রিজার্ভের অর্থ ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা কম

>

• রিজার্ভ চুরি বিশ্বে অন্যতম বৃহৎ ব্যাংক জালিয়াতি
• চুরি হওয়া অর্থের বড় অংশ গেছে ফিলিপাইনে
• অর্থ ফেরাতে নিউইয়র্কে মামলা করেছে বাংলাদেশ
• অর্থ উদ্ধারে মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক সহায়তা করছে
• অর্থ উদ্ধার করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি হওয়া অর্থ ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা কম বলে ওয়াশিংটন পোস্ট-এর এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, অভিযোগ আছে, উত্তর কোরিয়ার হ্যাকাররা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার হ্যাক করেছে। কিন্তু ফেডারেল রিজার্ভ ও বাংলাদেশ ব্যাংক সরাসরি উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এই টাকা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা কম।

এদিকে চুরি যাওয়া অর্থ ফিলিপাইন থেকে ফিরিয়ে আনতে গত বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কের আদালতে মামলা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই অর্থ উদ্ধারে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ বাংলাদেশ ব্যাংককে সহায়তা করছে।

২০১৬ সালে চুরি হওয়া অর্থের বড় অংশই গেছে ফিলিপাইনে। দেশটির রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) মাধ্যমে এই অর্থ দেশটির কয়েকটি ক্যাসিনোতে ঢুকে যায়। যার সিংহভাগ অর্থের হদিসই মিলছে না এখন। এ অবস্থায় অর্থ উদ্ধারে ফেডারেল রিজার্ভ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে পারস্পরিক সহায়তা চুক্তি হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ হ্যাকিংয়ের এই ঘটনা বিশ্বে অন্যতম বৃহৎ ব্যাংক জালিয়াতির ঘটনা হিসেবে বহুল আলোচিত। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক এক আইনজীবী ওয়াশিংটন পোস্ট-এর প্রতিবেদক জোসেফ মার্কসকে বলেছেন, সাইবার অপরাধের ভুক্তভোগীদের জন্য অর্থ উদ্ধার করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ওয়াশিংটন পোস্ট-এর প্রতিবেদনে সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিসের একটি প্রতিবেদনের কথা তুলে ধরে বলা হয়, সাইবার অপরাধের মাধ্যমে বছরে ৬০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতি হচ্ছে, যা ভুক্তভোগীদের জন্য বিপর্যয়কর। কিন্তু আন্তর্জাতিক হ্যাকিংয়ের ক্ষেত্রে চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধার করা খুব কঠিন বা অনেক সময় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। অপরাধীদের কখনো কখনো চিহ্নিত করা গেলেও তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নাগালের বাইরে থেকে যায়। ফলে সাইবার অপরাধের ভুক্তভোগীদের অন্যত্র ক্ষতিপূরণ খুঁজতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই হ্যাকিংয়ের ক্ষেত্রে যেখানে মার্কিন বিচার বিভাগ ও সাইবার নিরাপত্তা কোম্পানি জনসমক্ষে বলছে, উত্তর কোরিয়ার সরকার-সমর্থিত হ্যাকাররা এই কাণ্ড ঘটিয়েছে, সেখানেও পরিস্থিতি তেমনটাই দাঁড়াচ্ছে।

মার্কিন সাইবার নিরাপত্তাবিষয়ক আইনজীবী মার্কাস ক্রিশ্চিয়ান ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন, ‘আপনি যদি প্রকৃত অর্থে হ্যাক হয়ে যাওয়া অর্থ উদ্ধার করতে চান, তাহলে আপনাকে প্রচুর অর্থের মালিক এমন একজন মানুষ খুঁজে বের করতে হবে। ওই মানুষ অর্থের পেছনে ছুটতে গিয়ে দেখবে, আরও অনেকে এই দোষে দোষী।’ মার্কাস ক্রিশ্চিয়ান আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক পিয়ংইয়ংয়ের কাছ থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের মতো ছোট অঙ্কের অর্থও সম্ভবত উদ্ধার করতে পারবে না। কারণ তাদের হাতে যেমন এই পরিমাণ অর্থ থাকে না, তেমনি তারা আন্তর্জাতিক আইনের আওতারও বাইরে; যাকে বলে বৈশ্বিক সমাজচ্যুত।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ অর্থ উদ্ধারে যে মামলা করেছে, তা কিছুটা ভিন্ন এ কারণে যে বাংলাদেশের অভিযোগ, এই হ্যাকিংয়ের ঘটনায় আরসিবিসির যোগসাজশ ছিল। এই মামলার ভাষ্যমতে, ফেডে আরসিবিসির যে হিসাব আছে, ব্যাংক কর্তৃপক্ষ হ্যাকারদের সেই হিসাবে চুরির অর্থ স্থানান্তরে সহযোগিতা করেছে। এরপর সেই অর্থ ফিলিপাইনে নিয়ে আসার সময়ও সহায়তা করেছে আরসিবিসি।

আরও পড়ুন: