প্রক্রিয়াজাত খাবার রপ্তানিতে ইউরোপের দরজাও খুলছে

দেশের প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রপ্তানি খাত দিন দিন বড় হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্য, ভারত, নেপাল ও আফ্রিকার দেশগুলোর পর ইউরোপের বাজারেও রপ্তানি শুরু হয়েছে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের। এখন ইউরোপের মধ্যে তিন দেশ যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস ও ইতালিতে বেশি যাচ্ছে এসব পণ্য।   

রপ্তানিকারকেরা বলছেন, বাংলাদেশি খাদ্যপণ্যের জন্য ইউরোপের দরজা সবে খুলতে শুরু করেছে। ভবিষ্যতে সেটা বৃদ্ধির আশা আছে। ইউরোপের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়াতেও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রপ্তানি হচ্ছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পণ্য (১৫ থেকে ২৪ পর্যন্ত দুই অঙ্কের এইচএস কোড ও ০৯ কোডের অধীনে থাকা মসলা) রপ্তানি করে বাংলাদেশের আয় হয়েছে ৭০ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার (প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা), যা আগের বছরের চেয়ে ৩২ শতাংশ বেশি। অবশ্য ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এ খাতে মোট রপ্তানি আয় হয়েছিল ৩৯ কোটি ডলারের মতো। ফলে দুই বছরে রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ৮১ শতাংশ।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে মোট রপ্তানি আয় হয়েছে ৪ হাজার ৫৩ কোটি ডলার। এর মধ্যে ৮৪ শতাংশ এসেছে পোশাক খাত থেকে। এর বাইরে চামড়া ও চামড়াজাত এবং পাট ও পাটজাত পণ্যের পর বড় খাত হয়ে উঠছে কৃষিপণ্য রপ্তানি। কৃষিপণ্যের মধ্যে আবার দ্রুত বড় হচ্ছে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য।

>

মধ্যপ্রাচ্য, ভারত ও আফ্রিকার কয়েকটি দেশের মতো ইউরোপের বাজারেও রপ্তানি বাড়ছে
রপ্তানি আয়ের বড় খাত হয়ে উঠছে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য

প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের মধ্যে বেশি রপ্তানি হয় রুটি, বিস্কুট ও চানাচুরজাতীয় শুকনা খাবার, ভোজ্যতেল ও সমজাতীয় পণ্য, ফলের রস, বিভিন্ন ধরনের মসলা, পানীয় এবং জ্যাম-জেলির মতো বিভিন্ন সুগার কনফেকশনারি। যেমন বিস্কুট, রুটিজাতীয় শুকনা খাবার রপ্তানি করে সর্বশেষ অর্থবছরে দেশীয় কোম্পানিগুলো ২২ কোটি ৭০ লাখ ডলার আয় করেছে, যা আগের বছরের চেয়ে প্রায় ১৩ শতাংশ বেশি।

অবশ্য বিগত অর্থবছরে ফলের রস ও মসলা রপ্তানি কমেছে। পাশাপাশি পানীয় রপ্তানিও বাড়েনি। কিন্তু লাফিয়ে বেড়েছে ভোজ্যতেলজাতীয় পণ্য রপ্তানি। ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, আলোচ্য অর্থবছরে প্রায় ৯ কোটি ডলারের সয়াবিন ও পাম তেল রপ্তানি হয়েছে। যার পুরোটাই গেছে ভারতে। নারকেল তেল রপ্তানি হয়েছে প্রায় ৭ কোটি ডলারের, যা গেছে নেপালে। সরিষার তেল রপ্তানি হয়েছে ৮০ লাখ ডলারের। বাংলাদেশি সরিষার তেলের মূল গন্তব্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো।  

দেশের ভোজ্যতেলের বাজারের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পেয়ে আমরা ভারতে ভোজ্যতেল রপ্তানি শুরু করেছিলাম। তবে এখন সেটা বন্ধ। ভারতীয় কাস্টমসের সমস্যার কারণে আর সয়াবিন ও পাম তেল যাচ্ছে না।’

রপ্তানিকারকেরা জানিয়েছেন, ফলের রস, মসলা ও কোমল পানীয় রপ্তানিতে ভাটা পড়ার কারণ নেপাল ও ভুটানে শুল্ক বৃদ্ধি। পাশাপাশি ভারতে একটি কোম্পানির নিজস্ব কারণে রপ্তানি কমেছিল, যা এখন ঠিক হয়ে গেছে।

ইউরোপের মধ্যে বাংলাদেশি পণ্য বেশি যাচ্ছে যুক্তরাজ্যে। আলোচ্য অর্থবছরে যুক্তরাজ্যে ১ কোটি ৩৮ লাখ ডলারের শুকনা খাবার রপ্তানি হয়। সুগার কনফেকশনারি রপ্তানি হয়েছে প্রায় ১৩ লাখ ৬৬ হাজার ডলারের। ইতালিতেও প্রায় ১৬ লাখ ডলারের শুকনা খাবার গেছে।

প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক প্রাণ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তারা ৩৪ কোটি ৭০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করে। প্রাণের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা বিশ্বের মোট ১৪১টি দেশে পণ্য রপ্তানি করে।

জানতে চাইলে প্রাণের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল বলেন, ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশি পণ্য যেত মূলত বাঙালি ও এশীয়দের কথা মাথায় রেখে। এখন সেখানকার স্থানীয়দের জন্যও প্রাণ বিভিন্ন পণ্য নিয়ে যাচ্ছে। ফলে স্থানীয় লোকজন কেনাকাটা করে এমন সুপার স্টোরে প্রাণের পণ্য পাওয়া যায়।’

বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশন (বাপা) জানায়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রপ্তানির সঙ্গে ১০০টির বেশি প্রতিষ্ঠান যুক্ত। তাদেরই একটি স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ। প্রতিষ্ঠানটির আন্তর্জাতিক বিপণন বিভাগের ব্যবস্থাপক ও বাপার পরিচালনা পর্ষদ সদস্য মো. গুলজার রহমান বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, তাদের পণ্য বেশি যায় মধ্যপ্রাচ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও ইতালিতে। বেশি রপ্তানি হওয়া পণ্যের মধ্যে রয়েছে মসলা, চানাচুর, আচার ইত্যাদি।  

গুলজার রহমান আরও বলেন, ‘আমাদের পণ্যের জন্য ইউরোপের বাজারও বড় হবে।’