বিজ্ঞপ্তি ছাড়া গোপনে টিসিবির পরিবেশক নিয়োগের অভিযোগ
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ডিলার বা পরিবেশক নিয়োগে আবারও নতুন করে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। যদিও এই অভিযোগ নতুন নয়। যখনই যে বাণিজ্যমন্ত্রী দায়িত্বে ছিলেন, তখনই টিসিবিতে নতুন করে পরিবেশক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এবার অভিযোগ উঠেছে অনেকটা গোপনে আবেদন গ্রহণ এবং হঠাৎ করে তা বন্ধ করে দেওয়ার।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের তদবিরে নিয়োগ হয়েছিল অনেক পরিবেশকের। তাঁদের মধ্যে যাঁদের কাগজপত্রের ঘাটতি রয়েছে, তাঁদের বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে টিসিবি। তার বিপরীতে নতুন করে পরিবেশক নিয়োগেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে নতুন নিয়োগের ক্ষেত্রেও অস্বচ্ছতার অভিযোগ উঠেছে।
পরিবেশক হওয়ার জন্য আগ্রহী ব্যক্তিরা বলছেন, আওয়ামী লীগ আমলে বিএনপি-জামায়াত সমর্থকদের অনেকেই মামলা-হামলার ভয়ে পালিয়ে ছিলেন। গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তাঁরা স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরেছেন। তাঁদের অনেকেই এখন পরিবেশক হওয়ার জন্য আবেদন করতে আগ্রহী হলেও সেটি করতে পারছেন না। কারণ, গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ছাড়াই সংস্থাটি নতুন আবেদন গ্রহণ করেছে।
নীলফামারী জেলার ডোমার পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর আক্তারুজ্জামান সুমন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আমলের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের সুপারিশে শুধু পরিবেশক নিয়োগ ও পরিবার কার্ড দেওয়া হয়েছে। এগুলো বাদ দিয়ে নতুন করে কাজটি করতে হবে। এখন নতুন করে পরিবেশক নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি না দিয়েই। আমাদের দাবি, নতুন করে পরিবেশক নিয়োগের আবেদন নেওয়া হোক, পরিবার কার্ডও করা হোক প্রকৃত গরিবদের জন্য।’
সারা দেশে টিসিবির পরিবেশক রয়েছেন ৮ হাজার ২৭৩ জন। দেশে টিসিবির ১৪টি আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে তাঁদের তত্ত্বাবধান করা হয়। তবে এসব পরিবেশকের অনেকেই এখন আর কাজ করছেন না। যদিও টিসিবি বলছে, কাজ না করা পরিবেশকের সংখ্যা খুবই কম।
নতুন পরিবেশক নিয়োগে অস্বচ্ছতার বিষয়ে টিসিবির যুগ্ম পরিচালক ও মুখপাত্র হুমায়ুন কবির প্রথম আলোকে বলেন, পরিবেশক নিয়োগের প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে পত্রিকায় সাধারণত বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় না। ওয়েবসাইটেই এ–সংক্রান্ত তথ্য দেওয়া থাকে। খাদ্য অধিদপ্তরের পরিবেশক নিয়োগের ক্ষেত্রেও তা–ই হয়। প্রশ্ন যেহেতু উঠেছে, তাই পরিবেশক নিয়োগের বিষয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়ার বিষয়টি ভবিষ্যতে চিন্তা করা হবে।
টিসিবির পরিবেশকদের কাছ থেকে পরিবার কার্ডধারী ব্যক্তিরা প্রতি মাসে ১০০ টাকা দরে ২ লিটার ভোজ্য তেল, ৬০ টাকা দরে ২ কেজি মসুর ডাল এবং ৩০ টাকা দরে ৫ কেজি চাল কিনতে পারেন। পরিবেশকেরা প্রতি কেজিতে কমিশন পান ৫ টাকা। এই কমিশনের মধ্য থেকে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট বাবদ কেটে নেওয়া হয় কেজিতে ৪৮ পয়সা।
পরিবেশকদের মাধ্যমে টিসিবির পণ্য বিক্রির জন্য সরকারের পক্ষ থেকে এক কোটি পরিবার কার্ড করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত ৫৭ লাখ কার্ড করা হয়েছে জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) সঙ্গে মিলিয়ে। তাঁদের স্মার্ট কার্ড দেওয়া হয়েছে। বাকি ৪৩ লাখ কার্ডও দেওয়া হবে বলে টিসিবির কর্মকর্তারা বলছেন।
বাংলাদেশ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফরিদ উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, টিসিবির নতুন পরিবেশক নিয়োগের দরকার আছে। তিন হাজারের মতো নতুন আবেদনও জমা পড়েছে, যেগুলো যাচাই-বাছাই চলছে। কোনো কোনো এলাকায় পরিবেশক কম, কিন্তু পরিবার কার্ডের সংখ্যা বেশি। আবার কোনো কোনো এলাকায় রয়েছে উল্টো চিত্র, অর্থাৎ পরিবেশকের তুলনায় কার্ডধারী মানুষের সংখ্যা কম। ফরিদ উদ্দিন আহমেদ জানান, নতুন করে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে পরিবেশক নিয়োগের বিষয়টি একান্তই টিসিবির চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্ত।
টিসিবির কর্মকর্তারা বলেন, নতুন করে পরিবার কার্ড দেওয়ার কাজটি করতে কিছুটা সময় লাগছে। কারণ, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, এক জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে একাধিক পরিবার কার্ড রয়েছে। আবার এক পরিবারে রয়েছে একাধিক ব্যক্তির নামে কার্ড। এ ছাড়া মুঠোফোন নম্বরের মিল না থাকা এবং নতুন ও পুরোনো আইডি দিয়ে আলাদা কার্ড তৈরির মতো ঘটনাও রয়েছে। এসব সমস্যার সমাধান করে নতুন কার্ড দিতে কিছুটা সময় লাগছে।
টিসিবি জানায়, ঢাকা আঞ্চলিক কার্যালয়ের অধীনে ১ হাজার ৭১৮ জন, চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ে ২৮৭, বগুড়ায় ৭৭৯, খুলনায় ৫১৫, রংপুরে ৬৩১, বরিশালে ৫০০, রাজশাহীতে ৩৮৩, দিনাজপুরে ২২৩, মৌলভীবাজারে ৪২৭, ময়মনসিংহে ৮১৭, কুমিল্লায় ৪৬৭, মাদারীপুরে ৪৬৭, ঝিনাইদহে ৪৬৩ এবং গাজীপুরে ৪৬১ জন টিসিবির পরিবেশক রয়েছেন।