শেয়ারবাজারে গতি ফিরতেই লোকসানি কোম্পানির দাপট শুরু

শেয়ারবাজারপ্রতীকী ছবি

দেশের শেয়ারবাজারে গত কয়েক দিনে কিছুটা গতি ফিরতে না ফিরতেই শুরু হয়েছে দুর্বল ও লোকসানি কোম্পানির শেয়ারের দাপট। দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) আজ সোমবার মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষ পাঁচ কোম্পানির সব কটিই ছিল লোকসানি কোম্পানি। এসব কোম্পানির শেয়ারের দাম সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বেড়েছে। কোম্পানিগুলো হলো খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ, গোল্ডেনসন, গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালস, মিরাকেল ইন্ডাস্ট্রিজ ও একমি পেস্টিসাইডস।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, উল্লেখিত কোম্পানিগুলোর মধ্যে টানা চার কার্যদিবসে খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগের শেয়ারের দাম ৪৬ শতাংশ, গোল্ডেনসনের দাম ১৬ শতাংশ, গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালসের দাম ৮ শতাংশ, মিরাকেল ইন্ডাস্ট্রিজের দাম ২১ শতাংশ ও একমি পেস্টিসাইডসের দাম ২২ শতাংশ বেড়েছে।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, লোকসানি এসব কোম্পানির শেয়ার নিয়ে একটি চক্র দীর্ঘ দিন ধরেই কারসাজির সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। তাই বাজারে কিছুটা গতি আসার সঙ্গে সঙ্গে কারসাজিকারকেরাও এসব শেয়ার নিয়ে কারসাজিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। ফলে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম। কারসাজির মাধ্যমে লোকসানি এসব কোম্পানির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির ঘটনা ভালো বিনিয়োগকারীদের হতাশ করছে। এ কারণে বিনিয়োগে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন অনেকে। ফলে বাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও হাজার হাজার বিনিয়োগকারী বাজার ছাড়ছেন।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, ২ জুলাই খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগের শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ৯৬ টাকা। এরপর চার কার্যদিবসের প্রতিদিন সর্বোচ্চ মূল্যবৃদ্ধির ফলে গতকাল দিন শেষে এটির শেয়ারের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪০ টাকায়। তাতে চার কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ৪৪ টাকা বা ৪৬ শতাংশ বেড়েছে। কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, নামকাওয়াস্তে এটির কারখানা সচল রয়েছে। বছরের পর বছর এটি বড় অঙ্কের লোকসান দিচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেওয়ারও সক্ষমতা নেই কোম্পানিটির। গত বছরের জুনে সমাপ্ত অর্থবছর শেষে বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি কোম্পানিটি। সর্বশেষ গত জানুয়ারি–মার্চ প্রান্তিকে এটি শেয়ারপ্রতি ২ পয়সা লোকসান করেছে। তা সত্ত্বেও শেয়ারবাজার কারসাজিকারী একটি গোষ্ঠী বাজারে এটির শেয়ার নিয়ে কারসাজিতে লিপ্ত রয়েছে।

নামপ্রকাশ না করার শর্তে উল্লিখিত কোম্পানির শীর্ষস্থানীয় একাধিক কর্মকর্তা জানান, খান ব্রাদার্সের শেয়ার নিয়ে কারসাজিতে যুক্ত গোষ্ঠীটি কোম্পানিটির মালিকদের সঙ্গে একাধিক দফায় যোগাযোগ করে। এ সময় খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ কর্তৃপক্ষকে কোম্পানিটির ব্যবসা সম্প্রসারণ ও ভালো লভ্যাংশ ঘোষণার প্রস্তাব দেয় কারসাজিকারীরা; কিন্তু কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ব্যবসা সম্প্রসারণ ও ভালো লভ্যাংশ দেওয়ার মতো আর্থিক সক্ষমতা তাদের নেই। একপর্যায়ে মালিকপক্ষ কারসাজিকারীদের হাতে কোম্পানির মালিকানা হস্তান্তরেরও প্রস্তাব দেয়; কিন্তু তাতে রাজি হয়নি কারসাজিকারীরা। এরপর কারসাজির মাধ্যমে শেয়ারের দাম বাড়িয়ে কারসাজিকারীরা মুনাফা তুলে নেওয়ার চেষ্টায় রয়েছেন। যার অংশ হিসেবে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে এটির শেয়ারের দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্রে জানা যায়।

একইভাবে লোকসানি কোম্পানি গোল্ডেনসন, মিরাকেল ইন্ডাস্ট্রিজ ও গোল্ডেন হেলি কেমিক্যালসের শেয়ার নিয়েও কারসাজিতে যুক্ত রয়েছেন ভিন্ন ভিন্ন কারসাজি গোষ্ঠী। এর মধ্যে কোনো কোনোটির কারসাজির সঙ্গে কোম্পানির মালিকপক্ষও পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছে বলে জানান বাজারসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, গত চার কার্যদিবসে গোল্ডেন সন ও গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালসের শেয়ারের দাম তিন টাকা করে, মিরাকেল ইন্ডাস্ট্রিজের দাম ছয় টাকা ও একমি পেস্টিসাইডসের শেয়ারের দাম ৩ টাকা ৩০ পয়সা বেড়েছে। লোকসানি এসব কোম্পানির শেয়ারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি হলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

নামপ্রকাশ না করার শর্তে শীর্ষস্থানীয় একটি ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ নির্বাহী প্রথম আলোকে বলেন, লোকসানি এসব কোম্পানির শেয়ারের কারসাজির কারণে বাজার বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিশ্চুপ ভূমিকা ও পরোক্ষ সহায়তায় কিছু কারসাজিকারী হাতে গোনা কিছু শেয়ার নিয়ে কারসাজির ঘটনা ঘটাচ্ছেন। ফলে বাজার হয়ে পড়েছে এসব কারসাজির শেয়ারনির্ভর।