বাজারে আসছে উজবেক পেঁয়াজ
পেঁয়াজের খোঁজে এবার মধ্য এশিয়ার দেশ উজবেকিস্তানের দ্বারস্থ হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। প্রথমবারের মতো দেশটি থেকে ২০০ টন পেঁয়াজ আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়েছে। ফলে পেঁয়াজ আমদানিতে বাংলাদেশের সামনে এখন ভারতের বিকল্প সাত দেশ। অন্য দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে পাকিস্তান, মিয়ানমার, চীন, মিসর, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)।
প্রতিবেশী ভারত গত ২৯ সেপ্টেম্বর রপ্তানি বন্ধের পরই বিকল্প বাজার থেকে পেঁয়াজ আমদানির খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। বিগত বছরগুলোয়ও ভারতে মূল্যবৃদ্ধির পরিস্থিতিতে পাকিস্তান, চীন ও মিসর—এই তিন দেশ থেকে সীমিত পরিমাণে পেঁয়াজ আমদানি করা হতো। এবারে অবশ্য তালিকাটি বড় হয়েছে। তবে এসব দেশ থেকে আমদানিতে সময় বেশি লাগায় বাজারে দ্রুত সরবরাহ বাড়ছে না। যে কারণে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে আসছে না।
বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির চেষ্টায় মাঠে নেমেছে ঢাকার তাশো এন্টারপ্রাইজ। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা অংশীদার সেলিমুল হক গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ভারতের রপ্তানি বন্ধের পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখন ব্যবসায়ীরা ছুটছেন। খোঁজখবর নিচ্ছেন। শুরুতে বিভিন্ন দেশে দাম কম থাকলেও এখন রপ্তানিকারক দেশ ভারত পেঁয়াজ আমদানি শুরু করায় বিশ্ববাজারেও দাম বাড়ছে। এরপরও আমদানি যদি বাড়ে, তাহলে খুচরায় পেঁয়াজের দাম ৭০-৮০ টাকার বেশি হবে না।
চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ভারতের বিকল্প সাতটি দেশ থেকে এ পর্যন্ত ৬৬ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতিপত্র নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। প্রায় পাঁচ হাজার টন বন্দর থেকে খালাস হয়েছে। বাকি ৬১ হাজার টন এ মাসের শেষে ও ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে বন্দরে এসে পৌঁছার কথা রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর ছাড়াও টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে গতকাল পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে ৩০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। ভারত রপ্তানি বন্ধ করার পর বিকল্প দেশগুলো থেকে গত ৪০ দিনে ৩৫ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে।
>পেঁয়াজ আমদানিতে ভারতের বিকল্প সাত দেশ-উজবেকিস্তান, মিয়ানমার, চীন, মিসর, তুরস্ক, পাকিস্তান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)।
পেঁয়াজ আমদানির সর্বশেষ বিকল্প উৎস উজবেকিস্তান অবশ্য বাংলাদেশের ব্যবসায়িক অংশীদার। দেশটিতে বাংলাদেশের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়। আর দেশটি থেকে বাংলাদেশ যা আমদানি করে, তার ৯৯ শতাংশই তুলা। এবার এই তালিকায় যুক্ত হলো পেঁয়াজ। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্র জানায়, চট্টগ্রামের মেসার্স এ এইচ এন্টারপ্রাইজ উজবেকিস্তান থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিয়েছে গত মাসের শুরুতে। সে অনুযায়ী চালানটি দ্রুত এসে পৌঁছার কথা।
আমদানিকারকেরা জানান, উজবেকিস্তানের কোনো সমুদ্রবন্দর নেই। তাই দেশটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) সমুদ্রবন্দর হয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানি করে থাকে। ইউএইর বন্দর থেকে সমুদ্রপথে চট্টগ্রামে উজবেকিস্তানের পণ্য আনা-নেওয়া করতে মাঝখানে সিঙ্গাপুরে নোঙর করতে হয়। এভাবে ঘুরপথে চলার কারণে প্রায় ১০ হাজার কিলোমিটারের বেশি পাড়ি দিয়ে দেশে এসে পৌঁছাবে উজবেক পেঁয়াজ।
ভারতের বিকল্প দেশ হিসেবে এবার মিসর থেকেই সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে। দেশটি থেকে চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপ পাঁচটি চালানে ৫৫ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির ঋণপত্র খুলেছে। গ্রুপটির কর্মকর্তারা পেঁয়াজ আমদানির জন্য এখন মিসরে রয়েছেন। দেশটি থেকে গতকাল পর্যন্ত অবশ্য আড়াই হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে।
মিসর ছাড়াও চীন থেকে সাড়ে চার হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৮৪৭ টন দেশে এসে গেছে। পাকিস্তান থেকে ২ হাজার ২০০ টন পেঁয়াজ আমদানির ঋণপত্র খোলা হয়েছে। তবে এখনো বন্দরে কোনো চালান এসে পৌঁছায়নি।
তুরস্ক থেকে এবার ৮২০ টনের মতো আমদানির অনুমতিপত্র নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এই দেশ ছাড়াও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে সামান্য পরিমাণে পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপপরিচালক আসাদুজ্জামান বুলবুল প্রথম আলোকে বলেন, আগে কখনো এত বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি হয়নি। ভারত রপ্তানি বন্ধের পর এবার ব্যবসায়ীরা নতুন নতুন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিচ্ছেন।