আলো ছড়ালেন ছয় উদ্যোক্তা

পুরস্কারের জন্য ১ হাজার ৭০টি মনোনয়ন জমা পড়ে। এর মধ্যে নারী উদ্যোক্তা শ্রেণিতে সবচেয়ে বেশি ৪৮৯টি মনোনয়ন জমা পড়ে।

অতিথিদের সঙ্গে এসএমই পুরস্কার ২০২১ পাওয়া বিজয়ীরা। (বসা, বাঁ থেকে) মো. ওলি উল্লাহ, রেহানা আক্তার, ড. খোন্দকার সিদ্দিক-ই-রব্বানী, রাজিয়া সুলতানা, মো. মনির হোসেন ও কামরুন্নাহার খানম। (দাঁড়িয়ে, বাঁ থেকে) মো. জাকের হোসেন, মির্জা নূরুল গণী, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, এম জামাল উদ্দিন, মুহম্মদ গাজী তৌহীদুর রহমান ও মতিউর রহমান। গতকাল বিকেলে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে
ছবি: দীপু মালাকার

টানা দুই দিন বর্ষণের পর খানিকটা শান্ত হয়েছে আবহাওয়া। তবে দিনভর আকাশের মুখ গোমড়া। মেঘের দাপটে দীপ্তি ছড়াতে পারেনি সূর্য। তাতে কী! শেষ বিকেলে ঠিকই ঝলমলে আলো ছড়ালেন ছয়জন সফল ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা। তাঁরা জিতে নিলেন আইডিএলসি-প্রথম আলো এসএমই পুরস্কার ২০২১।

অগ্রহায়ণের শেষ বিকেলে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ‘আমি বাংলার গান গাই’ গানের সঙ্গে ভঙ্গিমা নৃত্য থিয়েটারের সদস্যদের নৃত্য পরিবেশনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। ততক্ষণে আয়োজনস্থল কানায় কানায় পূর্ণ। পুরস্কারপ্রাপ্ত উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি তাঁদের স্বজন, বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আইডিএলসি-প্রথম আলো এসএমই পুরস্কার বিজয়ীরা হলেন স্বাস্থ্যে বাইবিট লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি খোন্দকার সিদ্দিক-ই-রব্বানী, শিক্ষায় ক্রিয়েটিভ আইটি ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা মো. মনির হোসেন, কৃষিতে রাইয়্যান অ্যাগ্রো লিংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রাজিয়া সুলতানা, উৎপাদন শিল্পে জনতা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের স্বত্বাধিকারী মো. ওলি উল্লাহ, নারী উদ্যোক্তায় নবাবী ফুটওয়্যারের এমডি কামরুন্নাহার খানম। এ ছাড়া বিশেষ পুরস্কার পেয়েছেন ক্লে ইমেজের স্বত্বাধিকারী রেহানা আক্তার।

বিজয়ীদের হাতে প্রধান অতিথি হিসেবে পুরস্কার তুলে দেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। আরও উপস্থিত ছিলেন আইডিএলসি ফাইন্যান্সের সিইও ও এমডি এম জামাল উদ্দিন এবং প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর যুব কার্যক্রম ও অনুষ্ঠানপ্রধান মুনির হাসান।

বিজয়ীদের অভিনন্দন জানিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। প্রথমে বিশ্বাস হতো না। কারণ, মার খেতে খেতে আমরা একধরনের হীনম্মন্যতায় ভুগতাম।’ এ সময় সরকারের সফলতা হিসেবে দেশের ঘরে ঘরে বিদ্যুতায়ন, নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, নির্মাণাধীন চট্টগ্রামের কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল, পদ্মা সেতু, মাতারবাড়ীর গভীর সমুদ্রবন্দরের কথা উল্লেখ করেন তিনি।

আইডিএলসির এমডি এম জামাল উদ্দিন বলেন, ‘যেকোনো দেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে এসএমই খাত। উন্নত দেশে জিডিপিতে এসএমই খাতের অবদান থাকে প্রায় ৫০ শতাংশ। তবে আমাদের দেশে সেটি মাত্র ২৫ শতাংশ। এসএমই খাতকে বাইরে রেখে ২০৪১ সালে উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব নয়।’

সায়লা আহমেদের পরিচালনায় ‘আমি বাংলার গান গাই’ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করে ভঙ্গিমা নৃত্য থিয়েটার
প্রথম আলো

