কত সুখে বাংলাদেশের মানুষ?

বিশ্বের সর্বনিম্ন ইতিবাচক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন দেশগুলোর তালিকায় অবস্থান করছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি ওয়াশিংটনভিত্তিক আন্তর্জাতিক বাজার গবেষণা ও জনমত জরিপ প্রতিষ্ঠান গ্যালাপের একটি বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। ৫৫ স্কোর নিয়ে সর্বনিম্ন ইতিবাচক অভিজ্ঞতার ১২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ চতুর্থ অবস্থানে। এই ১২টি দেশের মধ্যে ৩৮ স্কোর নিয়ে সবচেয়ে নিচে রয়েছে আফগানিস্তান।

সম্প্রতি প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে ইতিবাচক অভিজ্ঞতা এবং নেতিবাচক অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে দুটি পৃথক তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ১৪৫ দেশের ১ লাখ ৭৫ মানুষের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে প্রতিবেদনটি। ‘গ্যালাপ গ্লোবাল ইমোশনস রিপোর্ট’ শীর্ষক এ জরিপে অংশগ্রহণকারীদের কাছে তাঁদের ঠিক আগের দিনের ইতিবাচক ও নেতিবাচক অভিজ্ঞতা জানতে চাওয়া হয়। বিশ্রাম, সম্মান লাভ, হাসি-আনন্দে থাকা, প্রতিদিন ভালো বা মজার কোনো না কোনো কাজ করা, নতুন কিছু শেখা এবং গত দিনটি কতটুকু আনন্দে কেটেছে, এ রকম পাঁচটি ইতিবাচক প্রশ্ন করা হয়। আবার গতকাল কোনো শারীরিক কষ্ট অনুভব করেছেন কি না, উদ্বিগ্ন কি না, বিষণ্নতায় ভুগেছেন কি না, চাপ কেমন অনুভব করেছেন, ক্রোধ অনুভব করেন কি না—এমন পাঁচটি নেতিবাচক প্রশ্ন করা হয়।

গতকাল কি আপনি প্রচুর হেসেছেন? ২০১৯ সালে এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্বের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ মানুষের উত্তর হচ্ছে ‘হ্যাঁ’। জীবন কি উপভোগ করছেন? এমন প্রশ্নেও ১০ জনের ৭ জন ‘হ্যাঁ’ বলেন। ভালোভাবে বিশ্রাম পেয়েছেন—এমনটা জানিয়েছেন ৭১ শতাংশ এবং ৮৬ শতাংশ জানিয়েছেন তাঁদের সঙ্গে শ্রদ্ধাপূর্ণ আচরণ করা হয়েছে। ২০১৯ সালে সামগ্রিক ইতিবাচক অভিজ্ঞতা সূচকের স্কোর ছিল ৭১।

একইভাবে তাঁদের নেতিবাচক অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতেও পাঁচটি করে প্রশ্ন করা হয়। এই প্রশ্নগুলো হলো গতকাল কোনো শারীরিক কষ্ট অনুভব করেছেন কি না, উদ্বিগ্ন কি না, বিষণ্নতায় ভুগেছেন কি না, চাপ কেমন অনুভব করেছেন, ক্রোধ অনুভব করেন কি না? ২০১৯ সালে সামগ্রিক নেতিবাচক অভিজ্ঞতার সূচকটির স্কোর ৩১। উত্তরদাতাদের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি মানুষ জানান, আগের দিন প্রচুর উদ্বেগে ছিলেন (৩৯ শতাংশ), চাপে ছিলেন জানান ৩৫ শতাংশ। ১০ জনের মধ্যে তিনজন (৩১ শতাংশ) জানান শারীরিক কষ্টের কথা। ২৬ শতাংশ জানান, দুঃখে ছিলেন। ক্রোধ অনুভব করেছেন ২২ শতাংশ।

