রোজার আগেই চোখ রাঙাচ্ছে বেগুন, লেবু, শসার দাম
রাজধানীর মালিবাগ বাজারে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সবজি কিনছিলেন আমিনুল ইসলাম। বেসরকারি এই চাকরিজীবী আধা কেজি করলা কিনলেন ৬০ টাকা দিয়ে। এরই মধ্যে শজনের দাম করছিলেন। বিক্রেতা শজনে কোনোভাবেই প্রতি কেজি ১৫০ টাকার নিচে দিতে রাজি নন। শেষমেশ আমিনুল ২৫০ গ্রাম শজনে ৩৫ টাকায় কিনলেন।
সবজি বিক্রেতার সঙ্গে এই দর-কষাকষির সময় আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এক কেজি সবজিও কিনতে পারিনি, এতেই প্রায় ১০০ টাকা শেষ হয়ে গেল। বাজারের যে পরিস্থিতি, তাতে পাঁচজনের সংসারে দুই বেলার খাবার যদি শুধু সবজি ও ডাল দিয়ে খেতে চাই, তাহলেও অন্তত ১৫০ টাকা খরচ করতে হবে।’
মালিবাগের সবজি বিক্রেতা ইসরাফিল হোসেন জানান, এখন শীতের সবজির শেষ সময়। আবার গরমের সব সবজিও বাজারে এসে পারেনি, এতে সবজির দাম চড়া।
কৃষকের উৎপাদন খরচ বেড়েছে, পরিবহন খরচ বেশি, এর মধ্যে মৌসুমি সবজি আসছে কম। তাতে বাজার একটু চড়েছে। রোজার প্রথম দিকেও বাজার এমনই থাকবে। তবে শেষ দিকে দাম কমে আসবে। পচনশীল পণ্য হওয়ায় সবজির বাজারে বড় ধরনের কারসাজির সুযোগ কম।মো. ইমরান মাস্টার, বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি
রোজা আসার বেশ আগেই এবার মাছ-মাংসের বাজার চড়েছে। ডিমের দাম একটু কমে এলেও শীতের সবজির সরবরাহ কমতে থাকায় সবজির বাজারও বাড়তি। নিত্যপণ্যের বাজার বেশ কয়েক মাস ধরে উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল হয়ে আছে। ফলে সাধারণ মানুষের জন্য বাজার নিয়ে স্বস্তির কোনো খবর নেই। এর মধ্যে রোজার পণ্য ছোলা ও খেজুরের দামও গত বছরের চেয়ে এবার বেশি।
রাজধানীর মালিবাগ, মহাখালী ও মগবাজারের সবজি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গতকাল কথা বলে জানা গেছে, মান ভেদে প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৯০ টাকায়, যা গত সপ্তাহ থেকে ১০ টাকা বেশি। বরবটি, পটোল, ঢ্যাঁড়স, ঝিঙে ও ধুন্দুলের দাম প্রতি কেজি ৭০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে। করলার দাম পড়ছে কেজিতে ১০০ থেকে ১২০ টাকা। কাঁচা মরিচের দাম প্রতি কেজি ১১০ থেকে ১২০ টাকা। প্রতিটি ফুলকপি ও বাঁধাকপির দাম রাখা হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। লাউ প্রতিটির দাম পড়ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে।
সবজির মধ্যে শিমের দাম কিছুটা কম, গতকাল প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। টমেটোর দাম বাড়তির দিকে, প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা। গাজর ও শসার দাম কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। দাম চড়েছে লেবুর। মান ভেদে লেবুর দাম হাঁকা হচ্ছে প্রতি হালি ৫০ থেকে ৮০ টাকা।
বিক্রেতারা জানান, রমজানে সালাদের জন্য ব্যবহৃত টমেটো, শসা, গাজর, লেবু ও কাঁচামরিচের দাম আরও কিছুটা বাড়তে পারে।
সবজির দাম একটু বেশি উল্লেখ করে বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি মো. ইমরান মাস্টার প্রথম আলোকে বলেন, কৃষকের উৎপাদন খরচ বেড়েছে, পরিবহন খরচ বেশি, এর মধ্যে মৌসুমি সবজি আসছে কম। তাতে বাজার একটু চড়েছে। রোজার প্রথম দিকেও বাজার এমনই থাকবে। তবে শেষ দিকে দাম কমে আসবে। পচনশীল পণ্য হওয়ায় সবজির বাজারে বড় ধরনের কারসাজির সুযোগ কম।
এদিকে বাজারে মাছ-মাংসের দাম বেড়েই চলেছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম পড়ছে ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা। সোনালি মুরগি ৩৪০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংসের কেজি এখন ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা। খাসির মাংসের দাম পড়ছে ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা। কম দামের মাছ হিসেবে পরিচিত চাষের পাঙাশ ও তেলাপিয়ার দাম প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। রুই মাছের দাম এখন ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকার মধ্যে। ফার্মের মুরগির ডিমের ডজন কিছুটা কমে এখন ১২৫ থেকে ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল যেসব পণ্য
বাজারে চাল, ডাল, চিনি ও সয়াবিন তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম উচ্চমূল্যে এসে থেমে আছে। গতকাল বাজারে মোটা চাল খুচরায় বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। মাঝারি মানের চালের দাম পড়ছে প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৬২ টাকা। আর সরু চাল মিনিকেট ও নাজিরশাইল কিনতে হচ্ছে ৭০ থেকে ৮৫ টাকার মধ্যে। মান ভেদে মোটা, মাঝারি ও সরু ডালের দাম প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১৪০ টাকার মধ্যে। খোলা চিনি প্রতি কেজি ১১৫ থেকে ১২০ টাকা, বাজারে প্যাকেটজাত চিনি নেই বললেই চলে। বোতলজাত সয়াবিনের দাম প্রতি কেজি ১৯০ টাকার মধ্যে।
মালিবাগ বাজারের রোজ জেনারেল স্টোরের বিক্রেতা আবদুল জলিল জানান, প্রতিবছর এ সময় রোজার বাজার শুরু হয়ে যায়। কিন্তু এ বছর তেমন কোনো চিত্র দেখা যাচ্ছে না। কারণ, সব পণ্যের দাম বেশি। মানুষ কিনছেন কম।