তাঁর আমলেই ট্যাক্স কার্ড চালু হয়
বাংলাদেশের অগ্রগতির সময়টাতে আবুল মাল আবদুল মুহিত দীর্ঘ সময়ের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সামলেছেন। এ সময় আমাদের অর্থনীতিতে এসেছে নানামুখী চ্যালেঞ্জ। সরাসরি এসব সামলেছেন তিনিই। বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের ইতি টেনেছেন সফলতার সঙ্গে। যে সময়ে তিনি অবসরে গেলেন, তত দিনে বাংলাদেশের অর্থনীতি একটা মজবুত ভিত্তিতে চলে গেছে।
বড় বাজেটের রূপকার এই অর্থমন্ত্রী, মানুষ হিসেবে ছিলেন সোজাসাপটা। তিনি যেটা যেভাবে ভাবতেন, সেভাবেই বলে দিতেন। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তাঁর কথাবার্তা হতো আরও খোলামেলা। সহজেই তাঁর কাছে অভাব-অভিযোগের সঙ্গে আবদারের কথাও বলতে পারতেন ব্যবসায়ীরা। সহজেই তাঁকে পাওয়া যেত। যেটা ব্যবসায়ীদের অনেক কাজকে সহজ করে দিত।
আমার সৌভাগ্য যে তিনবার আমি ডিসিসিআইয়ের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি, তাঁর সবটা সময় আমি তাঁকে অর্থমন্ত্রী হিসেবে পেয়েছি। তিনি সব সময় পাশে ছিলেন।
তাঁর দায়িত্ব পালনকালে তিনি বড় অঙ্কের বাজেট দিয়েছেন। সরকারকে বাড়তি আয়-ব্যয়ের এই সাহসিকতা তিনি শিখিয়েছেন। ভ্যাট-ট্যাক্স সংগ্রহ নিয়ে ব্যাপক চ্যালেঞ্জ থাকে। স্বভাবতই এর একটা চাপ থাকে বেসরকারি খাতের ওপর। তা সত্ত্বেও তিনি বেসরকারি খাতের সম্প্রসারণে আন্তরিক ছিলেন।
ট্যাক্স কার্ড মুহিত সাহেবের আমলেই হয়। এটা করার জন্য আমরা যখন প্রস্তাব দিলাম, তিনি তখন এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) নির্দেশ দেন। তবে এনবিআর সাড়া দিতে কিছুটা কালক্ষেপণ করে। এটাকে তিনি ভালোভাবে নেননি। পরবর্তী সময়ে মন্ত্রী মহোদয়কে এটা স্মরণ করাতে গেলে উনি কিছুটা অস্বস্তি বোধ করলেন। এবং তখনই এটা কেন করা হলো না, এনবিআরের কাছে তার ব্যাখ্যা চান। কিছুটা কড়া ভাষায় এনবিআরকে দ্রুত কাজটি করে দেওয়ার জন্য পুনর্নির্দেশ দেন। দেশের জন্য যেটা ভালো, সেটাকে তিনি এভাবেই আমলে নিতেন।
একবার ডিসিসিআইয়ের এক অনুষ্ঠানে তাঁর একজন বিদেশি শিক্ষককে আমরা প্রবন্ধ উপস্থাপনের জন্য আমন্ত্রণ জানালাম। সেই অনুষ্ঠানের অতিথি ছিলেন তিনি। শিক্ষকের সামনে বসে সেই অনুষ্ঠানে যেমন খুশি হয়েছিলেন, ঠিক তেমনি তাঁর শিক্ষাগুরুর প্রতি যে সম্মান প্রকাশ করলেন, তা নতুন একজন মুহিত সাহেবকে আমাদের সামনে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল। তিনি কর্মের মাধ্যমে আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন।
ব্যবসায়ী সমাজের তো বটেই, জাতীয় এই মুরব্বির প্রয়াণে বিনম্র শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।
সাবেক সভাপতি, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)