১ হাজার ৭০টি মনোনয়ন থেকে ৬ জন বিজয়ী বাছাইয়ে পাঁচ সদস্যের জুরিবোর্ডে ছিলেন জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশের কান্ট্রি ইকোনমিস্ট নাজনীন আহমেদ, জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতি বাংলাদেশের (নাসিব) সভাপতি মির্জা নূরুল গণী, বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক মো. জাকের হোসেন, এসএমই ফাউন্ডেশনের মহাব্যবস্থাপক ফারজানা খান এবং এফ এম প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহম্মদ গাজী তৌহীদুর রহমান।

পুরস্কার বিজয়ী ছয় উদ্যোক্তার উঠে আসার গল্প ভিডিও চিত্র আকারে দেখানো হয়। তার এক ফাঁকে প্রথম আলোর শুরুর গল্প বললেন সম্পাদক মতিউর রহমান, ‘প্রথম আলো শিক্ষার্থী, তরুণ ও উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণে গণিত অলিম্পিয়াড, ফিজিকস অলিম্পিয়াড, রোবটিকস, বিতর্ক প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। আমাদের একটাই উদ্দেশ্য, আমরা বাংলাদেশের জয় দেখতে চাই।’

বিজয়ী উদ্যোক্তাদের কথা

যুক্তরাজ্যে পিএইচডি গবেষণা শেষ করে অধ্যাপক খোন্দকার সিদ্দিক-ই-রব্বানী দেশে ফেরেন মানুষের জীবনমানের উন্নতি ঘটাতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষার্থী ও গবেষকদের নিয়ে উদ্ভাবিত ১৫টির মতো যন্ত্র বাজারজাত করছে তাঁর প্রতিষ্ঠিত বাইবিট লিমিটেড। পুরস্কার পেয়ে বললেন, ‘যেকোনো পুরস্কারই আমাকে অনেক আনন্দ দেয়।’

২০০৮ সালে পঞ্চগড়ের আত্মপ্রত্যয়ী তরুণ মো. মনির হোসেন ঢাকায় গড়ে তোলেন ক্রিয়েটিভ আইটি ইনস্টিটিউট। গত ১৩ বছরের পথচলায় এই ইনস্টিটিউটে তথ্যপ্রযুক্তির নানা খাতে দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্য বদলেছেন ৫০ হাজারের বেশি তরুণ।

২০১৩ সালের শেষ দিকে ৪০০ খাকি ক্যাম্বেল হাঁস দিয়ে শুরু করা রাজিয়া সুলতানার এখন তিন জেলায় ৫০ বিঘাজুড়ে ফুল, সবজির বাগান, গরুর খামার। পাশাপাশি পাঁচ লাখ সদস্যের ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে নতুন উদ্যোক্তাদের বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণ দেন।

১৩ বছর বয়সে বাবার অকালমৃত্যুতে দিশেহারা হয়ে পড়া কিশোর মো. ওলি উল্লাহ বেঁচে থাকার লড়াইয়ে গরু চরানো ও শ্রমিকের কাজ করেছেন। পরে নিজের দক্ষতা বাড়িয়ে এখন তৈরি করেন আমদানি বিকল্প কৃষিযন্ত্র। চুয়াডাঙ্গার জনতা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের স্বত্বাধিকারী ওলি উল্লাহ বলেন, ‘আমি অনেক আনন্দিত।’

নেত্রকোনার নারী উদ্যোক্তা কামরুন্নাহার খানম পাটের জুতার পাশাপাশি ব্যাগ, শোপিস, মেয়েদের গয়না, বিভিন্ন ধরনের কভার, ম্যাট, শতরঞ্জি, পরিধেয় ব্লেজার, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহারযোগ্য পণ্য রপ্তানিও করছেন।

চারুকলা ইনস্টিটিউটের গ্র্যাজুয়েট রেহানা আক্তার তাঁর হাতে তৈরি সিরামিকের টেবিলওয়্যার দৈনন্দিন ব্যবহার্যে পরিণত করেছেন। দেশের বাইরেও রেহানার ক্লে-ইমেজের চাহিদা অনেক।

বিজয়েরমাসে১৯৭১সালেরচিতওস্বাধীনবাংলাবেতারকেন্দ্রথেকেপ্রচারিততিনটিগানপরিবেশনকরেনবিজনমিস্ত্রি, মমতাজলাবনী, শিমুদে, শুক্লাপাল, পূজনদাস, মো. মতিউররহমানওমো. রাসেল।তাঁদেরগানেরসঙ্গেকণ্ঠমেলাতেমেলাতেপর্দানামলআয়োজনের।