বাংলাদেশের সক্ষমতার প্রতীক
দেশীয় অর্থায়নে, দেশীয় উপকরণ ব্যবহার করে তৈরি পদ্মা সেতু এ দেশের বিভিন্ন খাতের শিল্পোদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বহু গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এ সেতু প্রকল্পে দেশীয় পণ্য সরবরাহের পাশাপাশি উৎপাদন সক্ষমতাও বেড়েছে রড, সিমেন্টসহ আরও অনেক খাতের। পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজের সঙ্গে জড়িত সিমেন্ট, রড, নির্মাণ খাতের শিল্পোদ্যোক্তারা তাঁদের অভিজ্ঞতা, অনুভূতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রথম আলোকে। কথা বলেছেন মাসুদ মিলাদ।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের দুই প্রান্তে সংযোগ সড়ক, সার্ভিস এরিয়া, টোল প্লাজা, নদীশাসনসহ বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিল আমাদের প্রতিষ্ঠান। এ প্রকল্পের শুরুতেই সার্ভিস এরিয়া তৈরির কাজটি পেয়েছিলাম আমরা। আমাদের ১২ মাসের মধ্যে কাজ বুঝিয়ে দিতে বলা হয়। কিন্তু কাজটি করতে গিয়ে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ি।
কারণ, সার্ভিস এরিয়ার কাজ করতে গিয়ে দেখি, সেখানকার ৪০ বা ৫০ ফুট পর্যন্ত মাটির কোনো ধরনের ধারণক্ষমতাই নেই। মাটির এ অবস্থার উন্নতি করাটাই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। আর কাজটি করতে আমাদের প্রযুক্তিতে বড় বিনিয়োগ করতে হয়। প্রায় এক কোটি মার্কিন ডলার খরচ করে জার্মানি থেকে দুটি মেশিন নিয়ে আসি। এরপর কাজটি সময়মতো শেষ করি।
নির্মাণসংশ্লিষ্ট যন্ত্রের সক্ষমতা বাড়ার সুফল আমরা পরবর্তী সময়ে রাজধানীর কালশীতে উড়ালসড়কের কাজ করতে গিয়ে ভালোভাবে পেয়েছি। এভাবে পদ্মা প্রকল্প আমাদের প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। আমাদের মতো আরও যেসব দেশীয় প্রতিষ্ঠান এ প্রকল্পে কাজ করেছে, তাদের সবারই সক্ষমতা অনেক বেড়েছে। এসব সক্ষমতা ও অভিজ্ঞতা আমরা সবাই ভবিষ্যতে দেশের বড় অন্যান্য প্রকল্পে কাজে লাগাতে পারব।
ফলে পদ্মা সেতু আমাদের মতো অনেক প্রতিষ্ঠানের জন্যই অভিজ্ঞতা অর্জন ও সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রকল্প। পাশাপাশি এ প্রকল্প আমাদের উদ্যোক্তা ও জাতি হিসেবে আমাদের আস্থা ও আত্মবিশ্বাসকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। আমাদের কারিগরি দক্ষতা অনেক বেড়েছে।
পদ্মা সেতু জিডিপি প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিতেও বড় ভূমিকা রাখবে। এ সেতুর সঙ্গে যুক্ত ২১ জেলায় ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। নতুন নতুন বিনিয়োগ হবে। কৃষকেরা একসময় পণ্যের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে উৎপাদনই কমিয়ে দিয়েছিল। ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে এ সেতু নতুন এক মাত্রা যোগ করবে।
যোগাযোগ সুবিধা উন্নত হওয়ার কারণে আমদানি-রপ্তানি পণ্যের পাশাপাশি দক্ষিণাঞ্চলে উৎপাদিত পণ্যের পরিবহন খরচ কমবে। যার সুফল পাবেন মানুষ। আমি মনে করি, এ সেতু আমাদের আগামী প্রজন্মকে ৫০ বছর এগিয়ে দেবে। এ রকম একটি স্বপ্নের প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত থাকা সৌভাগ্যেরও বিষয়। বিশ্বমানচিত্রে এ দেশের সক্ষমতার একটি প্রতীক হয়ে থাকবে এ সেতু।
মঈনউদ্দিন মোনেম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, আবদুল মোনেম লিমিটেড