দোকানে মূল্যতালিকা নেই বেশি দামে মাংস বিক্রি

মাংস
মাংস

রমজান উপলক্ষে গরু, খাসির মাংসের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল সিটি করপোরেশন। কিন্তু অধিকাংশ ব্যবসায়ী নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশিতে মাংস বিক্রি করছেন। অধিকাংশ দোকানে নির্ধারিত মূল্যতালিকাও নেই। ক্রেতাদের অভিযোগ, বাজারে বেশি দামে মাংস বিক্রি হলেও বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

সিটি করপোরেশন নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে মাংস বিক্রি এবং দোকানে মূল্যতালিকা না থাকায় গতকাল শনিবার চারটি দোকানকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা কার্যালয়। সংস্থাটি জানায়, সিটি করপোরেশন পরিচালিত বাজারের চেয়ে ব্যক্তি উদ্যোগে তৈরি কাঁচাবাজার বা দোকানে মাংস বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এই বিষয়টিতে তারা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।

৬ মে মাংসের দাম নির্ধারণ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। প্রতি কেজি দেশি গরুর মাংসের দাম ৫২৫, বিদেশি গরু (বোল্ডার) ৫০০, মহিষ ৪৮০, খাসি ৭৫০, ভেড়া বা ছাগী ৬৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনও (ডিএনসিসি) একই দাম নির্ধারণ করে।

গতকাল শনিবার সরেজমিনে ডিএসসিসি ও ডিএনসিসির অধিকাংশ কাঁচাবাজারে নির্ধারিত দামে মাংস বিক্রি করতে দেখা যায়নি। পলাশী বুয়েট মার্কেটে মাংসের দোকান আছে তিনটি। এর মধ্যে দুটিতেই সিটি করপোরেশনের মূলতালিকা নেই। একটি দোকানে মূল্যতালিকা থাকলেও নির্ধারিত দামে মাংস বিক্রি করা হচ্ছে না। এই তিনটি দোকানে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫৮০ টাকা কেজিতে। এর একটি দোকানমালিক আবির হোসেন বলেন, মাঠপর্যায় থেকে একটি গরু দোকানে আসা পর্যন্ত গরুর মূল দামের চেয়ে দ্বিগুণ খরচ হয়ে যায়। যার কারণে সিটি করপোরেশন–নির্ধারিত হারে মাংস বিক্রি করা সম্ভব হয় না।

পুরান ঢাকার টিপু সুলতান রোডে সারিবদ্ধভাবে অনেকগুলো মাংসের দোকান রয়েছে। এর মধ্যে বাদশা মিয়ার মাংসের দোকানটি সবার কাছে বেশ পরিচিত। এখানে গতকাল ৫৮৫ টাকা কেজিতে দেশি গরুর মাংস বিক্রি করতে দেখা গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাদশা মিয়া কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

জানতে চাইলে ডিএসসিসির অঞ্চল-৪–এর নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উদয়ন দেয়ান বলেন, নির্ধারিত দামে মাংস বিক্রি নিশ্চিত করতে তাঁরা নিয়মিত ডিএসসিসি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করছেন। কয়েক দিন আগে বেশি দামে মাংস বিক্রি করায় টিপু সুলতান রোডের দুটি দোকানকে জরিমানা করা হয়েছে।

হাতিরপুল, বনলতা সুপার মার্কেট, সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজার, ডিএনসিসির কারওয়ান বাজারে ডিএসসিসি–নির্ধারিত হারেই গরু ও খাসির মাংস বিক্রি করতে দেখা গেছে। তবে এই চারটি বাজারে মহিষ ও ভেড়ার মাংস বিক্রি করতে দেখা যায়নি। কারওয়ান বাজারের এক মাংস ব্যবসায়ী বলেন, ওই চারটি বাজারে অনেক সময় মহিষকে গরু ও ভেড়াকে খাসি বলে চালিয়ে দেওয়া হয়। ক্রেতারা তা ধরতে না পেরে প্রতারিত হচ্ছেন। মাংস ব্যবসায়ীরা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। অন্যদিকে মণিপুরিপাড়া, নাখালপাড়া, রামপুরার বিভিন্ন মাংসের দোকানে ৫৬০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে মাংস বিক্রি করতে দেখা গেছে।

এর মধ্যে মূল্যতালিকা না থাকায় গতকাল মিরপুর-১ নম্বর গোলচত্বরের আনোয়ারের মাংসের দোকানকে ১০ হাজার, খোকনের মাংসের দোকানকে ৫ হাজার, ভুট্টোর মাংসের দোকানকে ৫ হাজার, মায়ের দোয়া মাংসের দোকানকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা কার্যালয়। সংস্থাটির সহকারী পরিচালক আবদুল জব্বার মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, ভোক্তাদের স্বার্থ বিবেচনা করে তাঁরা ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছেন।