মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি
মালয়েশিয়ায় কার্যকর হয়েছে আরসিইপি
চুক্তি পুরোপুরি কার্যকর হলে বাংলাদেশ ভিয়েতনামের সঙ্গে তীব্র প্রতিযোগিতায় পড়বে।
বাংলাদেশ এখনো কারও সঙ্গে এফটিএ করতে পারেনি।
বিশ্বের বৃহত্তম মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি-দ্য রিজিওনাল কমপ্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ (আরসিইপি) মালয়েশিয়ায় কার্যকর হয়েছে। শুক্রবার মালয়েশিয়ার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে, আসিয়ানের সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে মালয়েশিয়া এই চুক্তি থেকে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে। লাভবান হবে এই অর্থে যে তাদের রপ্তানি সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পাবে।
চীনা সংবাদমাধ্যম সিনহুয়ার এক খবরে বলা হয়, মালয়েশিয়ার রপ্তানি ২০ কোটি ডলার বৃদ্ধি পেতে পারে। এতে কোভিড-১৯-এর কারণে
মালয় অর্থনীতিতে যে ছেদ ঘটেছে, এ চুক্তি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে তারা সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠবে বলে আশা করছে।
চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত হলে শুল্ক কমাতে হবে এবং তাতে স্থানীয় উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হবে—এই আশঙ্কায় ভারত নিজেকে প্রত্যাহার করে নেয়।
মালয়েশিয়ার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, এই চুক্তির কারণে কেবল তাদের রপ্তানি আয়ই বৃদ্ধি পাবে তা নয়; বরং এ অঞ্চলের সরবরাহব্যবস্থার উন্নতি হবে। এ ছাড়া বিদ্যমান নেটওয়ার্কের উন্নতি তো হবেই এবং বৈশ্বিক-ব্যবস্থার সঙ্গে আরও নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যবসা-বাণিজ্যেরও উন্নতি হবে।
রিজিওনাল কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ (আরসিইপি) বা ‘আঞ্চলিক সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারি’ শীর্ষক এই বাণিজ্যচুক্তির ভৌগোলিক ও অর্থনৈতিক পরিসর চমকে দেওয়ার মতোই, বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ জনসংখ্যা ও ২৯ শতাংশ জিডিপি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো-কানাডা বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের চেয়েও এটি বড়। ফলে এটি হবে বিশ্বের বৃহত্তম মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল। ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে এই চুক্তি সই হয়।
অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথ ইস্ট এশিয়ান নেশনস বা আসিয়ানের ১০টি দেশ, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড এই চুক্তিতে সই করছে। প্রাথমিকভাবে ভারতও এই চুক্তির আলোচনা প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিল। কিন্তু চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত হলে শুল্ক কমাতে হবে এবং তাতে স্থানীয় উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হবে-এই আশঙ্কায় ভারত একপর্যায়ে চুক্তির আলোচনা থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেয়। তবে তারা চাইলে ভবিষ্যতে যেকোনো সময় এই চুক্তিতে যোগ দিতে পারে।
মূলত চীনের উদ্যোগে এই মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সই হয়েছে। সে জন্য পশ্চিমা দেশগুলো মনে করছে, এটা চীনের ভূরাজনৈতিক উচ্চাভিলাষের হাতিয়ার; এর মাধ্যমে চীন প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রভাব বিস্তার করতে চায়।
বাংলাদেশের ওপর প্রভাব
বাংলাদেশ এই চুক্তিতে নেই। তবে আরসিইপিভুক্ত দেশগুলোতে বাংলাদেশ যেসব পণ্য রপ্তানি করে, তার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্লেষকেরা মনে করেন, বাংলাদেশের এ মুহূর্তে খুব চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই। অস্ট্রেলিয়া, চীন, জাপান, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ডসহ বেশ কয়েকটি আরসিইপিভুক্ত দেশে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) হিসেবে বিভিন্ন ধরনের অগ্রাধিকারভিত্তিক সুবিধা পেয়ে থাকে।
এ ছাড়া কম্বোডিয়া, লাওস ও মিয়ানমারের মতো তিনটি স্বল্পোন্নত দেশ এই চুক্তির সদস্য। এর মধ্যে লাওস ও মিয়ানমার উভয় দেশই বাংলাদেশের সঙ্গে ২০১৮ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বের হয়ে যাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে। তারা ২০২৪ সালে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। বাস্তবতা হলো, নতুন এই বাণিজ্য চুক্তির অংশীদার হওয়ার মাধ্যমে স্বল্পোন্নত এই দেশগুলো এলডিসি উত্তরণের পরও অগ্রাধিকারমূলক বাজারসুবিধা ভোগ করবে, বাংলাদেশ যা পাবে না।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের কারণ হচ্ছে, ভিয়েতনামের বাজারের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা। ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত-কোটামুক্ত প্রবেশাধিকারের সুযোগ পাচ্ছে, কিন্তু উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটলে এই সুযোগ আর থাকবে না। অথচ ভিয়েতনাম ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
এ বিষয়ে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, আরসিইপিতে বাংলাদেশের যোগ দেওয়ার সুযোগ কম। তবে বাংলাদেশ এর সহযোগী সদস্য দেশ হতে পারে, তাতে আমরা মতামত দিতে পারব। সদস্য হওয়ার উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।
অন্যদিকে আরসিইপির সদস্য দেশ চীন ও ভিয়েতনামের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের চেষ্টা করতে হবে বলে মত দেন গোলাম মোয়াজ্জেম। আরসিইপির নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হতে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করতে হবে। তবে আমাদের পণ্য সম্ভার কম, তাই এফটিএ বা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি হয়তো হবে না, পিটিএ বা অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি হতে পারে।
বিশ্লেষকেরা বলেন, এ ধরনের বহুপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি থেকে সুবিধা পেতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। এর মধ্যে বাংলাদেশ উদ্যোগ নিতে পারে।