নির্বাচনের হাওয়া লাগেনি মোটরসাইকেলের বাজারে
নির্বাচনের বছর ভোটের হাওয়া লেগে মোটরসাইকেলের বাজার লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়বে বলে আশা করেছিলেন ব্যবসায়ীরা, কিন্তু সে আশা পূরণ হয়নি। বছরের প্রথম ১১ মাসে বিক্রি বেড়েছে, তবে সেই হার আগের বছরের চেয়ে কম। শেষ দিকে এসে উত্তরবঙ্গে ধানের দাম কম হওয়ায় মোটরসাইকেল বিক্রিতে অনেকটা ভাটার টান লেগেছে। তাই বলে কি ভোটের কোনো প্রভাব মোটরসাইকেলের বাজারে নেই? বিক্রেতারা বলছেন, প্রভাব সামান্য।
একটি কোম্পানির বাজার জরিপ অনুযায়ী, চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত দেশে ৪ লাখ ৩২ হাজার মোটরসাইকেল বিক্রি হয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে প্রায় ২৪ শতাংশ বেশি। বিগত কয়েক বছর দেশে মোটরসাইকেল বিক্রি ৩০ শতাংশের বেশি হারে বেড়েছে। সে হিসাবে এ বছর বিক্রি কম। ভোটের আগের মাস, অর্থাৎ নভেম্বরে মোটরসাইকেল বিক্রি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৩ শতাংশ বেড়েছে। বিক্রেতারা বলছেন, এতে কিছুটা ভোটের প্রভাব আছে।
নির্বাচনের আগে প্রার্থীদের মধ্যে তাদের কর্মীদের মোটরসাইকেল কিনে দেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। কর্মীরা শত শত মোটরসাইকেল নিয়ে ভোটের মাঠ দাপিয়ে বেড়ান। এবার কী হলো? বিপণনকারীরা তিনটি কারণ বলছেন। প্রথমত, নির্বাচনী আইন অনুযায়ী মোটর শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ। প্রার্থীদের আচরণবিধিতে বলা হয়েছে, প্রার্থী কোনো বাস, ট্রাক, মোটরসাইকেল বা অন্য কোনো যানবাহনসহ মিছিল, কিংবা মশাল মিছিল বের করতে পারবেন না। কোনোরকম শোডাউনও করা যাবে না।
দ্বিতীয় কারণটি ধানের দাম। এ বছর বাজারে আমন ধানের দাম কম। ধানের দামের ওপর উত্তরবঙ্গে পণ্যের কেনাবেচা নির্ভর করে। এখন উত্তরবঙ্গে মোটরসাইকেল বিক্রি বাড়ার হার একেবারেই কম বলে জানিয়েছে বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো। তৃতীয় কারণ হিসেবে তারা বলছে, ভোটের প্রচারে এক পক্ষের উপস্থিতি কম থাকা।
জানতে চাইলে জাপানের ইয়ামাহা ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেলের পরিবেশক এসিআই মোটরসের নির্বাহী পরিচালক সুব্রত রঞ্জন দাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কিছু কিছু মোটরসাইকেল বিক্রি হচ্ছে। তবে সেটা উল্লেখযোগ্য কিছু নয়। বরং এখন মোটরসাইকেলের বাজারে গতি কমেছে বলতে পারেন।’ তিনি আরও বলেন, উত্তরবঙ্গে ধানের দাম কম থাকায় সব পণ্যের বিক্রিই তুলনামূলক কম। যদি ধানের ভালো দাম থাকত, তার সঙ্গে নির্বাচনী হাওয়া যোগ হতো, তাহলে অনেক ভালো বিক্রি আশা করা যেত।
দেশের মোটরসাইকেলের বাজারে শীর্ষস্থান ভারতীয় ব্র্যান্ড বাজাজের। এরপর রয়েছে টিভিএস, হিরো, হোন্ডা, রানার, সুজুকি, ইয়ামাহা ও কিছু চীনা ব্র্যান্ড। বাজার প্রতিবছর বাড়ছে, সঙ্গে সব ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেলের বিক্রি বাড়ছে। এ বছর যতটুকু বেড়েছে, তার সঙ্গে নির্বাচনের কোনো প্রভাব নেই। বরং বাজারের স্বাভাবিক প্রবণতা হিসেবেই বিক্রি বেড়েছে বলে জানান বিক্রেতারা।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ হোন্ডা লিমিটেডের (বিএইচএল) প্রধান অর্থ কর্মকর্তা শাহ মোহাম্মদ আশিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা মোটরসাইকেলের বাজারে ভোটের তেমন কোনো প্রভাব দেখছি না। এর একটা কারণ হতে পারে, ভোটের প্রচারে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ। এ ছাড়া শীত এলে মোটরসাইকেল বিক্রি এমনিতেই কমে যায়।’
আরেকটি কোম্পানির একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ভোটের মাঠে প্রচারে একটি পক্ষের উপস্থিতি কিন্তু কম। সেটার কারণ যা-ই হোক। দুই পক্ষ সমানতালে প্রচার না চালালে প্রতিযোগিতা হয় না। মোটরসাইকেল বিক্রি বাড়বে কী করে?
মোটরসাইকেলের উঠতি বাজারের মধ্যে একটি বাংলাদেশ। অন্তত চারটি কোম্পানি দেশে কারখানা করছে। রানারের কারখানা আগে থেকেই আছে। হিরোর কারখানায় উৎপাদন চলছে। বাজাজ, টিভিএস ও হোন্ডা উৎপাদনকারী হিসেবে সনদ পেতে আবেদন করেছে। ফলে ভোটের হাওয়া না লাগলেও আগামী দিনগুলোয় মোটরসাইকেলের বিক্রি বাড়বে।
বাজার জরিপ বলছে, দেশে প্রতি ১৬১ জনে একজন মোটরসাইকেল ব্যবহার করেন। প্রতিবেশী দেশ ভারতে এ হার প্রতি ২০ জনে ১ জন এবং ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় প্রতি ৪ জনে ১ জন মোটরসাইকেল ব্যবহার করেন। ফলে মোটরসাইকেল বিক্রি বাড়ানোর বড় সুযোগ আছে বাংলাদেশে।