২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

আবার ক্ষতিতে বিয়েকেন্দ্রিক ব্যবসা

অমিক্রনের কারণে নতুন বিধিনিষেধ জারি হওয়ায় কনভেনশন হল ও কমিউনিটি সেন্টার, বিউটি পারলার এবং ফুলের ব্যবসা আবার মন্দার মুখে পড়েছে।

করোনাভাইরাসের নতুন ভেরিয়েন্ট বা ধরন অমিক্রন দ্রুত সংক্রমণ আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। এটাকে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা করোনার তৃতীয় ঢেউ বলে আখ্যায়িত করেছেন। এ রকম কঠিন পরিস্থিতিতে আবারও ক্ষতির শঙ্কায় পড়েছেন বিয়েকেন্দ্রিক বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীরা।

এক সপ্তাহে দেশে (১৭-২৩ জানুয়ারি) করোনা সংক্রমণে নতুন রোগী বেড়েছে ৬৭ হাজার ৪২৫ জন, আর মারা গেছেন ৭৯ জন। এই সপ্তাহে আগের সপ্তাহের তুলনায় নতুন রোগী বেড়েছে ১৮০ শতাংশের বেশি, মৃত্যু বেড়েছে প্রায় ৮৮ শতাংশ। সংক্রমণ দ্রুত ছড়ানোর পরিস্থিতিতে সরকার বিধিনিষেধ জারি করায় কনভেনশন হল ও কমিউনিটি সেন্টারগুলোতে এখন বিয়ে, জন্মদিনসহ অন্যান্য অনুষ্ঠানের নতুন বুকিং নেওয়া বন্ধ। পুরোনো বুকিংও বাতিল হচ্ছে। বিয়ের সাজসজ্জা ও উপকরণের দোকানগুলো ধুঁকছে। সেই সঙ্গে বিউটি পারলারগুলোতেও এখন কনে সাজানোর কাজ নেই। ফুলের ব্যবসাও রয়েছে মন্দার মুখে। তাদের সবার কপালেই এখন চিন্তার ভাঁজ।

গত রোববার রাজধানীর কয়েকটি এলাকা ঘুরে বিভিন্ন কনভেনশন হল ও কমিউনিটি সেন্টার, বিউটি পারলার ও ফুলের দোকানে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে। এসব প্রতিষ্ঠান জানায়, করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ কমার পর তিন-চার মাস ধরে ব্যবসায় গতি ফিরছিল। কিন্তু করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে, অর্থাৎ অমিক্রনের কারণে তা থেমে গেছে। এতে বিয়েকেন্দ্রিক ব্যবসা আবার ক্ষতির শঙ্কায় পড়েছে।

মিরপুরের বিলাস ভবন কমিউনিটি সেন্টারে আগে যেখানে প্রতি মাসে ১২টির বেশি বিয়ের অনুষ্ঠান হতো, সেখানে তা কমে এখন পাঁচ-ছয়ে নেমে গেছে। অন্য অনুষ্ঠানও তেমন হচ্ছে না। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী মো. মোতালিব হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনার ধাক্কা কাটিয়ে কিছুটা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিলাম। কিন্তু নতুন বিধিনিষেধের ফলে অনুষ্ঠানের সংখ্যা আবারও কমছে। সাধারণত অন্তত এক মাস আগেই অনুষ্ঠানের বুকিং দেওয়া হয়। সেই হিসাবে জানুয়ারি মাসে মোটামুটি অনুষ্ঠানের বুকিং দেওয়া ছিল। কিন্তু ফেব্রুয়ারি মাসের জন্য এখন কোনো সাড়াই (বুকিং) পাচ্ছি না।’

অন্য অনেক খাতের ব্যবসায়ীরা প্রণোদনা পেলেও আমরা পাইনি। ব্যাংকগুলোও আমাদের লোন দিচ্ছে না। সরকারি প্রণোদনা ঋণ পেলে আমরা সংকট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারব।
—জাকির হোসেন, সভাপতি, বিসিসিএ।

