ডব্লিউটিও সম্মেলন
বাংলাদেশ বাড়তি সুবিধা চায় ৬ থেকে ৯ বছর
৩০ নভেম্বর সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভায় চার দিনব্যাপী ডব্লিউটিও মন্ত্রিপর্যায়ের সম্মেলন।
স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হওয়ার পরও যেন আগের মতোই আরও কয়েক বছর উন্নত দেশগুলো থেকে বাণিজ্যসুবিধা পাওয়া যায়, সেই উদ্দেশ্য নিয়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মন্ত্রিপর্যায়ের সম্মেলনে যোগ দিচ্ছে বাংলাদেশ। ৩০ নভেম্বর সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভায় চার দিনব্যাপী এই সম্মেলন শুরু হচ্ছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ডব্লিউটিওর এই সম্মেলনে বাংলাদেশের চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল যোগ দেবে, যেটির নেতৃত্ব দেবেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। প্রতিনিধিদলে থাকছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ, ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি।
এবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে ডব্লিউটিওর মন্ত্রিপর্যায়ের দ্বাদশ সম্মেলন, সংক্ষেপে যা ‘এমসি-১২’ নামে পরিচিত। ৩০ নভেম্বর উদ্বোধনের পরের দুই দিন হবে প্লেনারি অধিবেশন। ৩ ডিসেম্বর সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেবেন ডব্লিউটিওর প্রথম নারী মহাপরিচালক এনগোজি ওকোনজা ইওয়েলা।
সম্মেলন উপলক্ষে বাংলাদেশ কী প্রস্তুতি নিয়েছে এবং সম্মেলন থেকে বাংলাদেশ কী আশা করছে—এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সোমবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রস্তুতির কাজ শেষ হতে আরও দুই থেকে তিন দিন লাগবে। তবে ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে বের হওয়ার পর আরও ৬ থেকে ৯ বছর যাতে বাণিজ্যসুবিধা পাওয়া যায়, তা নিয়ে আমরা সোচ্চার থাকব। শুধু বাংলাদেশ নয়, যে দেশগুলো উন্নয়নশীল দেশ হতে যাচ্ছে, সবার জন্যই কথা বলব আমরা।’
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাণিজ্যসুবিধা ছাড়াও ডব্লিউটিওর সংস্কার, কৃষি ভর্তুকি, ই-কমার্স, বিনিয়োগ এবং সেবা খাতে এলডিসির জন্য অগ্রাধিকার নিয়ে অনুষ্ঠেয় বিভিন্ন আলোচনায় নিজস্ব অবস্থান তুলে ধরবে বাংলাদেশ। বর্তমানে এলডিসির সমন্বয়ক হচ্ছে আফ্রিকার দেশ চাদ। তবে এলডিসি থেকে বের হওয়ার পর নতুন উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য সুবিধা আদায়ের বিষয়ে নেতৃত্ব দেবে বাংলাদেশ।
ডব্লিউটিওর বিধি অনুযায়ী এলডিসি থেকে বের হওয়ার পর কোনো দেশেরই সাধারণত অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্যসুবিধা পাওয়ার কথা নয়। কোনো দেশ উন্নয়নশীল দেশ হয়ে গেলে এত দিন ধরে এলডিসিভুক্ত দেশ হিসেবে পাওয়া সব বাণিজ্যসুবিধা হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। এতে ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা থাকে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশসহ সব এলডিসির স্বার্থ সুরক্ষায় আমরা বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখব। কোভিড-১৯-এর কারণে এবারের সম্মেলনে শারীরিক উপস্থিতি বেশি চায়নি ডব্লিউটিও। বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলকে চারজনে সীমিত রাখতে বলেছে, আমরা সেটাই করেছি।’
করোনা মাথায় নিয়ে ৪৭টি এলডিসি যখন নিজেদের অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে সমস্যার মুখে, সে রকম পরিস্থিতিতে গত বছরের ডিসেম্বরে নতুন আশার আলো জ্বালায় চাদ। এলডিসি থেকে উত্তরণ-পরবর্তী ১২ বছর একই বাণিজ্যসুবিধা অব্যাহত রাখতে ডব্লিউটিওতে প্রস্তাব দেয় দেশটি। তবে বাংলাদেশসহ সব এলডিসিই এই সুবিধা এখন ৬ থেকে ৯ বছর চাচ্ছে। এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশ হয়ে গেলে বাড়তি শুল্কের চাপে পড়বে বাংলাদেশ। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়েরই এক প্রাথমিক হিসাবে, এতে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ৫৩৭ কোটি ডলারের মতো কমতে পারে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ডব্লিউটিওর দোহা ও বালি বৈঠকে কিছু ভালো সিদ্ধান্ত হলেও তার বাস্তবায়ন হয়নি। এখন দরকার হচ্ছে, যারা নতুন উন্নয়নশীল দেশ হতে যাচ্ছে, তাদের জন্য কিছু করা যায় কি না, সেই চেষ্টা করা। দেশগুলোর জন্য ঋণ মওকুফের সুবিধাও আসতে পারে। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র অনেক কিছুতে রাজি হচ্ছে না।