সন্তানদের মালিকানা নয়, জানালেন স্যামসাংয়ের উত্তরাধিকারী
কোম্পানির উত্তরাধিকারী নিয়ে কেলেঙ্কারির ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং গ্রুপের উত্তরাধিকারী জে ওয়াই লি। এমনকি তাঁর সন্তানদের কাছে স্যামসাংয়ের নেতৃত্ব হস্তান্তর করবেন না, এমন প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তিনি।
গত বুধবার আকস্মিকভাবে এ ঘোষণা দেন জে ওয়াই লি। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। টানা তিন প্রজন্ম ধরে স্যামসাংয়ের নেতৃত্বে আছেন লি–রা। স্যামসাং প্রতিষ্ঠা করেন জে ওয়াই লির দাদা। এখন দায়িত্বে আছেন লি।
কোম্পানির সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে লি অতীতে করা ভুল স্বীকার করেন এবং প্রতিশ্রুতি দেন যে ভবিষ্যতে তিনি সব ধরনের আইন লঙ্ঘন এড়াবেন। এ দিন তাঁর প্রতিশ্রুতি থেকেই বোঝা গিয়েছে যে তাঁর দাদার প্রতিষ্ঠিত কোরিয়ার বৃহত্তম এই গ্রুপের নেতৃত্ব সরাসরি চতুর্থ প্রজন্মের কাছে চলে যাবে না।
৫১ বছর বয়সী স্যামসাংয়ের এই ভবিষ্যৎ প্রধান বলেন, ‘আমরা আমাদের শীর্ষ-শ্রেণির প্রযুক্তি এবং পণ্যের জন্য স্বীকৃত, তবে স্যামসাংয়ের সর্বজনীন দৃষ্টিভঙ্গি এখনো সমালোচিত। যার মূল কারণ আমাদের ভুলত্রুটি। আর এই ভুলের দায় আমার। আমি এ জন্য আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাইছি।’
লি বলেন, ‘আমি আজ এখানে আমার কথা দিচ্ছি যে এখন থেকে উত্তরাধিকার নিয়ে আর কোনো বিতর্ক হবে না। কোনো আইনের লঙ্ঘন হবে না। আইনি সাফল্য বা নীতিগত নিন্দার কোনো কিছুতে কোনো ঝোঁক থাকবে না। আমার একমাত্র লক্ষ্য নিবদ্ধ থাকবে স্যামসাংয়ের করপোরেট মূল্য বাড়ানোর দিকে।’
লির বক্তব্য তাঁর আগের বক্তব্যের চেয়ে পুরোপুরি আলাদা ছিল। এর আগে তিনি ও তাঁর কোম্পানি বারবারই বলে এসেছেন, তাঁদের কোনো ভুল হয়নি। তবে এবার একেবারের ভিন্ন সুরে কথা বলেছেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে চলমান বিতর্কিত অঞ্চল ইউনিয়নের বিরুদ্ধে স্যামসাংয়ের অবস্থানের জন্যও লি ক্ষমা চেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘স্যামসাংয়ে শ্রম–সংস্কৃতি সময়ের সঙ্গে ধাপে অগ্রসর হয়নি। এখন থেকে আমি নিশ্চিত করব যে “ইউনিয়ন–মুক্ত” ব্যবস্থাপনার জন্য স্যামসাং যেন সমালোচিত না হয়।’
২০১৭ সাল থেকেই স্যামসাং ইলেকট্রনিকসের ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ওয়াই লির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। তাঁর বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ, তিনি সরকারি কিছু সুবিধার বিনিময়ে দেশটির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট পার্ক গিউন হের ঘনিষ্ঠ বন্ধু চৌ সুন-সিলের অলাভজনক কোম্পানিকে ৩ কোটি ৬৩ লাখ ডলার ঘুষ দিয়েছেন। ওই কেলেঙ্কারির কারণে পার্লামেন্টে পার্ককে অভিশংসনের পক্ষে ভোট পড়ে। পরে ওই বছর দুর্নীতির দায়ে লি গ্রেপ্তার হন। ঘুষ প্রদান ও তহবিল তছরুপের দায়ে লিকে ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন কোরিয়ার একটি নিম্ন আদালত। পরে ছাড়া পান তিনি।
ঘুষ গ্রহণ, অর্থ আত্মসাৎ, মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে লির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন করা হয়। তদন্তের অংশ হিসেবে ২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি লিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে আপিল বিভাগে সাজা কমিয়ে তাঁকে আড়াই বছরের স্থগিত সাজা দেওয়া হয়। এ সময় তিনি একই ধরনের কোনো অপরাধ করলে তাঁকে আবার চার বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে বলে সতর্ক করা হয়।