মিরপুর ১ এলাকার সিটি মহল কনভেনশন সেন্টার ২০১৩ সাল থেকে মুনাফা করে আসছিল। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি করোনায় বড় ধাক্কা খায়। বিধিনিষেধ শেষে কয়েক মাস মোটামুটি চললেও দুই সপ্তাহ ধরে আবার বুকিং কমে গেছে। কনভেনশন সেন্টারটির ব্যবস্থাপক বরুণ দাস বলেন, ‘আগে যেখানে আড়াই শ-তিন শজনের অনুষ্ঠান হতো, সেখানে ইদানীং ৫০-৬০ জন নিয়েই বিয়ের অনুষ্ঠান হচ্ছে। বুকিংয়ের সংখ্যাও অনেক কমেছে। সব মিলিয়ে আবার লোকসানের দিকে যাচ্ছি বলে মনে হচ্ছে।’

করোনার নতুন ধরনের সংক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন রূপচর্চা ও সাজগোজের ব্যবসায় নিয়োজিত উদ্যোক্তারা। ধানমন্ডির ফারজানা শাকিলস মেকওভার সেলুনের স্বত্বাধিকারী ফারজানা শাকিল প্রথম আলোকে বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে প্রথম বিধিনিষেধ শুরুর পর গ্রাহক অনেক কমেছিল। এরপর পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে এলেও আগের মতো গ্রাহক পাওয়া যায়নি। এরই মধ্যে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন অমিক্রনের সংক্রমণ শুরু হয়েছে। পরিস্থিতি খারাপ হলে গ্রাহক আবারও কমে যেতে পারে। তবে গত দুই বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিয়মিত গ্রাহকসেবা দিতে পারবেন বলে আশাবাদী ফারজানা।

মিরপুরের রূপনগর এলাকার লেডিস অপশন বিউটি পারলারের ব্যবস্থাপক আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আমার এখানে বিয়ের চেয়ে ছোটখাটো সাজগোজের কাজই বেশি হয়। কিন্তু লকডাউনের পর আগের মতো গ্রাহক আসেনি। এখন নতুন করে সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছে, তাতে কী হবে বলতে পারছি না।’

লালমাটিয়াভিত্তিক নারী উদ্যোক্তা নাইমা আহমেদ জানান, তাঁর বিউটি পারলার হিমুস মেকওভারে করোনার আগের তুলনায় ৫০ শতাংশ কাজও আসছে না। এখন যে কাজ পাওয়া যাচ্ছে, তাতে দোকানভাড়া ও বিউটিশিয়ানদের বেতনও উঠছে না। মাঝখানে বিয়ের মৌসুমে কিছু কাজ পেয়েছিলেন। কিন্তু সেটাও এখন কমছে।

কাজ কম পাওয়ার কারণ সম্পর্কে নাইমা বলেন, ‘লালমাটিয়া ও ধানমন্ডি এলাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরাই আমাদের মূল গ্রাহক। করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হওয়ায় গ্রাহক কমে গেছে। স্বাভাবিকভাবেই আমাদের আয়ও কম হচ্ছে।’

নতুন সংক্রমণের চিন্তায় পড়েছেন ফুল ব্যবসায়ীরাও। ধানমন্ডিতে ৪০ বছর ধরে সড়কের পাশে ফুল বিক্রি করছেন উজ্জ্বল হোসেন ও রফিক মিয়া। তাঁরা জানান, আগে দিনে গড়ে ছয় হাজার টাকার বেশি ফুল বিক্রি হতো। এখন দৈনিক বিক্রি হয় দেড় থেকে দুই হাজার টাকা।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ের ফুল ব্যবসায়ী মো. রাব্বি জানান, গত দুই মাসে বিক্রি ভালো হয়েছে। কিন্তু বিয়েগুলো পিছিয়ে যাওয়ায় গত এক সপ্তাহে তাঁর তিনটি অর্ডার বাতিল হয়ে গেছে।

এদিকে বিয়েকেন্দ্রিক বাণিজ্যে নিয়োজিত ব্যবসায়ীরা করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকারের কাছে সহায়তা চেয়েছেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ কমিউনিটি সেন্টার, কনভেনশন হল অ্যান্ড ক্যাটারিং অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিসিএ) সভাপতি জাকির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘অন্য অনেক খাতের ব্যবসায়ীরা প্রণোদনা পেলেও আমরা পাইনি। ব্যাংকগুলোও আমাদের লোন দিচ্ছে না। সরকারি প্রণোদনা ঋণ পেলে আমরা সংকট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারব।’