এবার এক এলপিজি রূপান্তর ব্যবসায় ভ্যাট গোয়েন্দারা
আবুল কাশেম ওরফে রনি নামের একজন গ্রাহক নিজের গাড়িটির জ্বালানি ব্যবস্থা এলপিজিতে রূপান্তরের জন্য সম্প্রতি রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জেন এয়ার টেকনোলজিস নামে একটি প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যান। এলপিজি রূপান্তর করার পর বিল পরিশোধ করার সময় ভ্যাট চালানের পরিবর্তে একটি কাঁচা চালান দেয় প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ।
এরপর আবুল কাশেম ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরে অভিযোগ করেন। অভিযোগপত্রে লেখেন, ‘আমি কনভারশন চার্জ বাবদ ৫০ হাজার টাকা দিলে প্রতিষ্ঠানটি আমাকে একটা কাঁচা রসিদ দেয়। আমি ভ্যাট চালান মূসক-৬ দশমিক ৩ চাইলে তারা নানান টালবাহানা করতে থাকে। পরে আমার আরও সন্দেহ হয়, তারা ভ্যাট ফাঁকির সঙ্গে জড়িত। আমি তদন্তপূর্বক আইনি ব্যবস্থা প্রত্যাশা করছি।’
একজন গ্রাহকের অভিযোগের ভিত্তিতে গত বুধবার মোহাম্মদপুরের একটি এলপিজি কনভারশন সেন্টারে অভিযান চালান ভ্যাট গোয়েন্দারা। অভিযানকালে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটির কোনো ভ্যাট নিবন্ধন নেই। গ্রাহকদেরও কোনো ভ্যাটের রসিদ দিচ্ছে না। এলপিজি কনভারশন সেবার ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আছে।
গ্রাহকের এই লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধানে নামে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর। অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটির কোনো ভ্যাট নিবন্ধন নেই। বিপুল পরিমাণ ভ্যাট ফাঁকির তথ্য–প্রমাণ পেয়েছেন তাঁরা। ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে গত বুধবার এ অভিযান চালানো হয়।
একই ঠিকানায় দুটি প্রতিষ্ঠান পাওয়া গেছে। প্রতিষ্ঠান দুটো হলো জেন এয়ার টেকনোলজি ও জেন এয়ার (বিডি) লিমিটেড। ঠিকানা হাউস-০১, রোড-০৪, মেট্রো হাউজিং সোসাইটি, মোহাম্মদপুর, ঢাকা। দুটি প্রতিষ্ঠানের মালিক একজন।
ভ্যাট গোয়েন্দারা দেখতে পান যে প্রতিষ্ঠান দুটির ভ্যাট নিবন্ধন নেই। সংশ্লিষ্ট মোহাম্মদপুর ভ্যাট সার্কেলে যাচাই করে দেখা যায়, ওই সার্কেলে এ প্রতিষ্ঠান দুটির নামে কোনো ভ্যাট রিটার্ন জমা পড়েনি। কাগজপত্র যাচাইয়ে প্রাথমিকভাবে বিপুল পরিমাণ ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পাওয়া গেছে।
গোয়েন্দার দল অনুসন্ধানে দেখতে পায়, ওই প্রতিষ্ঠান দুটির নামে চট্টগ্রামের ঠিকানায় নিবন্ধন রয়েছে। এদের মূসক নম্বর ০০২৫২৬৭২৫-০৫০৫ এবং ০০১৯১৮৬২৭-০৫০৫। তবে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ব্যবসা ওই নিবন্ধনের অন্তর্ভুক্ত নয়। ভ্যাট আইন অনুসারে, একই মালিকানাধীন ভিন্ন ঠিকানায় একই নিবন্ধের আওতায় ইচ্ছুক প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্রীয় নিবন্ধন নিতে হবে। পুরো ভ্যাট ব্যবস্থা হতে হবে অনলাইনভিত্তিক।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটির মোহাম্মদপুরের ঠিকানায় গত চার মাসে প্রায় এক কোটি টাকার বিক্রির প্রমাণপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। সেবার ওপর ১৫% হারে ভ্যাট প্রযোজ্য।