ফ্ল্যাট কিনতে মেলায় মিলছে গৃহঋণও
>
- পাঁচ দিনের আবাসন মেলা
- আজ শেষ দিন
- ফ্ল্যাট বা প্লট কিনতে গৃহঋণ দিতে মেলায় আছে ১৪টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান
আবাসন মেলায় ফ্ল্যাট বা প্লট পছন্দ করে অনেক ক্রেতাই গৃহঋণের জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের স্টলে ঢুঁ দিচ্ছেন। প্রতিষ্ঠানগুলো ১০ লাখ থেকে কয়েক কোটি টাকা পর্যন্ত গৃহঋণ দিচ্ছে। সুদের হার প্রতিষ্ঠানভেদে ৯ থেকে ১৩ শতাংশ পর্যন্ত।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে রিহ্যাবের আবাসন মেলায় গতকাল শনিবার ঘুরে এমন চিত্রই পাওয়া গেল। মেলায় ১৬৮টি আবাসন প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ১৪টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় গতকালও বিপুলসংখ্যক ক্রেতা–দর্শনার্থী মেলায় এসেছেন। পাঁচ দিনের এই আবাসন মেলা আজ রোববার শেষ হচ্ছে। মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলছে।
ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং ফাইন্যান্স করপোরেশন (ডিবিএইচ) ফ্ল্যাট বা প্লট কিনতে ২০ লাখ থেকে ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত গৃহঋণ দিচ্ছে গ্রাহকদের। সাধারণত তাদের ঋণের সুদের হার ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ হলেও মেলায় সেটি কমিয়ে ৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ করা হয়েছে। ঋণ প্রক্রিয়াকরণেও কোনো ফি নিচ্ছে না তারা।
ডিবিএইচের কর্মকর্তা মো. আতিকুর রহমান গতকাল দুপুরে বলেন, ‘মেলায় অনেক ক্রেতা আমাদের কাছ থেকে গৃহঋণ নেওয়ার জন্য খোঁজখবর নিয়েছেন। ইতিমধ্যে ৯০ জন ক্রেতা ঋণ নেওয়ার জন্য স্পট স্যাঙ্কশনও নিয়েছেন।’
ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট সাড়ে ১০ থেকে ১২ শতাংশ সুদে ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত গৃহঋণ দিচ্ছে। আইডিএলসি সাড়ে ১০ থেকে ১৩ শতাংশ সুদে ঋণ দিচ্ছে। এ ছাড়া মেলায় ব্যাংক এশিয়া, ব্র্যাক ব্যাংক, ইস্টার্ণ ব্যাংক, আইপিডিসি, লংকাবাংলা, মেরিডিয়ান ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড এবং দি সিটি ব্যাংক গৃহঋণ দিচ্ছে।
এদিকে মেলার যত সময় বাড়ছে আবাসন প্রতিষ্ঠানের বেচাবিক্রিও তত বাড়ছে। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানান, অনেক ক্রেতাই মেলায় এসে ফ্ল্যাটের খোঁজখবর নিচ্ছেন এবং পছন্দ হলে সরেজমিনে প্রকল্প দেখতে যাচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই বুকিং দিচ্ছেন।
ঢাকার গুলশান, বারিধারা, ধানমন্ডি, ইস্কাটন ও তেজগাঁওয়ে ৯টি প্রকল্পের ৫০টির বেশি ফ্ল্যাট নিয়ে এসেছে আবাসন প্রতিষ্ঠান আকাশ গ্রুপ। তাদের ফ্ল্যাটের আকার ১ হাজার ৭৭০ থেকে ৪ হাজার ৯০৫ বর্গফুট। প্রতি বর্গফুটের দাম সাড়ে ৯ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে তাদের ফ্ল্যাটের দাম ২ থেকে ১৫ কোটি টাকার মধ্যে।
