নিরাপদ বিনিয়োগে পরিবার সঞ্চয়পত্র
মধ্যবিত্ত মানুষের কাছে নিরাপদ এক বিনিয়োগ বিকল্পের নাম ‘পরিবার সঞ্চয়পত্র’। পাঁচ বছর মেয়াদি এ সঞ্চয়পত্রে বর্তমানে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করা যায়। ব্যাংক খাতে সুদের হার ৯ ও ৬ শতাংশ নিয়ে বহুল আলোচনার এ যুগে পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার (সুদ) হারও কম নয়। মেয়াদ শেষে ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ। তবে কম মেয়াদেও এ সঞ্চয়পত্র ভাঙানো যায়। সে ক্ষেত্রে মুনাফা একটু কম। অর্থাৎ টাকা যত কম দিন খাটবে, মুনাফাও পাওয়া যাবে তত কম।
পরিবার সঞ্চয়পত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এর মুনাফা মাসিক ভিত্তিতে দেওয়া হয়। হারিয়ে গেলে, পুড়ে গেলে বা নষ্ট হলে গ্রাহকের নামে বিকল্প (ডুপ্লিকেট) সঞ্চয়পত্রও ইস্যু করা হয়। তবে এ সঞ্চয়পত্র ব্যাংকঋণের জন্য জামানত বা আমানত হিসেবে ব্যবহার করা যায় না। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের বার্ষিক প্রতিবেদন ২০১৯ অনুযায়ী, গত বছর দেশে যত সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে, তার ৩৮ শতাংশই পরিবার সঞ্চয়পত্র।
সঞ্চয় অধিদপ্তরের পরিচালক আবু তালেব প্রথম আলোকে বলেন, গত ১ জুলাই থেকে অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে। যেসব জায়গায় অনলাইন চালু হয়নি, তারা সঞ্চয়পত্র বিক্রিই করতে পারবে না।
কারা কিনতে পারবেন
সবাই পরিবার সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন না। এ ব্যাপারে সরকার কিছু শর্ত ঠিক করে দিয়েছে। যেমন ১৮ বছর ও তার চেয়ে বেশি বয়সের যেকোনো বাংলাদেশি নারী, যেকোনো বাংলাদেশি শারীরিক প্রতিবন্ধী নারী ও পুরুষ এবং ৬৫ বছর ও তার চেয়ে বেশি বয়সী বাংলাদেশি নারী ও পুরুষেরা পরিবার সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন। এ সঞ্চয়পত্র কেনার সময় দুই কপি ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধন সনদ অথবা পাসপোর্টের ফটোকপি থাকতে হয়। দুই কপি করে পাসপোর্ট আকারের ছবি দিতে হয় নমিনি বা নমিনিদের।
কোথা থেকে কেনা যাবে
১০ হাজার, ২০ হাজার, ৫০ হাজার, ১ লাখ, ২ লাখ, ৫ লাখ এবং ১০ লাখ টাকা মূল্যমানের পরিবার সঞ্চয়পত্র রয়েছে। এগুলো কেনা যাবে জাতীয় সঞ্চয় ব্যুরো, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সব তফসিলি ব্যাংক এবং ডাকঘর থেকে। একই জায়গা থেকে ভাঙানোও যাবে এগুলো। যেসব জায়গায় পুরোপুরি অনলাইন পদ্ধতি চালু হয়নি, সেসব জায়গা থেকে সঞ্চয়পত্র আর কেনা যাচ্ছে না।
মুনাফার হার
মেয়াদ শেষে মুনাফার হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ হলেও পরিবার সঞ্চয়পত্রের বছরভিত্তিক মুনাফার হার কম। যেমন প্রথম বছর শেষে মুনাফার হার ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ, দ্বিতীয় বছর শেষে ১০ শতাংশ, তৃতীয় বছর শেষে ১০ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং চতুর্থ বছর শেষে ১১ শতাংশ।
পূর্ণ মেয়াদের জন্য ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ হারে ১ লাখ টাকায় প্রতি মাসে মুনাফা ৯৬০ টাকা। কিন্তু কেউ যদি আগেই ভেঙে ফেলতে চান, সে ক্ষেত্রে যত বছরের মাথায় তা ভাঙাবেন, সে অনুযায়ী মুনাফা পাবেন তিনি।
মাসিক ভিত্তিতে মুনাফা
পরিবার সঞ্চয়পত্রে মুনাফা নিতে হয় মাসিক ভিত্তিতে। মূল্যমান অনুযায়ী মুনাফার পরিমাণও নির্ধারণ করা আছে। যেমন ১০ হাজার টাকায় ৯৬ টাকা, ২০ হাজার টাকায় ১৯২ টাকা, ৫০ হাজার টাকায় ৪৮০ টাকা, ১ লাখ টাকায় ৯৬০ টাকা, ২ লাখ টাকায় ১ হাজার ৯২০ টাকা এবং ৫ লাখ টাকায় ৪ হাজার ৮০০ টাকা। এ থেকে বাদ যাবে ৫ শতাংশ উৎসে কর। ১০ লাখ টাকায় মুনাফা পাওয়া যাবে ৯ হাজার ৬০০ টাকা, কিন্তু এ থেকে বাদ যাবে ১০ শতাংশ উৎসে কর।
মেয়াদ পূর্তির আগে ভাঙানো
মাসিক মুনাফা নেওয়ার পর পাঁচ বছর শেষে মূল টাকা ফেরত পাওয়া যাবে। মেয়াদপূর্তির আগে নগদায়ন করলে মাসিক মুনাফা কর্তন করে সরকার বাকি অর্থ ফেরত দেবে। যেমন এক লাখ টাকার পরিবার সঞ্চয়পত্র কিনে মেয়াদপূর্তির কত আগে তা ভাঙালে কত টাকা ফেরত পাওয়া যাবে, তা ঠিক করা আছে। যেমন প্রথম বছর চলাকালীন এক লাখ টাকা ভাঙালে কোনো মুনাফা পাওয়া যাবে না।
তবে দ্বিতীয় বছর চলাকালীন মুনাফাসহ পাওয়া যাবে ১ লাখ ৯ হাজার ৫০০ টাকা। এভাবে তৃতীয় বছর চলাকালীন ভাঙালে ১ লাখ ২০ হাজার, চতুর্থ বছর চলাকালীন ১ লাখ ৩১ হাজার ৫০০ এবং পঞ্চম বছর চলাকালীন ১ লাখ ৪৪ হাজার টাকা পাওয়া যাবে।