এবার আলুর দাম কেজিতে ৫ টাকা বাড়ল
চালের দাম এখন বাড়তি। গত মাসে ঈদের পরপরই বেড়েছে ডাল, ডিম, ভোজ্যতেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের দাম। প্রতি সপ্তাহেই কাঁচাবাজারে কোনো না কোনো নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। এবার নতুন করে সেই তালিকায় যুক্ত হলো আলু ও তরল দুধ। এ সময় বাজারের সস্তা আলুর দামও তিন দিনের ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে ৫ টাকা। নতুন করে প্যাকেটজাত পাস্তুরিত দুধের দাম বাড়িয়েছে মিল্ক ভিটা। সরকারের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিটেড এ দুধ উৎপাদন ও বাজারজাত করে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল বাজার, নিউমার্কেট কাঁচাবাজার, মোহাম্মদপুর টাউন হল ও কৃষি বাজার ঘুরে গতকাল বৃহস্পতিবার জানা গেছে, ২০ টাকা কেজির সাদা ও লাল আলু এখন অধিকাংশ বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকায়। তবে হাতিরপুল ও মোহাম্মদপুর এলাকার কয়েকটি দোকানে প্রতি কেজি আলুর দাম ৩০ টাকাও রাখা হচ্ছে।
রাজধানীর হাতিরপুল বাজারের আলু ব্যবসায়ী আমির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘পাইকারি বাজারেই আলুর দাম কেজিতে ৫ টাকা বেশি। আমরাও সেই হিসাবে দাম সমন্বয় করে মানভেদে আলুর দাম কেজিপ্রতি ২৫ থেকে ৩০ টাকা নিচ্ছি।’
কারওয়ান বাজারের আলু ব্যবসায়ী কামরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিন দিন হলো পাইকারিতে আলুর দাম বেড়েছে। আগে প্রতি পাল্লা (৫ কেজি) আলু বিক্রি করেছি ৯০ টাকায়। এখন বিক্রি করছি মানভেদে ১১০ থেকে ১১৫ টাকায়।’
এদিকে বাজারে মিল্ক ভিটার সব ধরনের দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের দামও বেড়েছে। প্রতিষ্ঠানটি দুধ, দই, ঘি, মাখন, লাবাংয়ের দাম বাড়িয়েছে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত। মিল্ক ভিটার আগে আড়ং, প্রাণসহ দুধ উৎপাদন ও বাজারজাতকারী অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো মে মাসের মাঝামাঝি পাস্তুরিত দুধের দাম বাড়িয়েছিল। সরকারি তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হওয়ায় শুরুতে দাম বাড়ানো থেকে বিরত ছিল মিল্ক ভিটা কর্তৃপক্ষ। তাই সবাই দাম বাড়ানোর পর তারাও দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
রাজধানীর একাধিক বাজার ঘুরে দেখা যায়, মিল্ক ভিটার প্রতি লিটার প্যাকেটজাত পাস্তুরিত দুধের দাম ৭ টাকা বাড়িয়ে ৮০ টাকা করা হয়েছে। আর আধা লিটার প্যাকেটের দাম ৫ টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৪৫ টাকা। ২০০ গ্রামের মাঠার দাম ২৫ থেকে করা হয়েছে ৩০ টাকা, ২৫০ গ্রাম ওজনের লাবাংয়ের বোতল ৩১ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ টাকা এবং ৫০০ গ্রাম ওজনের লাবাংয়ের দাম ৫৮ থেকে বাড়িয়ে ৬৫ টাকা করা হয়েছে। মিল্ক ভিটার এক কেজি মিষ্টি দই এখন বিক্রি করা হচ্ছে ২১০ টাকায়, গত মঙ্গলবারও এ দাম ছিল ১৯০ টাকা। প্রতিষ্ঠানটি এক কেজির টক দইয়ের দামও ৫ টাকা বাড়িয়ে ১৭৫ টাকা করেছে।
জানতে চাইলে মিল্ক ভিটার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ও সরকারের যুগ্ম সচিব আশরাফ উদ্দীন আহাম্মদ খান বলেন, ‘প্যাকেজিং ও পরিবহন থেকে শুরু করে গোখাদ্য সবকিছুর দাম বেড়েছে। সে জন্য অনেকটা বাধ্য হয়ে ক্ষতি ও ভর্তুকি কমাতে এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। নতুন এই দাম বুধবার থেকে কার্যকর হয়েছে।’
দুধ ও আলুর দাম বাড়লেও আগের সপ্তাহের মতোই রয়েছে তেল, চিনি, পেঁয়াজ, ডাল, আটা, ময়দা, মাছ, মাংস ও সবজির দাম। তবে বাজারভেদে এসব পণ্যের কোনো কোনোটির দামে কিছুটা হেরফের রয়েছে। বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন তেল মিলছে সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম ১৯৮ টাকায়। প্যাকেটজাত প্রতি কেজি চিনি ৯০ টাকায় ও খোলা চিনি ৮০ টাকায় বিক্রি হয়। পেঁয়াজ বাজার ও মানভেদে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, মসুর ডাল ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা, আটা ২ কেজির প্যাকেট ১১৫ টাকা, খোলা ময়দা প্রতি কেজি ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মসলার মধ্যে জিরা, দারুচিনির দাম কেজিতে ২০-৩০ টাকা বেড়েছে। রুই মাছ প্রতি কেজি ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ১৪০-১৫০ টাকা, গরুর মাংস ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হয়।
বাজারে পটোল, ঝিঙে, করলা, ঢ্যাঁড়স, কচুর লতি, টমেটো, পেঁপে, লাউ, কুমড়াসহ বিভিন্ন সবজির দাম আগের সপ্তাহের মতোই রয়েছে। এসব সবজির দাম কেজিপ্রতি ৪০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে।
বাজারের নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর নূরজাহান রোডের বাসিন্দা মাহমুদ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সব ধরনের পণ্যমূল্যই এখন বাড়তি। বাজারে পণ্যের দাম যেভাবে বেড়েছে আমাদের আয়রোজগার সেভাবে বাড়েনি। এ অবস্থায় সরকারের উচিত নিত্যপণ্যের দাম যাতে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যে থাকে, সেটি নিশ্চিত করা। দামের লাগাম টানতে না পারলে মানুষের কষ্ট আরও বাড়বে।’