলা ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, এবি ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকসহ আরও কয়েকটি ব্যাংকের।
এ বিষয়ে ব্র্যাক ব্যাংকের রিটেইল ব্যাংকিং বিভাগের প্রধান মো. মাহীয়ুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন দেশে অবস্থানরত অনেকেরই ডলারে লেনদেনের প্রয়োজন দেখা দেয়। ক্রেডিট কার্ড হয়তো সবার থাকে না। আবার সবাই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারও করতে চান না।
এ জন্য আমরা ডেবিট কার্ডে বিদেশি মুদ্রায় লেনদেন-সুবিধা চালু করেছি। ফলে ব্যাংক হিসাবে টাকা থাকলে তার বিপরীতে ডলারে লেনদেন করা যাবে। এ জন্য বাড়তি কোনো কার্ড ও অনুমোদনের প্রয়োজন হবে না। এ কার্ডের মাধ্যমে বিদেশে এটিএম ব্যবহার, পয়েন্ট অব সেলস ও অনলাইনে কেনাকাটা করা যাবে।’
বর্তমানে ডলারের বাজারে একধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। দাম ওঠানামা করছে খোলাবাজারে। ডলার নিয়ে এ অস্থিরতা সত্ত্বেও চাকরি, ব্যবসায়িক বা ব্যক্তিগত প্রয়োজনে বিদেশযাত্রা থেমে নেই। বর্তমান অবস্থায় বিদেশে যাওয়ার আগে ডলার কিনতে গিয়ে অনেককে ভোগান্তিও পোহাতে হচ্ছে। এ ভোগান্তি অনেকটা দূর করতে পারে দ্বৈত মুদ্রার ডেবিট কার্ড। এ কার্ডে কম খরচে ডলার লেনদেনের সুবিধা রয়েছে। তাই বিদেশযাত্রায় নগদ ডলারের পরিবর্তে কার্ড হতে পারে স্বস্তির সমাধান।