সরকার করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি চাঙা করতে কৃষকদের ৪ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণের উদ্যোগ নিলেও ব্যাংকগুলো তাতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। সরকারি-বেসরকারি খাতের ছয় ব্যাংক গত পাঁচ মাসে এ খাতে কোনো ঋণই বিতরণ করেনি। যদিও বড় শিল্প ও সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের জন্য বরাদ্দকৃত ঋণের প্রায় পুরোটাই পেয়েছে। কৃষিঋণ বিতরণ কম হওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি প্রণোদনার এ ঋণ বিতরণের সময় আরও তিন মাস বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কৃষিঋণ বিতরণ করতে পারবে ব্যাংকগুলো।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কৃষি খাতের উন্নয়নে কম সুদে প্রণোদনার ঋণ পৌঁছে দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। তাই ব্যাংকগুলোকে লক্ষ্য বেঁধে দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে প্রণোদনার কৃষি ঋণ বিতরণ শেষ হবে।’
করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারঘোষিত সাধারণ ছুটির মধ্যে গত ১২ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষি খাতের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠনের ঘোষণা দেন। এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক তহবিলটি গঠন করে। পরে এ তহবিলসহ সব কৃষিঋণে কৃষকদের জন্য সুদহার ৯ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। বাকি ৫ শতাংশ সুদ সরকার ভর্তুকি হিসেবে দিচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কৃষি খাতের তহবিল থেকে ঋণ বিতরণের নির্দেশ দেয়। ঋণ বিতরণের বেঁধে দেওয়া সময় ফুরিয়ে এলেও এখন পর্যন্ত ব্যাংকগুলো এ তহবিল থেকে ১ হাজার ১১৪ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। আর বিতরণ করা ঋণ পেয়েছেন ৪৬ হাজার ৮১৫ জন কৃষক। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঋণ দিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি) ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব)।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত আগস্ট পর্যন্ত রাষ্ট্রমালিকানাধীন জনতা ও বেসরকারি বাংলাদেশ কমার্স, ওয়ান, ইউনিয়ন, মধুমতি ও সীমান্ত ব্যাংক এ তহবিল থেকে কোনো ঋণ বিতরণ করেনি। এর মধ্যে জনতা ব্যাংক ১২০ কোটি টাকা এবং ওয়ান ব্যাংক ৬২ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্য ঠিক করেছিল।
জানতে চাইলে মধুমতি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সফিউল আজম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কৃষি খাতে ঋণ দিতে শুরু করেছি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্য মেনে ঋণ বিতরণের চেষ্টা চলছে।’
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, প্রয়োজনীয় নথিপত্রের ঘাটতির কারণে কৃষকেরা ঋণ পাচ্ছেন না। আবার বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলো শহরে কৃষক খুঁজে পাচ্ছে না। কারণ, গ্রামে তাদের শাখার পরিমাণ তুলনামূলক কম।
কৃষি খাতের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার যে প্রণোদনা তহবিল গঠন করা হয়েছে, সেটির ঋণ পরিশোধের মেয়াদ ১৮ মাস (৬ মাস গ্রেস পিরিয়ডসহ)। এ তহবিলের আওতায় ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নির্ধারিত ১ শতাংশ সুদে পুনঃ অর্থায়ন সুবিধা পাবে। আর গ্রাহক পর্যায়ে সুদ হবে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ। এ সুদহার নতুন ও আগের উভয় গ্রাহকের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
এ নিয়ে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কৃষিঋণ দেওয়ার জন্য বেসরকারি ব্যাংকগুলোর তেমন নেটওয়ার্ক নেই। দক্ষ কর্মীর অভাবও আছে। আবার এসব ঋণ আদায় বেশ কঠিন। ঋণের পরিমাণও অনেক কম। এ কারণে সব ব্যাংক এই ঋণে তেমন আগ্রহী হচ্ছে না।
সৈয়দ মাহবুবুর রহমান আরও বলেন, কৃষি খাতে ঋণ বাড়াতে সব শাখার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আশা করা যায়, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রার পুরোটা অর্জন করা সম্ভব হবে।