সুইজারল্যান্ডের ওয়েবভিত্তিক বিজনেস নিউজপোর্টাল সিএনএন মানি ডট সিএইচ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। করোনার প্রকোপে আয় কমে যাওয়া এবং উদ্যোক্তাদের সরে যাওয়ার কারণে অনলাইন সংবাদমাধ্যমটির পরিচালনা পর্ষদ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই সঙ্গে দেউলিয়া হওয়ার জন্য আবেদন করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিএনএন মানি। আইন অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির অবসায়ন (বিলুপ্ত) হবে। খবর রয়টার্সের।
সিএনএন মানি সুইজারল্যান্ডের চার পরিচালকের মধ্যে তিনজনই বাংলাদেশের। এর মধ্যে দুজন হলেন সিকদার গ্রুপের চেয়ারম্যান জয়নুল হক সিকদারের দুই ছেলে রিক হক সিকদার ও রন হক সিকদার। আরেকজন বাংলাদেশের আরএসএ ক্যাপিটালের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান সামির আহমেদ। সিএনএন মানির ওয়েবসাইটে তাঁদের নাম দেওয়া ছিল। তবে সম্প্রতি সেখান থেকে পরিচালকদের নাম সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
সিএনএন মানির চার পরিচালকের মধ্যে তিনজনই বাংলাদেশের। তাঁরা হলেন রিক হক সিকদার, রন হক সিকদার ও সামির আহমেদ।
জানা যায়, ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে সুইজারল্যান্ডে চ্যানেলটি কার্যক্রম শুরু করে। প্রতি মাসে দেড় লাখের মতো গ্রাহক পেয়েছিল চ্যানেলটি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল সিএনএনের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে বাণিজ্য সংবাদ প্রচার করত সিএনএন মানি সুইজারল্যান্ড। দেশটির জুরিখ ও গ্লান্ডে দুটি স্টুডিও ছিল তাদের। সংবাদকর্মী, উপস্থাপকসহ সব মিলিয়ে ২৫ জন কর্মী কাজ করতেন চ্যানেলটিতে।
সিএনএন মানি সুইজারল্যান্ডের ওয়েবসাইট ১৪ আগস্টের পর আর হালনাগাদ করা হয়নি। টুইটারে চ্যানেলটি ১৭ আগস্ট এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বন্ধের সিদ্ধান্তের কথা জানায়। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দুই বছর আট মাস কার্যক্রম চালানোর পর সুইজারল্যান্ডের প্রথম ইংরেজি ভাষার এই চ্যানেল তাদের কার্যক্রম বন্ধ করতে যাচ্ছে। ১৬ আগস্ট পরিচালনা পর্ষদ সর্বসম্মতিক্রমে দেউলিয়া হতে আবেদন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা যন্ত্রণাদায়ক। গত ছয় মাসে করোনার কারণে আয় কমে গেছে। অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তারা চুক্তি বাতিল করেছে।
যোগাযোগমাধ্যম লিংকডিনের মাধ্যমে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির উপসম্পাদক হান্না ওয়াইজ প্রথম আলোকে জানান, তাঁরা নতুন করে কোনো আধেয় (কনটেন্ট) তৈরি করছেন না।
গত জুনে সিকদার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রন হক সিকদার ও তাঁর ভাই দিপু হক সিকদার এক্সিম ব্যাংকের দুই কর্মকর্তা হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি হওয়ার পর বাংলাদেশে সিএনএন মানি সুইজারল্যান্ডের নাম আলোচনায় আসে। তখন তাঁদের দেশে-বিদেশে থাকা সম্পদের মধ্যে সিএনএন মানি সুইজারল্যান্ড ছিল একটি। রন হক সিকদার ছিলেন সংবাদমাধ্যমটির পরিচালক।
বাংলাদেশের গণমাধ্যমে এমন খবর প্রকাশের পর সিএনএন মানি সুইজারল্যান্ডের মালিকানা নিয়ে বিদেশি গণমাধ্যমে নানা প্রশ্ন ওঠে। তাঁদের সম্পদ, সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক ও দেশ থেকে বিশেষ বিমানে রোগী সেজে বিদেশে পলায়ন নিয়ে আলোচনা হয়। এরপর সংবাদমাধ্যমটির সঙ্গে দেশটির অনেক প্রতিষ্ঠান ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করে। এর ফলে বন্ধের মতো সিদ্ধান্ত নিতে হয় সিএনএন মানিকে।
একজন পরিচালকের রোগী সেজে বিদেশে পলায়নের সময় এক বিজ্ঞপ্তিতে সিএনএন মানি সুইজারল্যান্ড জানিয়েছিল, একজন কম শেয়ারধারী পরিচালকের ব্যক্তিগত বিষয়ের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের কোনো সম্পর্ক নেই। বিষয়টি আদালত কর্তৃক নিষ্পত্তি হবে, তারপর প্রতিষ্ঠান সিদ্ধান্ত নেবে।
এক্সিম ব্যাংকের এমডিকে গুলি করে হত্যার চেষ্টার ঘটনা ঘটে গত ৭ মে। ঘটনা চাপা দেওয়ার নানা ধরনের চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর এক্সিম ব্যাংকের পক্ষে গুলশান থানায় মামলা করা হয় ১৯ মে। আর গত ২৫ মে মূল আসামি রন হক সিকদার ও দিপু হক সিকদার রোগী সেজে দেশ ত্যাগ করেন।
বাংলাদেশের সিকদার পরিবারের সম্পদ ছড়িয়ে আছে পৃথিবীর অনেক দেশে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাত, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও সুইজারল্যান্ডে রয়েছে সিকদার পরিবারের একাধিক কোম্পানি ও বিপুল বিনিয়োগ। এসব বিনিয়োগের উৎস নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন।