ইরানের প্রতিশোধের পর আবার বাড়ল তেলের দাম
ইরানের কুদস বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল কাশেম সোলাইমানি মার্কিন ড্রোন হামলায় মারা যাওয়ার পর তেলের দাম বেড়েছিল। এবার মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ইরানের প্রতিশোধমূলক হামলার পর আবারও বাড়ল তেলের দাম। বিবিসি সূত্র এ খবর পাওয়া গেছে।
গতকাল সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় আন্তর্জাতিক বাজারে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম ছিল ব্যারেলপ্রতি ৬৮ ডলার। এর আগে তা ৬৯ ডলারে উঠে যায়। শুধু তেল নয়, এ খবরে সোনা ও জাপানি ইয়েনের মতো নিরাপদ সম্পদের দামও বেড়েছে। এদিকে তেলের দাম বাড়লেও যথারীতি সারা পৃথিবীতেই শেয়ার সূচক পড়েছে। জাপানের মূল সূচক নিক্কি ২২৫ পড়েছে ১ দশমিক ৩ শতাংশ। আর হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচক পড়েছে শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, এ হামলা দেশটির শীর্ষ কমান্ডার কাশেম সোলাইমানি হত্যার প্রতিশোধ।
কাশেম সোলাইমানির জানাজার কিছুক্ষণ পরেই এ হামলা চালানো হয়। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এ ঘটনায় ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বন্দ্ব আরও বাড়তে পারে।
বিবিসির বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, এ ঘটনায় তেলের বাজার বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা ব্যাপক। ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশটির তেল উৎপাদন এমনিতে ব্যাহত হচ্ছে। অন্যদিকে ইউএস এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের তথ্যমতে, ২০১৮ সালে বিশ্বে ব্যবহৃত ২১ শতাংশ তেল হরমুজ প্রণালি দিয়ে পরিবাহিত হয়েছে, যার উত্তর উপকূলে ইরানের অবস্থান। ইরান এই প্রণালি দিয়ে তেল পরিবহনে বাধা দিলে পরিস্থিতি মারাত্মক হতে পারে। পাশাপাশি তেল উৎপাদকদের ডিপোতে ইরান হামলাও করতে পারে। ধারণা করা হয়, গত বছর সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি আরামকোর তেল শোধনাগারে হামলার পেছনে ইরানের হাত রয়েছে।
এই হরমুজ প্রণালি দিয়ে সৌদি আরব, ইরাক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত প্রভৃতি দেশের তেল রপ্তানি হয়। এদের অর্থনীতি পুরোটাই আবার তেল ও গ্যাসনির্ভর। সবচেয়ে বেশি ভয় কাতারের। বিশ্বের বৃহত্তম তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের রপ্তানিকারক এই দেশটি তার প্রায় পুরো এলএনজি রপ্তানি করে এই পথে।
তবে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের নিজস্ব পাইপলাইন রয়েছে। এটি দিয়ে তারা অল্প পরিমাণ তেল বাইপাস করতে পারে তা ঠিক, কিন্তু হরমুজ প্রণালি দিয়ে যত তেল পরিবাহিত হয়, সেই পরিমাণ তেল এই পাইপলাইন দিয়ে পরিবহন করার সক্ষমতা তাদের নেই।
এর আগে মধ্যপ্রাচ্য যখন ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ হয়েছে, তখনই তেলের দাম বেড়েছে এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির গতি শ্লথ হয়েছে। ১৯৭০ ও ১৯৮০-এর দশকে এমনটা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে তেলের বাজার বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা আছে। তবে তখনকার পরিস্থিতির সঙ্গে এখনকার পার্থক্যটা হলো, যুক্তরাষ্ট্রে নতুন গড়ে ওঠা শেল শিল্প। বাজারে ঘাটতি দেখা দিলে বা দাম কমে গেলে এই শিল্প এখন দ্রুতই হস্তক্ষেপ করার সামর্থ্য রাখে।
বিশ্লেষকেরা বলেন, তেলের দাম বাড়লে সৌদি আরব ও রাশিয়ার পোয়াবারো। কিন্তু সমস্যাটা হলো সরবরাহ যদি কমে যায়, তাহলে বাড়তি দাম দিয়ে কাজ হবে না।
ইরাকের ঘাঁটিতে এই হামলার পর মার্কিন বেসামরিক বিমান কর্তৃপক্ষ ইরাক, ইরান ও পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর ওপর দিয়ে বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। নিষেধাজ্ঞার আওতায় ওমান উপসাগর এবং ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যবর্তী জলপথ।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) বলেছে, মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক সংঘাত ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব বেড়ে যাওয়ার কারণে তারা এ নির্দেশনা দিয়েছে।
এ নির্দেশনার আগে এফএএ ইরাকের আকাশে মার্কিন বিমান ২৬ হাজার ফুটের নিচে উড্ডয়ন নিষেধ করেছে। এ ছাড়া গত বছর ইরান এক মার্কিন ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করায় ওমান উপসাগরে ইরানের আকাশসীমা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
পাশাপাশি সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসও তাদের সব বিমানকে ইরানের আকাশসীমা পরিহারের নির্দেশনা দিয়েছে। এতে এয়ারলাইনসগুলোর ব্যবসাও ব্যাহত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।