কেনার আগে–পরে যা খেয়াল করবেন
বাসায় ফ্রিজ থাকা মানে বিদ্যুৎ খরচের বাড়তি চিন্তা। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কারণে ফ্রিজ ব্যবহার নিয়ে দুশ্চিন্তা আরও বেড়েছে মানুষের। তাই কোম্পানিগুলোও এখন বিষয়টি মাথায় রেখে বিদ্যুৎসাশ্রয়ী ফ্রিজ তৈরিতে অধিক মনোযোগী। তাই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎসাশ্রয়ী ফ্রিজের চাহিদা ও বিক্রি উভয়ই বাড়ছে।
ফ্রিজ তৈরির সঙ্গে যুক্ত কোম্পানিগুলোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইনভার্টারযুক্ত ফ্রিজ বা রেফ্রিজারেটর ব্যবহার করলে তাতে ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা সম্ভব। এ ছাড়া বেশিক্ষণ ফ্রিজ খুলে না রাখলে তাতেও বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়। পাশাপাশি কমপ্রেসরের ওপর চাপ কমে। ফ্রিজ যখন নিজেকে ঠান্ডা করবে, তখন বিদ্যুৎ খরচ বেশি হয়। আবার যাঁরা ইনভার্টার ছাড়া পুরোনো ফ্রিজ বা রেফ্রিজারেটর ব্যবহার করেন, সে ক্ষেত্রে নিয়মিতভাবে কনডেনসার কয়েল পরিষ্কার করলে তাতেও বিদ্যুৎ খরচ কমতে পারে।
এ ছাড়া ডিপ ফ্রিজে অতিরিক্ত বরফ জমলে সেটাও নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। তাঁরা বলছেন, ফ্রস্ট ফ্রিজে বরফ জমা স্বাভাবিক। কোনো কারণে অতিরিক্ত বরফ তৈরি হলে তা পরিষ্কার করতে হবে। অনেক সময় থার্মোস্টেট সঠিক তাপমাত্রায় না থাকলে অতিরিক্ত বরফ জমে। আবার নিয়মিতভাবে বেশি বরফ জমতে থাকলে সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নেওয়া উচিত। বর্তমানে ফ্রিজ বা রেফ্রিজারেটর কোম্পানিগুলো বিভিন্ন মেয়াদে সার্ভিসিং সুবিধা দিয়ে থাকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফ্রিজে কী ধরনের ও কী পরিমাণ খাবার সংরক্ষণ করা হয়, তার ওপর নির্ভর করে তাপমাত্রা ঠিক করতে হবে। ফ্রিজ ও রেফ্রিজারেটর বাজারজাতকারী দেশীয় এক কোম্পানির গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ফ্রিজের ‘নরমাল’ অংশের তাপমাত্রা প্রয়োজন বুঝে ১ থেকে ৫ ডিগ্রির মধ্যে রাখা ভালো। তবে গড়পড়তা তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকায় ভালো। ডিপের ক্ষেত্রে মাইনাস ১৮ থেকে মাইনাস ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রাখা যেতে পারে। তবে মাইনাস ১৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে তাপমাত্রা রাখা গেলে তাতে জিনিসপত্র ভালো থাকে।
অনেক সময় দেখা যায়, ফ্রিজ থেকে দুর্গন্ধ ছড়ায়। সে ক্ষেত্রে ফ্রিজ পরিষ্কার করতে হবে। ফ্রিজ পরিষ্কারের ভালো পন্থা হচ্ছে বিদ্যুৎ-সংযোগ বন্ধ করে সব খাবার বের করার পর কুসুম গরম পানিতে ডিটারজেন্ট মিশিয়ে ফ্রিজ পরিষ্কার করে ফেলা। মাঝেমধ্যে পানিতে সামান্য বেকিং সোডা মিশিয়ে তারপর সেখানে কাপড় ভিজিয়ে নিয়ে ফ্রিজের ভেতরটা মুছে ফেললে দুর্গন্ধ কমে। এ ছাড়া বাজারে ফ্রিজের জন্য আলাদা সুগন্ধিও পাওয়া যায়, সেটাও ব্যবহার করা যেতে পারে।
বেশির ভাগ ঘরেই দেখা যায় ফ্রিজের সঙ্গে স্ট্যাবিলাইজার ব্যবহার করা হয়। কেন এই স্ট্যাবিলাইজারের ব্যবহার, তা নিয়েও অনেকের মনে প্রশ্ন রয়েছে। সাধারণত স্ট্যাবিলাইজার ব্যবহার করা হয় বিদ্যুতের ভোল্টেজ ওঠানামা থেকে ফ্রিজ বা রেফ্রিজারেটরকে সুরক্ষা দিতে। তবে এখনকার বেশির ভাগ আধুনিক ফ্রিজেই বিল্ট–ইন প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়। ফলে এসব ফ্রিজে আলাদা করে স্ট্যাবিলাইজার ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না।
অনেক সময় দেখা যায়, ফ্রিজ থেকে পানি পড়ছে। এটি হয় মূলত বৈদ্যুতিক বিভ্রাট বা কারিগরি কোনো ত্রুটির কারণে। অনেক সময় ফ্রিজ সমতল স্থানে যথাযথভাবে না রাখলেও পানি পড়তে পারে। ফ্রিজের নিচে বরফ জমে সেখান থেকে এ পানি পড়ে। যদি বৈদ্যুতিক বিভ্রাট ও অন্য কোনো কারণে ফ্রিজ থেকে বেশি পানি পড়ে, তবে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নেওয়া ভালো।
সাধারণভাবে ফ্রিজ বা রেফ্রিজারেটর কেনার আগে কিছু বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি। ফ্রিজ কেনার আগে সবচেয়ে যে বিষয়টি জানা জরুরি, তা হলো আপনার পরিবারের প্রয়োজন অনুযায়ী কত লিটারের ধারণক্ষমতার ফ্রিজ কিনবেন। সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর জেনে নিন আপনি যে ফ্রিজ বা রেফ্রিজারেটর কিনতে চাইছেন, সেটিতে ইনভার্টার আছে কি না, বিক্রয়-পরবর্তী সেবার মেয়াদ ইত্যাদি। যে ব্র্যান্ডের ফ্রিজ কিনছেন, সেটির সার্ভিস সেন্টার কোথায় কোথায় আছে বা আপনার এলাকায় আছে কি না, সেই খোঁজ নেওয়া জরুরি। এ ছাড়া বিল্ট–ইন স্ট্যাবিলাইজার, ডোর অ্যালার্ম ও ডিওডোরাইজিং ফিল্টারের মতো সুবিধা থাকে অনেক ফ্রিজে, কেনার সময় এ বিষয়গুলো সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিন।
ফ্রস্ট, নন–ফ্রস্ট ও ডি-ফ্রস্ট ধরনের ফ্রিজ পাওয়া যায় বাজারে। অনেকের মনে এ নিয়ে প্রশ্ন, কোনটির কী কাজ। সাধারণত ফ্রস্ট ফ্রিজ দ্রুত ঠান্ডা হয়। এ ধরনের ফ্রিজে বরফ জমে বলে দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ না থাকলেও খাবার সতেজ রাখতে তা সহায়তা করে। আর ডি-ফ্রস্ট ফ্রিজে হালকা বরফ তৈরি হয়। নন-ফ্রস্ট ফ্রিজে সাধারণত কোনো বরফ জমে না। তাই খাবার সতেজ রাখতে নন–ফ্রস্ট ফ্রিজের কম্প্রেসর সব সময় চালু রাখা ভালো। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে বা যেখানে বিদ্যুৎ-বিভ্রাট বেশি হয়, সেখানে ফ্রস্ট ফ্রিজ ব্যবহার করাই ভালো। আর ব্যস্ত নগরজীবনে সময় বাঁচাতে নন-ফ্রস্ট ফ্রিজ ব্যবহার করা হয় বেশি।
ফ্রিজ ও রেফ্রিজারেটর
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফ্রিজে কী পরিমাণ খাবার সংরক্ষণ করা হয়, তার ওপর নির্ভর করে তাপমাত্রা ঠিক করতে হবে।