সৌন্দর্যসেবাকে দেশজুড়ে ছড়িয়ে দিচ্ছেন আফরোজা
আইডিএলসি-প্রথম আলো এসএমই পুরস্কার-২০২৩-এ নারী উদ্যোক্তা শ্রেণিতে সেরা উদ্যোক্তা হয়েছেন রেড বিউটি স্টুডিও অ্যান্ড সেলুন ও উজ্জ্বলা লিমিটেডের আফরোজা পারভীন। উজ্জ্বলা এখন পর্যন্ত ১১ হাজারের বেশি নারীকে সৌন্দর্যসেবা-বিষয়ক প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী করেছে।
নাগরিক জীবনে সৌন্দর্যচর্চা কিংবা সাজগোজের জন্য বর্তমানে সৌন্দর্যসেবাকেন্দ্র বা বিউটি পারলার বেশ জনপ্রিয়। সারা দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা প্রায় সাড়ে তিন লাখ বিউটি পারলারে বিপুলসংখ্যক নারীর কর্মসংস্থান হয়েছে। এসব বিউটি পারলারের জন্য দক্ষ নারী কর্মী গড়ে তোলায় অবদান রেখেছেন নাটোরের আফরোজা পারভীন।
বিউটি ও গ্রুমিং বিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীন ২০০৯ সালে নিজের প্রথম বিউটি স্যালন রেড বিউটি স্টুডিও অ্যান্ড সেলুন প্রতিষ্ঠা করেন। এর আগে দুই বছর তিনি এককভাবে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করেছেন। ২০১৭ সালে তিনি আদিত্য সোমের সঙ্গে প্রতিষ্ঠা করেন বিউটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র উজ্জ্বলা। এ প্রতিষ্ঠান এখন পর্যন্ত ১১ হাজারের বেশি নারীকে সৌন্দর্যসেবা-বিষয়ক প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী করেছে।
এখানেই থেমে যাননি আফরোজা পারভীন; দেশীয় উপাদানের মাধ্যমে নানা সৌন্দর্যপণ্য তৈরি করতে ‘উজ্জ্বলা কেয়ার’ ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করেছেন। এটির কারখানা গড়ে তুলেছেন নাটোরে। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমেও এসব পণ্যের বাজারজাত করছেন তিনি।
শুরুর গল্প
আফরোজা পারভীনের জন্ম নাটোরে, নানাবাড়িতে। বাবা রফিকউদ্দিন ব্যবসায়ী, মা ফাতেমা বেগম গৃহিণী। দুই ভাই-বোনের মধ্যে বড় আফরোজা ছোটবেলায় ঢাকায় চলে আসেন। বাড্ডা হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক ও তেজগাঁও কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। তারপর তিতুমীর কলেজ থেকে হিসাববিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেন। এরপর মাল্টিমিডিয়ার ওপর ২০০৪ সালে অ্যাডভান্স ডিপ্লোমাও করেন। এরপর ভারতের বেঙ্গালুরুর এমএসি ইনস্টিটিউট থেকে মেকআপের ওপর ডিপ্লোমা করেছেন। ইন্টারন্যাশনাল মেকআপ আর্টিস্ট হিসেবে ২০১৭ সালে থাইল্যান্ডের এসএমএ বিউটি একাডেমি থেকেও গ্র্যাজুয়েশন করেন তিনি।
শৈশব থেকেই নিজের মতো করে কিছু একটা করতে চাইতেন আফরোজা পারভীন। বিয়ে, গায়েহলুদ ও জন্মদিনের মতো আয়োজনে ছোট আকারের কাজ দিয়ে শুরু করেন। ২০০৭-০৮ সালে এককভাবে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করেছেন। গুণগত কাজ ও সেবা দিয়ে দ্রুতই পরিচিতি পেতে শুরু করেন। তবে একটা সময় আফরোজা পারভীন উপলব্ধি করেন, শুধু স্বাধীনভাবে কাজ করে বেশি উন্নতি সম্ভব নয়। গ্রাহকদের চাহিদাও তখন পরিবর্তিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে না পারলে ব্যস্ততার ভিড়ে হারিয়ে যাওয়ার শঙ্কা আছে।
