বিটকয়েন: বিশ্ব ও বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট
সম্প্রতি বিটকয়েন আলোচনায় আসার কারণ মূল্যস্ফীতি। বিটকয়েনে যাঁরা বিনিয়োগ করেছিলেন, হঠাৎ করে তাঁদের সম্পদ বেড়েছে কয়েক শ গুণ। নিজের পরিচয় প্রকাশ না করেই এতে লেনদেন করা যায়। লেনদেন ব্যয়ও খুব কম। তবে সবচেয়ে বড় কারণটা হলো, বিটকয়েনে বিনিয়োগ করলে কয়েক গুণ লাভ হবে, এমন একটা ধারণা অনেকের মধ্যে আছে। এখনো অনেক দেশে মুদ্রা হিসেবে স্বীকৃতি না পেলেও জনপ্রিয়তা পাচ্ছে বিটকয়েন। ফলে অনেক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিটকয়েনের জন্য নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে।
২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে বিশ্ব মুদ্রাবাজারে বিটকয়েনের আবির্ভাব ঘটে ডিজিটাল মুদ্রা হিসেবে। লেনদেন পুরোটাই ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে বা অনলাইনে; যদিও এটা কোনো দেশের বৈধ বা আনুষ্ঠানিক মুদ্রা নয়। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে দেখলে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে আবারও বাড়তে শুরু করেছে বিটকয়েনের মূল্য।
ব্লকচেইন স্টার্টআপে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ‘কেনেটিক ক্যাপিটাল’–এর সহপ্রতিষ্ঠাতা জিহান চু বলেন, দুটি বড় কারণে মূল্য বেড়েছে। এক. বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এমন ধারণা তৈরি হয়েছে যে বিটকয়েন হলো ডিজিটাল যুগের মানসম্পন্ন বৈধ সঞ্চয় মাধ্যম। দুই. ফেসবুকের লিব্রা ক্রিপটোকারেন্সি আনার ঘোষণা দেওয়ায় অনেকেই এখন ক্রিপটোকারেন্সিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। অবশ্য, তার আগে থেকেই ক্রিপটোকারেন্সি বা ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা বিটকয়েনের দাম ওঠানামা করছিল। তবে সেপ্টেম্বরে এসে বিটকয়েনের মূল্যমানে কিছুটা স্থিতি দেখা যাচ্ছে। এখন এ মুদ্রা ১০ হাজার মার্কিন ডলার থেকে ১১ হাজার মার্কিন ডলারে ওঠা–নামা করছে। দামের ওঠা–নামা নিয়ে অস্থিরতা থাকলেও বিটকয়েনের ভিত্তি কিন্তু যথেষ্ট শক্তিশালী। তবে ভয়ের ব্যাপার হচ্ছে, এই ক্রিপটোকারেন্সি বা টোকেনে বিনিয়োগের বিষয়টি অতিমাত্রায় অনুমাননির্ভর এবং বাজার অনিয়ন্ত্রিত।
ব্লকচেইন ডটকমের তথ্য অনুযায়ী, বিটকয়েনের আনুমানিক লেনদেনের পরিমাণ জুলাই মাসের পর থেকে সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছেছে। ফেসবুক, জে.পি. মর্গ্যান ও ওয়ালমার্টের মতো প্রতিষ্ঠান ব্লকচেইন প্রযুক্তি ও ডিজিটাল মুদ্রার পথে হাঁটা শুরু করেছে।
এখন দেখা যাক বাংলাদেশ পরিস্থিতি। দেশে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ইন্টারক্লাউডের প্রধান কারিগরি কর্মকর্তা (সিটিও) তানভীর এহসানুর রহমান বলেন, ক্রিপটোকারেন্সি চালু করার আগে যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার কথা ভাবছে বিভিন্ন দেশ। আমাদের দেশে এখনো এটি বৈধ নয়। তবে নির্দিষ্ট নিয়মনীতির ভেতরে এনে এটি চালু করা যেতে পারে।
বিটকয়েনের মূল প্রযুক্তি ব্লকচেইন। দেশে ব্লকচেইন নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান ই–জেনারেশনের চেয়ারম্যান শামীম আহসান বলেন, ‘আমাদের জন্য কিছুটা ভালো খবর হচ্ছে, সরকার আধুনিক প্রযুক্তির বিষয়গুলো অনুধাবন করতে পারছে। এ কারণে ব্লকচেইনের মতো বিষয়গুলো নিয়ে সীমিত আকারে কাজ শুরু হচ্ছে। আমাদের রিটেইল, ভূমি ব্যবস্থাপনা, গ্রাহক, জন্মনিবন্ধন থেকে নানা কাজে ব্লকচেইন প্রযুক্তি কাজে আসবে। ব্লকচেইন প্রযুক্তির হাত ধরেই আসবে ক্রিপটোকারেন্সির কথা। তবে আধুনিক প্রযুক্তির সবকিছু সচেতনভাবে গ্রহণ করতে হবে। দেশের জন্য এটা বড় সুযোগ হয়ে আসতে পারে। বিনিয়োগ আনার একটি সুযোগ হিসেবে দেখতে পারলে স্টার্টআপ ও উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সুফল বয়ে আনতে পারে। তবে এর বিপরীত চিত্র হচ্ছে, অনেকেই জুয়ার মতো এটাকে কাজে লাগাতে পারে। এ ছাড়া প্রতারণার বিষয়টিও খেয়াল রাখতে হবে।’
বিটকয়েনের লেনদেন সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না বলে মাদক চোরাচালান ও অর্থপাচার কাজেও এর ব্যবহারে আশঙ্কা রয়েছে। ডিজিটাল মুদ্রা হিসেবে জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মুদ্রার বিপরীতে এর দরের মারাত্মক ওঠা–নামা, দুষ্প্রাপ্যতা এবং ব্যবসায়ে এর সীমিত ব্যবহারের কারণে অনেকেই এর সমালোচনা করেন।