ফ্ল্যাটের পাশাপাশি গুলশান, বাড্ডা ও তেজগাঁওয়ে বাণিজ্যিক ভবন আছে আকাশের। প্রতি বর্গফুটের দাম ৩২ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত। জানতে চাইলে আকাশ গ্রুপের উপব্যবস্থাপক (বিপণন ও বিক্রয়) মো. আরিফুজ্জামান বলেন, মেলায় ভালোই সাড়া মিলছে। ছয়-সাতটি ফ্ল্যাট বিক্রির বিষয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে।
মগবাজারে দ্য ওয়েসিস নামে টাউনশিপ প্রকল্প করছে এবিসি রিয়েল এস্টেট। সেখানে দুটি সুইমিংপুল, ব্যায়ামাগার, চারটি পার্টি সেন্টার, সিনেমা হল, শপিংমল ইত্যাদি আছে। এই প্রকল্পে ৯টি ভবনে ৪৫৭টি ফ্ল্যাট রয়েছে। ফ্ল্যাটের আকার ২ হাজার ৫০ থেকে ২ হাজার ৫০০ বর্গফুট। প্রতি বর্গফুটের দাম ১১ হাজার ৫০০ থেকে সাড়ে ১২ হাজার টাকা। তাতে ফ্ল্যাটের দাম ২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা থেকে শুরু হবে। মেলার আগেই ১৪৫টি ফ্ল্যাট বুকিং হয়েছে।
এ ছাড়া উত্তরা, মিরপুর, গুলশান, বনানী ওল্ড ডিওএইচএস, ধানমন্ডি, বারিধারা, বেইলি রোডে প্রতিষ্ঠানটির ১২০টির মতো ফ্ল্যাট আছে। ১ হাজার ২৫০ থেকে ৩ হাজার ৭০০ বর্গফুট আয়তনের এসব ফ্ল্যাটের প্রতি বর্গফুটের মূল্য সাড়ে ৬ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা। মেলায় ফ্ল্যাট বুকিং দিলে কিচেন কেবিনেট বা মাস্টার বেড কেবিনেট ফ্রি দিচ্ছে এবিসি।
এবিসির ব্যবস্থাপক (বিক্রয়) এস এম আবু সুফিয়ান বলেন, ‘মেলায় আগত ১৩০ জন ক্রেতার সঙ্গে আমাদের কথাবার্তা হচ্ছে। ইতিমধ্যে তিনটি ফ্ল্যাটের বুকিং পেয়েছি আমরা। আশা করছি, আরও কিছু ফ্ল্যাটের বুকিং পাওয়া যাবে।’
র্যাংগস প্রপার্টিজ গুলশান, বনানী, বারিধারা, বাড্ডা, মোহাম্মদপুর ও বসুন্ধরায় ছয়টি প্রকল্পে ১০০টি ফ্ল্যাট বিক্রির জন্য এনেছে এবারের মেলায়। এসব ফ্ল্যাটের আকার ১ হাজার ৩০০ থেকে সাড়ে ৪ হাজার বর্গফুট। প্রতি বর্গফুটের দাম সাড়ে ৬ হাজার থেকে ৩২ হাজার টাকা।
মেলা উপলক্ষে কার পার্কিংয়ের জায়গা বা মোটরসাইকেল বিনা মূল্যে দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। ফ্ল্যাটের পাশাপাশি বাণিজ্যিক ভবনের জায়গা বিক্রি করছে তারা।
জানতে চাইলে র্যাংগসের উপব্যবস্থাপক রাজিবুর রহমান বলেন, ‘মেলায় অধিকাংশ ক্রেতাই কম দামের মধ্যে ফ্ল্যাট চাইছেন। বাড্ডা ও বসুন্ধরায় ৮৫ লাখ টাকার মধ্যে ফ্ল্যাট আছে আমাদের।’ তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে প্রায় ৫০০ জন ক্রেতার সঙ্গে আমাদের কথাবার্তা হয়েছে। আশা করছি, শেষ পর্যন্ত বেশ কিছু ফ্ল্যাটের বুকিং পাব আমরা।’
ফ্ল্যাটের পাশাপাশি প্লট নিয়ে এসেছে বিডিজি–মাগুরা গ্রুপের বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি। কেরানীগঞ্জে সাউথ প্রজেক্টে তাদের ৩, ৫, সাড়ে ৭ ও ১০ কাঠার প্লট আছে।
বিডিজি–মাগুরা গ্রুপের প্লট এককালীন কিনলে প্রতি কাঠার মূল্য ১৫ লাখ টাকা এবং ছয় মাসের কিস্তিতে কিনলে প্রতি কাঠার মূল্য দাঁড়াবে ১৭ লাখ টাকা।