এমন চিন্তাভাবনা থেকেই রেড বিউটি স্টুডিও অ্যান্ড সেলুন প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা শুরু করেন আফরোজা পারভীন। ২০০৯ সালে একটি ভাড়া বাড়িতে প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয়। কিছুদিন পর আফরোজা পারভীনের প্রতিষ্ঠানটি নিয়মিতভাবে বিভিন্ন ধরনের কর্মশালা আয়োজন শুরু করে, যেখানে নারীরা মেকআপ, স্কিন কেয়ার, হেয়ার স্টাইলিং ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। এ উদ্যোগ নারীদের দক্ষতা উন্নয়ন এবং তাঁদের মধ্যে সৃষ্টিশীলতা বিকাশে সহায়তা করে।
নতুন উদ্যোগ
সৌন্দর্যসেবার প্রশিক্ষণকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে আফরোজা পারভীন গড়ে তোলেন উজ্জ্বলা লিমিটেড। তাঁর এ উদ্যোগের সঙ্গে আছেন আদিত্য সোম। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রান্তিক নারীদের পেশাদার ও দক্ষ সৌন্দর্যসেবাকমী৴ হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছে প্রতিষ্ঠানটি।
আফরোজা পারভীন বলেন, উজ্জ্বলা আসলে একটি সামাজিক উদ্যোগ। এটি বিউটি ও গ্রুমিং সেক্টরে শুধু নারী নন, পুরুষদেরও সমানতালে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। রূপচর্চানির্ভর উদ্যোক্তা তৈরিতে সহযোগিতা করছে। উজ্জ্বলা এখন পর্যন্ত ১১ হাজারের বেশি নারীকে বিউটি প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী করেছে বলে জানান আফরোজা পারভীন। তিনি বলেন, ‘আমি নারীর পাশে শক্তি হয়ে দাঁড়াতে চাই। একজন নারীর অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়াটা খুব জরুরি। এখানে শক্ত হয়ে দাঁড়াতে পারলে মানসিক স্বাধীনতাও আসবে।’
শুধু সৌন্দর্য ও রূপচর্চার জন্য কাজ করছেন না আফরোজা পারভীন; একই সঙ্গে দেশীয় উপাদানের মাধ্যমে সৌন্দর্যপণ্য তৈরি করছেন। উজ্জ্বলা কেয়ার ব্র্যান্ডের নামে বাজারজাত হচ্ছে সেসব পণ্য। এর জন্য নাটোরে কারখানা স্থাপন করেছেন আফরোজা। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমেও এসব পণ্যের বাজারজাত করছেন। উজ্জ্বলা কেয়ারের যাত্রা শুরু হয় ২০১৬ সালে। উজ্জ্বলা কেয়ারের মাধ্যমে উজ্জ্বলা কেয়ার অ্যান্টি হেয়ারফল হারবাল হেয়ার অয়েল, স্কিন লাইটেনিং বডি অয়েল, হারবাল শ্যাম্পুসহ বিভিন্ন রুপচর্চার পণ্য তৈরি করা হচ্ছে।
আফরোজা পারভীন বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রকল্প, এসএমই ফাউন্ডেশন, জয়িতা ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে নারীদের রূপচর্চা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। দেশ-বিদেশের উন্নয়ন সংস্থার প্রশিক্ষক হিসেবেও কাজ করছেন।
সম্মাননা
আফরোজা পারভীন অনুপ্রেরণামূলক পরিবর্তনের জন্য এমজিএইচ গ্রুপ এবং কর্মক্ষেত্রে সফল নারী হিসেবে বেসিসের কাছ থেকে সম্মাননা পেয়েছেন।