গরমমসলার বাজার ‘ঠান্ডা’
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার কোনো মসলার দাম বাড়েনি। উল্টো কিছু মসলার দাম কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা কমেছে।
প্রতিবছর ঈদুল আজহার আগে বাজারে বিভিন্ন ধরনের মসলার বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়। ক্রেতাদের চাহিদা বেশি থাকায় সুযোগ বুঝে মসলার দাম বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন, গরমমসলার দাম এখন পর্যন্ত ‘ঠান্ডা’।
রাজধানীর শ্যামবাজার ও কারওয়ান বাজারে মসলার পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার কোনো মসলার দাম বাড়েনি। উল্টো কিছু মসলার দাম কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা কমেছে। এর কারণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, করোনা পরিস্থিতিতে বিভিন্ন পারিবারিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন অনেক কমে গেছে। কঠোর বিধিনিষেধের কারণে গত দুই সপ্তাহ এ ধরনের অনুষ্ঠান প্রায় বন্ধই ছিল। কমিউনিটি সেন্টার, হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ। এসব কারণে বছরজুড়ে মসলার বিক্রি কম হয়েছে। বাজারে মসলার মজুত পর্যাপ্ত। তাই দাম বাড়েনি।
দেশজুড়ে ১৪ দিনের কঠোর বিধিনিষেধ শিথিলের পরদিন গত বৃহস্পতিবার মোহাম্মদপুর থেকে পণ্য কিনতে কারওয়ান বাজারে এসেছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী লোকমান হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এ বছর মসলার দাম স্বাভাবিক আছে। গত বছর কোরবানির ঈদের আগে ২৫০ গ্রাম বড় এলাচির দাম ছিল এক হাজার টাকা। আর এবার তিনি কারওয়ান বাজার থেকে ২৫০ গ্রাম এলাচি কিনেছেন ৭০০ টাকায়।
শ্যামবাজার ও কারওয়ান বাজারের পাইকারি দোকানে ছোট এলাচি বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার টাকা কেজি। বড় এলাচির দাম ছিল ২ হাজার ৬০০ টাকা। লবঙ্গ ৯৫০ টাকা, জায়ফল ৮০০ টাকা, কালো গোলমরিচ ৫০০ টাকা, আলুবোখারা ৪৫০ টাকা, দারুচিনি ৩৫০ টাকা ও জয়ত্রী প্রতি কেজি ২ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
কারওয়ান বাজারে মসলার পাইকারি বিক্রেতা মো. আবদুল কাদির প্রথম আলোকে বলেন, কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে মূল্যবৃদ্ধির পরিবর্তে উল্টো কোনো কোনো মসলার দাম ২০-৫০ টাকা কমেছে। গত সপ্তাহে তিনি লবঙ্গ প্রতি কেজি এক হাজার টাকায় বিক্রি করেছিলেন। এখন ৯৫০ টাকায় বিক্রি করছেন। ছোট এলাচি বিক্রি করছেন কেজিতে ১০০ টাকা কমে ২ হাজার টাকায়।
তবে খুচরা বিক্রেতারা বড় এলাচি প্রতি কেজি ২ হাজার ৮০০ টাকা, লবঙ্গ ১ হাজার ২০০ টাকা এবং আলুবোখারা ৫০০ টাকায় বিক্রি করছেন। দামের পার্থক্যের বিষয়ে পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের আগে খুচরা বিক্রেতা ও মহল্লার দোকানিরা ক্রেতাদের কাছে একটু বাড়তি দাম চেয়ে থাকেন। এ কারণে মসলার দাম বেড়েছে বলে মনে হতে পারে।
কারওয়ান বাজারে জিরার পাইকারি মূল্য ছিল প্রতি কেজি ৩০০ টাকা, ধনে ১০০ টাকা। তেজপাতা ১০০ গ্রামের দাম ১০ টাকা। তবে খুচরা দোকানে জিরা কেজি ৩৫০ টাকা, ধনে ১২০ টাকা ও তেজপাতা ১০০ গ্রাম ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মসলার দাম না বাড়লেও পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৫ টাকা ও আদার দাম কেজিতে ৩০ টাকা বেড়েছে। কারওয়ান বাজারে পাইকারিতে এক পাল্লা (৫ কেজি) দেশি পেঁয়াজ ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরায় প্রতি কেজির দাম ছিল ৫৫ টাকা।
কারওয়ান বাজারের খুচরা বিক্রেতা সোলাইমান খান গতকাল প্রতি কেজি আদা (চীনা) ২০০ টাকায় বিক্রি করেন। তিনি বলেন, বুধবার এই আদা ১৭০ টাকা কেজি বিক্রি করেছেন। এখন তাঁদেরই ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি কিনতে হচ্ছে। তবে রসুন আগের দরেই প্রতি কেজি ১৫০ টাকায় বিক্রি করছেন।
শ্যামবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী নারায়ণ সাহা প্রথম আলোকে বলেন, বাজারে আদার দাম ওঠা–নামা করছে। করোনা পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের অনেকে আদা আমদানি বন্ধ রেখেছেন। তাই সংকট আছে। তিনি বলেন, অন্য বছর কোরবানির এক সপ্তাহ আগে থেকে প্রতিদিন সকালেই কয়েক শ বস্তা পেঁয়াজ বিক্রি (প্রতি বস্তায় প্রায় ৮৫ কেজি) করতেন। এবার কোনো দিনই সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ৫০ বস্তার বেশি পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারেননি।