এফআইসিসিআইর মধ্যাহ্নভোজসভা
বিদেশি বিনিয়োগ আনতে নীতি সংস্কার লাগবে
দুর্নীতি কমাতে ডিজিটালাইজেশনে জোর দিতে হবে। তা ছাড়া বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তির পদ্ধতি কী হবে, সেটিও গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করতে হবে।
সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আনতে নীতি সংস্কার করতে হবে। এফডিআই আনার ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের মূলমন্ত্র হচ্ছে—সস্তা শ্রম ও অভ্যন্তরীণ সুরক্ষা। যদিও এই মূলমন্ত্র দিয়ে সামনের দিনে এগোনো যাবে না। ব্যবসায় সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে অদক্ষতা ও কম উৎপাদনশীলতার মতো বিষয়গুলো কাটিয়ে শক্ত প্রতিযোগিতা সক্ষমতা অর্জন এবং ঝুঁকি কমানোর মাধ্যমে এগোতে হবে। এ জন্য বিদ্যমান আইনের সংস্কার করা লাগবে। করব্যবস্থারও সংস্কার করতে হবে।
ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফআইসিসিআই) আয়োজিত মাসিক মধ্যাহ্নভোজসভায় ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদ ও আন্তর্জাতিক ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা এসব কথা বলেন। তাঁরা বলেন, দুর্নীতি কমাতে ডিজিটালাইজেশনে জোর দিতে হবে। তা ছাড়া বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তির পদ্ধতি কী হবে, সেটিও গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করতে হবে।
আজ সোমবার রাজধানীর গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলে অনুষ্ঠিত এই ভোজসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া। এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বাংলাদেশে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিন্টিং। সভায় এফআইসিসিআইয়ের সভাপতি জাভেদ আখতার স্বাগত বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন এফআইসিসিআইয়ের পরিচালক মো. মাহবুবুর রহমান।
আমরা যেসব দেশে কাজ করি, সেসব দেশে দুর্নীতির সমস্যা রয়েছে। নীতি সহজ করা হলে দুর্নীতি কমে আসে। আবার ডিজিটালাইজেশন করা হলে সুশাসনের মাধ্যমেও দুর্নীতি দূর হয়।এডিমন গিন্টিং, কান্ট্রি ডিরেক্টর, এডিবি।
মূল প্রবন্ধে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিন্টিং বলেন, বাংলাদেশের বেশ কিছু আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য আছে, যা এফডিআইয়ের জন্য সম্ভাবনাময় গন্তব্য হতে পারে। বৈশিষ্ট্যগুলো হচ্ছে, বড় বাজার, বড় উদীয়মান বাজার অর্থনীতির কাছাকাছি কৌশলগত অবস্থান, সামুদ্রিক প্রবেশাধিকার ইত্যাদি। ২০২২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে এফডিআই ছিল দক্ষিণ ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার সমকক্ষ অর্থনীতির তুলনায় কম বা জিডিপির ৫ শতাংশের নিচে। অথচ ভিয়েতনামে জিডিপির ৫২ শতাংশ, মিয়ানমারে ৬৮ শতাংশ এবং কম্বোডিয়ায় ১৫৪ শতাংশ এফডিআই এসেছে।
দুর্নীতি বিদেশি বিনিয়োগ আনার ক্ষেত্রে বড় বাধা কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে এডিমন গিন্টিং বলেন, ‘আমরা যেসব দেশে কাজ করি, সেসব দেশে দুর্নীতির সমস্যা রয়েছে। নীতি সহজ করা হলে দুর্নীতি কমে আসে। আবার ডিজিটালাইজেশন করা হলে সুশাসনের মাধ্যমেও দুর্নীতি দূর হয়।’
জাপানের যেসব কোম্পানি বাংলাদেশে ব্যবসা করছে, তাদের মধ্যে সাড়ে ৪৫ শতাংশই ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে চায় বলে জানিয়েছেন জাপান–বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (জেবিসিসিআই) সভাপতি মিউং-হো লি। তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীদের সহায়তা দেওয়ার জন্য মেগা প্রকল্প নির্মাণ করছে সরকার। জাপানের নতুন বিনিয়োগকারীরা কোনো দেশে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে ঋণমানের ওপর নজর রাখে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ঋণমান কিছুটা কমেছে। এ ছাড়া স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হলে বাংলাদেশ বাণিজ্য-সুবিধা হারাবে। এ জন্য জাপানের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করার বিষয়ে জোর দেন তিনি।
জেবিসিসিআইয়ের সভাপতি আরও বলেন, নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তির পদ্ধতি জাপানের বিনিয়োগকারীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে ব্যবসারত জাপানি কোম্পানিগুলো মুনাফা নিজেদের দেশে নিতে পারছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কিছুটা জটিলতা রয়েছে। তবে তাঁর প্রত্যাশা, শিগগিরই পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান মাশরুর রিয়াজ বলেন, বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ঘটছে। বাংলাদেশের সেই সুযোগ নেওয়ার ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। নতুন বিদেশি বিনিয়োগ আনতে নতুন কৌশল ও নীতি লাগবে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে বেশি মুনাফা পাওয়া যায়। তবে উচ্চ ঝুঁকিও আছে। কারণ, নীতি বাস্তবায়নকারী সংস্থার জটিলতা ও অনিশ্চয়তায় ভুগতে হয় বিনিয়োগকারীদের।
এ ছাড়া বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে কোম্পানি, আরবিট্রেশন, বিদেশি বেসরকারি বিনিয়োগ ও ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টিসহ বিভিন্ন আইন সংস্কারের পরামর্শ দেন মাশরুর রিয়াজ। তিনি বলেন, আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়া সহজ করা প্রয়োজন। তা ছাড়া করব্যবস্থায় সংস্কারের উদ্যোগ লাগবে।
বিডা বিনিয়োগকারীদের অধিকাংশ সেবা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দেয় বলে জানান সংস্থাটির নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া। তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি সম্ভাবনাময় গন্তব্য। এটি বিশ্বের নবম শীর্ষ ভোক্তা বাজার, যা কিনা বিনিয়োগকারীদের জন্য খুবই ইতিবাচক। নীতি সংস্কারের বিষয়ে তিনি বলেন, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। সরকার গত এক বছরে একটি লজিস্টিক নীতিমালার খসড়া প্রণয়ন করেছে। শিগগিরই এটি মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের জন্য উঠবে বলে জানান তিনি।