ইতিবাচক অভিজ্ঞতা সূচকে শীর্ষে রয়েছে পানামা, তাদের স্কোর ৮৫ পয়েন্ট। এর পরেই আছে এল সালভাদর, গুয়াতেমালা, প্যারাগুয়ে, কলম্বিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মেক্সিকো, নিকারাগুয়া, চীন, কোস্টারিকা, ডেনমার্ক ও হন্ডুরাস। এই সূচকে আধিপত্য করেছে ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলো। হয়তো উন্নত অঞ্চলের বিচারে প্রথম সারির দিকে নয় লাতিন আমেরিকা। তবে তারা হাসে; গ্যালাপের জরিপ অনুযায়ী বলা যায় তারা জীবনের সব অভিজ্ঞতা উপভোগ করে। বিশ্বের অন্য অঞ্চলের মতো নয়, তারা সুখে আছে। এটা তাদের সাংস্কৃতিক প্রবণতা।

সবচেয়ে কম ইতিবাচক অভিজ্ঞতা হচ্ছে—এমন দেশের পয়েন্টও দেখিয়েছে গ্যালাপ। এতে সবচেয়ে নিচে আছে আফগানিস্তান। দেশটির স্কোর ৩৮। মূলত, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় আবেগের ওপর প্রভাব ফেলেছে। এটি প্রতিফলিত করে যে দারিদ্র্য ও সহিংসতার নেতিবাচক চক্র আফগানদের প্রতিদিনের অভিজ্ঞতায় কতটা ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলছে। জরিপে অংশ নেওয়া মাত্র ৩১ শতাংশ আফগানিস্তানের নাগরিক জানান, তাঁরা গতকাল হেসেছিলেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্থান তিন বছর ধরেই এই সূচকে সর্বনিম্ন পয়েন্ট পাচ্ছে।

অন্যদিকে সবচেয়ে নেতিবাচক অভিজ্ঞতার মধ্যে বাস করছেন ইরাকের মানুষ (সূচকে স্কোর ৫১ পয়েন্ট)। তাঁরা নানা ধরনের আঞ্চলিক ও রাজনৈতিক সমস্যায় জর্জরিত। এককথায় বলা যায়, ভালো নেই তাঁরা। ইরাকের পরে এর পরে আছে যথাক্রমে রুয়ান্ডা, আফগানিস্তান, চাঁদ, লেবানন, সিরিয়া লিওন, গায়ানা, তিউনিসিয়া, ইরান ও টোগো। সবচেয়ে কম নেতিবাচক অভিজ্ঞতার মুখে রয়েছে তাইওয়ানের মানুষ, দেশটির স্কোর ১৩।

কোভিড–পরবর্তী অবস্থা

ওপরের যে আলোচনা করা হলো, তা পুরোপুরি কোভিড–পূর্ববর্তী অবস্থা নিয়ে করা হয়েছে। ২০২০ সালে বিশ্ব যে নতুন উদ্বেগ শঙ্কা ও আতঙ্ক দেখছে, তার নাম হলো কোভিড-১৯। এ বছরের মাঝামাঝি পর্যন্ত নেওয়া তথ্য থেকে বোঝা যায় যে বিশ্বের অনেক দেশের মানুষ মহামারির কারণে ইতিমধ্যে একটি উচ্চতর নেতিবাচক অবস্থায় প্রবেশ করেছে, যা তাদের মহামারি–পরবর্তী জীবনযাত্রার বড় প্রভাব ফেলবে।

গ্যালাপের গ্লোবাল ম্যানেজিং পার্টনার জন ক্লিফটন বলেন, এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে দেশ পর্যায়ে পরিমাণ নির্ধারণের চেষ্টা করা হয়েছে। মানুষ জীবন কেমন উপভোগ করছে এবং নতুন এবং আকর্ষণীয় জিনিস শিখছে কি না। এর মাধ্যমে নির্ধারণ করার চেষ্টা করা হয়েছে মানুষ কি পূর্ণ বিশ্রাম পাচ্ছে, নাকি অধিক চাপে বা দুঃখে রয়েছে। তাঁকে কি অসম্ভব শারীরিক কষ্টের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। এই সূচকের মাধ্যমে জীবন মূল্যবান করে তোলে—এমন সমস্ত কিছু মানুষ কী রকম উপভোগ করছে, তা পরিমাপ করার চেষ্টা করা হয়েছে।