পুরো পেনশন তুলে নেওয়ারাও ভাতা পাবেন
সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর পেনশনের পুরো টাকা যাঁরা তুলে ফেলেছিলেন, তাঁরাও এখন মাসিক ভাতা পাবেন। তাঁদের ন্যূনতম পেনশন হবে মাসিক ৩ হাজার টাকা। শুধু পেনশন নয়, প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্টও (বার্ষিক বৃদ্ধি) পাবেন তাঁরা। ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে এ নিয়ম কার্যকর করা হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ গত অক্টোবরে এ ব্যাপারে যে প্রজ্ঞাপন করেছিল, তার গেজেট হয়েছে বুধবার। গেজেট বিশ্লেষণে এ তথ্য জানা গেছে। গেজেটে বলা হয়েছে, ‘শতভাগ পেনশন সমর্পণকারী প্রজাতন্ত্রের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের আর্থিক ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
গেজেট অনুযায়ী, অবসরে যাওয়ার তারিখ থেকে ১৫ বছর সময় পার হয়েছে—এমন শতভাগ পেনশন সমর্পণকারী অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের দেওয়া হবে মাসিক পেনশন। তবে কর্মচারীর এলপিআর/পিআরএল যে তারিখে শেষ হয়েছে, তার পরদিন থেকে ওই ১৫ বছর গণনা হবে। আর যিনি অবসর প্রস্তুতিকালীন ছুটি (এলপিআর) বা অবসরোত্তর ছুটি (পিআরএল) ভোগ করেননি, তাঁর ক্ষেত্রে অবসরে যাওয়ার তারিখ থেকে ওই ১৫ বছর গণনাযোগ্য হবে।
যে নিয়ম ও পদ্ধতিতে মাসিক পেনশন দেওয়া হবে, তা একটি উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। যেমন: একজন কর্মচারী চূড়ান্তভাবে অবসরে গেছেন ২০০২ সালের ৩০ জুন। তাঁর অবসরের পর থেকে ১৫ বছর পার হয় ২০১৭ সালের ১ জুলাই। ১৯৯৭ সালের বেতনকাঠামো অনুযায়ী, প্রথম গ্রেডের কর্মচারীর বেতন ১৫ হাজার টাকা নির্ধারিত হওয়ায় তাঁর মাসিক পেনশন হবে ৬ হাজার টাকা। ২০০৫ সালের বেতনকাঠামো অনুযায়ী এই পেনশন ৭ হাজার ৫০০ টাকা, ২০০৯ অনুযায়ী ১১ হাজার ২৫০ টাকা এবং ২০১৫ অনুযায়ী ১৬ হাজার ৮৭৫ টাকা হবে।
বার্ষিক বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্টের বিষয়টিও উদাহরণ দিয়ে বোঝানো হয়। বলা হয়, ২০১৭ সালের ১ জুলাই তারিখে মাসিক নিট পেনশনের পরিমাণ যদি ১৬ হাজার ৮৭৫ টাকা হয়, তাহলে প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে যে ইনক্রিমেন্ট হবে, সে অনুযায়ী ২০১৮ সালের ১ জুলাই নিট পেনশন পাবেন ১৭ হাজার ৭১৮ টাকা ৭৫ পয়সা।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য গত ২৪ সেপ্টেম্বর অর্থসচিব আবদুর রউফ তালুকদার ‘শতভাগ পেনশন সমর্পণকারী অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের পেনশন পুনঃস্থাপন’ শীর্ষক একটি সারসংক্ষেপ তৈরি করেন। প্রধানমন্ত্রী তা অনুমোদন করেন ৩ অক্টোবর।
বাস্তবে শতভাগ পেনশন সমর্পণকারী অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মচারীদের মাসিক পেনশন পাওয়ার সুযোগ নেই। অর্থসচিবের তৈরি সারসংক্ষেপে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও মন্তব্য করেন, ‘শতভাগ পেনশন সমর্পণকারী অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীরা কোনো দাবি করতে অপারগ। তবে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করে তাঁদের অতিরিক্ত পেনশন দেওয়া যেতে পারে।’
সারসংক্ষেপ অনুযায়ী, ১৯৯৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ১ লাখ ৭ হাজার ৬৬২ জন সরকারি কর্মচারী পেনশনের পুরো টাকা তুলে নিয়ে গেছেন। তবে অবসর নেওয়ার ১৫ বছর পার হয়েছে এমন সরকারি কর্মচারীর সংখ্যা ১৯ হাজার ৫৩৮ জন। তাঁদের জন্য নতুন সুবিধাটি কার্যকর করতে গেলে ১৩৯ কোটি টাকা ব্যয় হবে। তবে ইনক্রিমেন্টসহ চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তাঁদের জন্য আরও ৭ কোটি, অর্থাৎ ১৪৬ কোটি টাকা লাগবে।
শতভাগ সমর্পণকারী পেনশনার্স ফোরাম, বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী কল্যাণ সমিতি এবং অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার্স কল্যাণ অ্যাসোসিয়েশন নামে তিনটি সংগঠন দুই বছর আগেই দাবির পক্ষে অর্থ মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানিয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপিত সারসংক্ষেপে সংগঠনগুলোর দাবির যুক্তিগুলোও তুলে ধরে অর্থ বিভাগ। যুক্তিগুলো হচ্ছে কেউ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, অনেকে ব্যবসা করতে গিয়ে লোকসান দিয়েছেন, কেউ জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে সর্বস্ব হারিয়েছেন, কেউ কেউ আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে প্রতারিত হয়েছেন, অনেকে নিজের সন্তানদের কাছ থেকে আশ্রয় হারিয়েছেন। কারও কারও থাকার জায়গা এখন বৃদ্ধাশ্রম।
পেনশনের পুরো টাকা একবারে তুলে নিয়ে যাওয়ার পদ্ধতিটি ১৯৯৪ সালে শুরু হয়। ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে বাধ্যতামূলক নিয়ম করা হয় যে মোট পেনশনের ৫০ শতাংশ তুলে নেওয়া যাবে, বাকি ৫০ শতাংশ জমা রাখতে হবে।