২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

পি কের সঙ্গীরা বহাল তবিয়তে

  • বিভিন্ন নামে টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন পি কে হালদার। এসব টাকা তিনি ফিরিয়ে দিতে চান বলে জানিয়েছেন।

  • ২০১৫ সালে বিভিন্ন নামে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার কিনে পরিচালনা পর্ষদ দখল করে নেন রিলায়েন্স ফাইন্যান্স ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের এমডি প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদার।

  • প্রতিষ্ঠানটি যখন গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে পারছিল না, গ্রাহকেরা তখন আদালতে যায়। এরপর নিয়োগ হয় নতুন চেয়ারম্যান।

পি কে হালদার

ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডে (আইএলএফএসএল) বহাল তবিয়তে আছেন প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারের সঙ্গীরা। তাঁর নিয়োগ করা পরিচালকেরা এখনো পর্ষদে রয়েছেন। তাঁকে যেসব কর্মকর্তা টাকা লুটে সহায়তা করেছিলেন, তাঁরাও বহাল। যাঁদের নামে টাকা বের হয়েছে, তাঁদেরও কিছু হয়নি। এর বাইরে কেবল আদালতের নিয়োগ দেওয়া নতুন চেয়ারম্যান আর একজন নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

২০১৫ সালে বিভিন্ন নামে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার কিনে পরিচালনা পর্ষদ দখল করে নেন রিলায়েন্স ফাইন্যান্স ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের এমডি প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদার। এরপর প্রতিষ্ঠানটি থেকে কাগুজে কোম্পানি খুলে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা বের করে নেন। প্রতিষ্ঠানটি যখন গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে পারছিল না, গ্রাহকেরা তখন আদালতে যায়। এরপর নিয়োগ হয় নতুন চেয়ারম্যান।

আরও পড়ুন

কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠানটিকে রক্ষায় পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠনসহ বেশ কিছু সুপারিশ জমা দেয় আদালতে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, বর্তমান পরিচালকেরা কোনো মূল্য ছাড়াই নতুন পরিচালকদের কাছে ধারণ করা শেয়ার হস্তান্তর করবেন। বর্তমান পরিচালকেরা তাঁদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ও নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠানের ঋণের দায় স্বীকার করবেন এবং পরিশোধের অঙ্গীকার করবেন। যদি এসব অর্থ শোধে ব্যর্থ হন, তবে তাঁদের সব স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করে পাওনা আদায়ের ব্যবস্থা করা হবে।

আমানতকারীদের টাকা ফেরতের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুপারিশ হলো দুই বছরের মধ্যে টাকা শোধ করা। যেসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ে টাকা জমা রেখেছে, তার বিপরীতে শেয়ার ইস্যু করা। তা প্রত্যাখ্যান করলে দুই থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে টাকা পরিশোধ করতে পারে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং। আর প্রতিষ্ঠানটিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন ধরনের ছাড় দিয়ে সহায়তা করতে পারে।

আরও পড়ুন

বর্তমানে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের পরিচালনা পর্ষদে রয়েছেন এম এ হাশেম, নুরুল আলম, আবুল হাশেম, মো. নুরুজ্জামান, নাসিম আনোয়ার, বাসুদেব ব্যানার্জি, নওশেরুল ইসলাম ও আনোয়ারুল কবির। এর মধ্যে নুরুল আলম ছাড়া সবাই পি কে হালদার দখল করার পর প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক হন। নেচার এন্টারপ্রাইজ, বিআর ইন্টারন্যাশনাল, নিউ টেক এন্টারপ্রাইজ, হাল ইন্টারন্যাশনাল ও রিলায়েন্স ব্রোকারেজের পক্ষে তাঁরা পরিচালক হন। এর মধ্যে কারও কারও প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন হলেও এখানে পরিচালক রয়ে গেছেন। তাঁদের সঙ্গে নতুন করে চেয়ারম্যান হিসেবে সাবেক শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান ও এমডি পদে আবদুল খালেক খান যুক্ত হয়েছেন।

আমানতকারীরা বর্তমানে টাকার জন্য নতুন চেয়ারম্যান ও এমডির পেছনে ঘুরছেন। দুজনে মিলে আমানতকারীদের স্বার্থ কতটা রক্ষা করতে পারেন, এটাই এখন দেখার বিষয়।

আগে আদালতের নির্দেশে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান পদে যোগ দিয়েছিলেন সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। তিনি গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আশা করি নতুন চেয়ারম্যান ও এমডি প্রতিষ্ঠানটি ভালো করতে পারবেন। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপে পর্ষদ পুনর্গঠিত হওয়া প্রয়োজন। আর পি কে হালদার ফিরে এলে এবং তাঁর কাছ থেকে লুট করা অর্থ উদ্ধার করা গেলে প্রতিষ্ঠানটি ভালো করবে।’

পি কে হালদারের দায় স্বীকার
এদিকে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে বিভিন্ন নামে টাকা বের করে নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন পি কে হালদার। আর এসব টাকা তিনি ফিরিয়ে দিতে চান বলে জানিয়েছেন। এ জন্য কোনো ধরনের হয়রানি ছাড়া দেশে ফিরে এসে ব্যবসা পরিচালনা করার শর্ত দিয়েছেন তিনি।

প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদ ও এমডির কাছে পাঠানো চিঠিতে পি কে হালদার লিখেছেন, ‘অন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মতো ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের তারল্যসংকটের বিষয়টি আমি খুব ভালো করে জানি। আমি এটাও জানি, নতুন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে পরিচালনা পর্ষদ পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে। আশা করছি, বর্তমান পরিস্থিতি কী কারণে হয়েছে, এর মধ্যে আপনারা তা ভালো করে জেনে গেছেন।’

পি কে হালদারের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ‘ইন্টারন্যাশনাল লিজিং কিছু প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়, যার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আমার ব্যবসায়িক স্বার্থ বা সংযুক্তি আছে। আমার অনুপস্থিতির কারণে এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা খুব ব্যাহত হচ্ছে।’

চিঠিতে পি কে হালদার আরও লেখেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, যদি আমি বাংলাদেশে ফিরতে পারি এবং আমার ব্যবসা স্বাভাবিকভাবে চালাতে পারি, তাহলে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং সময়মতো টাকা ফেরত পাবে, যা ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের বর্তমান পরিস্থিতি উত্তরণে সহায়তা করবে। আমি বাংলাদেশে ফিরতে চাই এবং কোনো হয়রানি ছাড়া আমার ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করতে চাই।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে বেরিয়ে আসে, ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে ও পরে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি) দখল করেন পি কে হালদার। সেই চার প্রতিষ্ঠানের একটি বিলুপ্তির পথে, বাকি তিনটিও গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। প্রতিষ্ঠান দখল করার জন্য নামে-বেনামে অসংখ্য কোম্পানি খুলেছেন তিনি, শেয়ারবাজার থেকে বিপুল পরিমাণ শেয়ার কিনেছেন, দখল করা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণের নামে টাকাও সরিয়েছেন। এমনকি দেশের বাইরেও কোম্পানি খুলেছেন।

আরও পড়ুন